নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহকে যেমন দেখেছি (১)
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্যদূতঃ আমিরুল ইত্তেহাদ ফুরফুরার পীর আবদুল কাহহার সিদ্দিকী আল কুরাইশী (রহঃ)
بِسۡمِ ٱللهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِِ ◯
বিশ্ব ইসলাম মিশন কুরআনী-সূন্নী জমিয়তুল মুসলিমিন হিযবুল্লাহর وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّـهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ “তোমরা আল্লাহর রজ্জু (রশিকে) শক্তভাবে (দৃঢ়ভাবে) আঁকড়ে ধরো এবং পরষ্পর পৃথক(বিচ্ছিন্ন) হয়ো না” সূরা আলে ইমরানের ১০৩ নং-আয়াত খচিত ইসলামী ঐক্যের পতাকা নিয়ে ইসলামী উম্মাহর ঐক্যদূত সিদ্দিকে আকবার রঃ এর সুযোগ্য ওয়ারিশ, প্যান ইসলামিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা জামাল উদ্দিন আফগানী রহঃ এর উত্তরসূরী আমিরুল ইত্তেহাদ, নায়েবে মুজাদ্দিদ মাওলানা আবুল আনসার মুহাম্মাদ আবদুল ক্বাহহার সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহ দেশ-বিদেশে ওয়াজ-নসিহত, মুখপত্র নেদায়ে ইসলামসহ সিদ্দিকীয়া কুতুবখানা থেকে কুরআন-হাদিস রিসার্চ করে প্রকাশিত জ্ঞানগর্ভ মূল্যবান কিতাবাদি প্রকাশ করে আমৃত্যু পর্যন্ত ইত্তেহাদের বিশ্ব ভিখারি, কাঙ্গাল হয়ে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠায় যে নিরলস রিয়াজাত-মেহনত করে গেছেন- তা স্মরণকালের ইসলামের ইতিহাসে অনন্য-অসাধারণ।
নায়েবে মুজাদ্দেদ
সামাজিক ঐক্যেরও প্রাণপুরুষ
আলহামদুলিল্লাহ,
যুগশ্রেষ্ট মাওয়াহিদ, নায়েবে মুজাদ্দেদ
রহিমাহুল্লাহ সামাজিক ঐক্যেরও প্রাণপুরুষ ছিলেন। বিশ্ব ইসলাম মিশন জমিয়তুল
মুসলিমীন হিযবুল্লাহর ব্যানারে গুনাহগার, খাতাকার নির্বিশেষে সকলকে ‘ভাই’ হিসাবে সম্বোধন করে
সামাজিক ঐক্যেরওসামাজিক ঐক্যেরও আমরণ প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন ।
নাইন ইলেভেনের অনেক আগেকার কথা। পীর সাহেব দীনী সফররত অবস্থায় একবার চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ চত্বরে ওয়াজ মাহফিলের পরদিন বন্দর কাষ্টম হাউজ জামে মসজিদ চত্বরে বসা অবস্থায় আমাদেরকে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দেই সুনির্দিষ্ট নাম ধরে বলেছিলেন যে, তিনি অমুক অমুক নেতা সাহেবদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দুআ করেছেন। পূর্ব থেকে সংগত কারণে দু নেতার প্রতি আমাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকায় হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করি যা লক্ষ্য করে পীর সাহেবও খুশী হলেন তা-ই নয় অধিকন্ত্ত পীর সাহেবের অতি মহব্বতের ফানা ফিশশায়খ উপস্থিত মুহাম্মাদ ইলিয়াস ভাইয়ের সাথে আমাকেও বিশেষ শর্তে বিশেষ বায়াত করে জানান যে, ‘সামনে গভীর অন্ধকার দূর্যোগ’-ব্যস এতটুকুন জানান দিয়ে পীর সাহেব পরবর্তী বাদ মাগরিবের মাহফিলের প্রস্ত্ততিতে ফিরে গেলেন।
এরপর দূর্যোগের ঘনঘটা পর্যায়ক্রমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রিক ছাড়িয়ে নাইন ইলেভেনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পর্যন্ত গড়ায়। এখনও পর্যন্ত দেশের অন্ধকার-দূর্যোগের ঘনঘটা অনেকটা রয়ে গেছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুসলিম উম্মাহর ধর্মীয় ফেরকা যেমন মৌলিক নয় অর্থাৎ ফরয ওয়াজিব কেন্দ্রিক নয়, তেমনি বাংলাদেশে বিদ্যমান সিয়াসতি (পলিটিক্যাল) ফেরকাও মৌলিক নয়, বরং অনেকটা ব্যক্তিগত ধারণা বিশ্বাসগত। অআমরা
সুতরাং,
বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যমান সংকটের শান্তিপূর্ণ উত্তরণের জন্য নায়েবে মুজাদ্দিদের
মত উদারনৈতিক ব্যক্তিত্ব জরুরী। মুঘল বাদশাহ বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখা মাত্রই
অপরূপ সবুজ শ্যামল দৃশ্য দেখামাত্র বলে উঠেছিলেনঃ এতো জান্নাত! বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ শান্তি
রক্ষী বাহিনী শীর্ষে রয়েছে। পীর সাহেব সেদিন যাঁর জন্য দুআ করেছিলেন তন্মধ্যে একজন
১৯৭৩ সালে জুলিও কুরী শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে কুটনৈতিক কারণে ওআইসি
সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে যে অচলাবস্থায় বাংলাদেশ পতিত হয়েছিল তা উত্তরণে ইত্তেফাক,
ইত্তেহাদী মিশন নিয়ে তৎকালীন মিশরের
প্রেসিডেন্ট আনওয়ার সাদাত এবং আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ারি বুমেদীন ঢাকা এসে আপোষ-মীমাংসা
করায় বাংলাদেশের শুধু ওআইসির সদস্য হওয়ার সুযোগ হয়নি কেবল, অধিকন্ত্ত স্ট্রং
পিলার হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, আপোষ-আলোচনায় কিনা হয়। বাংলাদেশ ইনশাঅআল্লাহ ফিরে যেতে পারে আবার মুঘল আমলীয়
নৈসর্গিক প্রশান্তির ধারায়।
উল্লেখ্য, পীর
সাহেবের ছোট ভাই, ভারত থেকে আগত ফুরফুরা দরবারের বিশিষ্ট মুফতি হযরতুল আল্লাম
মাওলানা আবু ইবরাহীম ওবায়দুল্লাহ সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুমুল্লাহ সেদিন পাকশি
মাহফিলে আক্ষেপ করে বলেছিলেনঃ বাংলাদেশে সব রয়েছে, শুধু ঐক্য
নেই।
সুতরাং, দেশ ও জাতির
কঠিন এই ক্রান্তি লগ্নে তাই জরুরী যুগশ্রেষ্ট ঐক্যদূত হযরত মাওলানা আবুল আনসার
মুহাম্মাদ আবদুল কাহহার সিদ্দিকী অআল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহর মত মহান ব্যক্তিত্বের-
যিনি আত্মজীবনে ধারণ করে অআছেন শান্তির বিশেষ বার্তাঃ “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বিদ্বেষ নয়”, যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে অনুস্মৃত, জাতীয় সংবিধানে উক্ত একটি
বিশেষ নীতিগত ধারা। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ ধারা বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র নীতি হিসাবেও
প্রতিপালনযোগ্য। এ জন্য দরকার নায়েবে মুজাদ্দেদের মত মহান উদার নৈতিক মধ্যপন্থী ব্যক্তিত্বের।
ঐক্যের স্বার্থে ফুরফুরা দরবারের ঐতিহ্যের কুরবাণী!
সত্যের জন্য ফুরফুরা দরবার সাতশত বছরের অধিক সময়কালের ঐতিহ্যের কুরবানী করতে দ্বিধা বোধ করেনি। টুপিকে কেন্দ্র করে অতীতের ন্যায় ফুরফুরা-অফুরফুরা-এই ভেদাভেদ যাতে উম্মাহর মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন না করে সে জন্য ফুরফুরার ঐতিহ্যবাহী ড্রেসকোড থেকে শানদার সেই টুপি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে যা ছিল ফুরফুরা দরবারের ঐতিহ্যগত প্রতীক।
কথিত আছে, ফুরফুরার ঐতিহ্যবাহী ঐ টুপিধারী মুরিদ-মুহেব্বীনদেরকে দেখামাত্র সশ্রদ্ধচিত্তে দিল্লির খাজা মাঈন-উদ্দীন চিশতি রহিমাহুল্লাহর মাজারের খাদেম সাহেবরা বিদায়াতিদের সতর্ক করে দিতেন।
bv‡q‡e gyRv‡Ï`: খওফ-উল-বাতিলা!
র্যাব, পুলিশ হচ্ছে সর্ব সাধারণের আর ট্রাফিক পুলিশ কেবল পরিবহন সংক্রান্ত লোকের জন্য খওফ বা আতংকের কারণ হতে পারে-যদি আইন পরিপন্থী ব্যাপার থাকে অন্যথায় সৎ এবং নিরাপরাধীদের জন্য আমাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য তাঁরা আল্লাহর বিশেষ রহমত।
নায়েবে মুজাদ্দিদ কেবল তাদের জন্য খওফ যারা বাতেল। হক পন্থীর জন্য রহমত। যদিও পরিতাপের বিষয়, সৎ লোকও পুলিশ দেখলে এমনকি ট্রাফিক পুলিশ দেখলে কেমন জানি অন্যমনস্ক হয়ে যায় অনুরুপ খওফ-উল-বাতিলা নায়েবে মুজাদ্দেদকে দেখলে, নাম শুনলে হাক্কানী পীর মাশায়েখদেরও কেমন জানি অনাস্থার ভাব দেখা যায়।
উল্লেখ্য, অনেক বছর আগের কথা। বাদ আসর এক মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর বেশ লম্বা, সুদর্শন এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, টেকনাফ যাওয়ার রাস্তা কোনটা? তিনি জানান, তিনি আরকানী মুসলমানদের সাহায্য করতে টেকনাফ যেতে যান। প্রসঙ্গক্রমে যখন জানতে পারেন যে, আমি ফুরফুরা দরবারের মাওলানা আবদুল কাহহার সিদ্দিকী পীর সাহেবের মুরিদ, তখন তিনি জানালেন, সিলেটে এমনও ফতোয়া আছে যে, শুকর মসজিদে প্রবেশ করলে পানি দ্বারা ধৌত করলে মসজিদ পাক হয়ে যাবে কিন্ত্ত এই পীর সাহেবের কোনো মুরীদ মসজিদে প্রবেশ করলে কেয়ামত পর্যন্ত মসজিদ নাপাকই থেকে যাবে, এই মুরিদ মারা গেলে তাঁর কবরস্থানে যে ঘাস হবে তা যে গরু বা ছাগলে খাবে সে গরু-ছাগলের গোস্তও হারাম দুধও হারাম! –তবে এ ফতোয়া হাক্কানী উলামার পক্ষ হতে নয়, মাজারে সিজদাকারী বাতিলদের পক্ষ হতে। সম্ভবতঃ বাতিলাতংক থেকে এহেন ফতোয়া!
আশেকে সুন্নাহ, খালেস সুন্নী নায়েবে মুজাদ্দেদ (রহিমাহুল্লাহ) ছিলেন মুহিহুস সুন্নাহ
আপাদমস্তক সুন্নী নায়েবে মুজাদ্দেদ (রহিমাহুল্লাহ) মুহিহুস সুন্নাহ ছিলেন । প্রায় ওয়াজে তিনি সুন্নাহর উপর জ্ঞানগর্ভ ওয়াজ ফরমাতেন। তিনি বলতেনঃ সুন্নাতের তাবেদারী নাজাতের একমাত্র পথ। তবে পীর সাহেব খুবই বিব্রত ছিলেন সুন্নাতের নামে বেসুন্নাতি কাজের জন্য। এ জন্য স্বীয় জামাতা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের শিক্ষক আ.ন.ম. খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবকে পবিত্র হাদিস (কোনটি সহীহ কোনটি জাল)-বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যে রিয়াদে পিএইচডিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ডক্টরেট করে দেশে ফিরলে পীর সাহেব উনাকে ইসলামী কিতাব লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এমনকি কোন্ বিষয়ের উপর কিতাব লিখবেন বিষয়টিও পীর সাহেব জানিয়ে দিতেন। সর্বশেষ যে কিতাবটি লিখতে খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবকে অসিয়ত করেছিলেন বইটি পর্দা বিষয়ক। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, বায়েত হওয়ার পর সর্ব প্রথম পাহাড়তলী, বাছা মিয়া রোডস্থিত ফুরফুরা দরবারের চট্টগ্রাম জেলা মার্কাযে পীর সাহেবের একান্ত মজলিশে আমরা যে বিষয়ে পীর সাহেবের আলোচনা শুনছিলাম তা-ও ছিল মা-বোনদের মুখ ঢেকে রাখা, না রাখার অর্থাৎ পর্দা বিষয়ে।
উনার মৃত্যুও হয়েছিল সুন্নাত মতে ষাট এবং সত্তর বয়সের মাঝামাঝিতে। সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় দ্বীনী সফরের সময়ও তিনি সুন্নাহর অনুসরণে লুঙ্গি পরিহিত থাকতেন। উনার বিশেষ সুন্নাহ ছিলঃ জামিউল ক্বওল। সত্যিকার সুন্নী হিসাবে তাই অল্প কথায় জ্ঞানের সব বিষয়কে একত্রিত করে ওয়াজ ফরমাতেন নায়েবে মুজাদ্দেদ।
নায়েবে মুজাদ্দিদ ছিলেন
জা’মিউল
ক্বওল
মাওলানা আবুল আনসার মুহাম্মাদ আবদুল ক্বাহহার সিদ্দিকী আল কুরাইশীঃ যুগশ্রেষ্ঠ জামিউ’ল ক্বওল
অল্প কথায় ব্যাপক অর্থবোধক ভাবসম্প্রসারিত বক্তব্য রাখতেন আশরাফুল আম্বিয়া, সাইয়্যেদুল মুরসালিন ﷺ সেই সুন্নাতের অনুসরণে পীর সাহেব ওয়াজ ফরমাতেন। যেমন নারীদের মহান মর্যাদা একবাক্যে শেষ করতেন এই বলেঃ মেয়েরা নবী হয় নাই কিন্তু নবীদের মা হয়েছে। এর চেয়ে নারীর মহান মর্যাদা আর কি সহজ-সরল সংক্ষিপ্ত ভাষায় বলা যায়। তিনি বলতেনঃ ‘‘ الله (আল্লাহ) কে কেবল الله (আল্লাহ) বললে শুদ্ধ হবে না; ক্বুরআন হাদিস ইজমা কিয়াসের মাধ্যমে ডাকতে হবে।’’
‘‘মহান ও বরকতময় পালনকর্তার নাম। তিনিই সত্য মাবূদ, তিনি ব্যতীত কেউ
মাবূদ নয়। আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে এটি (الله-আল্লাহ) তাঁর বিশেষ (খাস যাত/ইসমি
যাত) নাম। তিনি ব্যতীত এ নাম কারো জন্যে বৈধ নয়।’’(তাফসীরুল উশরিল আখীর মিনাল
কুরআনিল কারীম: মুসলিম জীবনে গুরুত্বর্পূর্ণ বিধান) সূত্রঃ www.tafseer.info,
ISBN: 978-9960-58-634-2, bng@tafseer-info পৃ: ৪, সূরাহ আল ফাতিহার তাফসীর। মক্কা
আল মুয়াজ্জেমা, সৌদী আরব)।
‘‘ইসমি আল্লাহ আল্ আ’জিম হুয়া আল্লাহ। ‘‘আল্লাহর সবচাইতে বড় নাম, সে তো الله(আল্লাহ)’ই’’। সূত্রঃ ১) ঈমান তত্ত¡
ও দর্শন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রথম প্রকাশ - ১৯৯৯, পৃষ্ঠা: ৬০)
‘‘ওলামায়ে কেরামবৃন্দ বিভিন্ন কেতাবে মহাপবিত্র الله (আল্লাহ) শব্দটি
সর্ম্পকে নিম্নরূপ বর্ণনা দিয়েছেন: ●‘‘ الله (আল্লাহ) তা’আলা এমন যে, সৃষ্টি
জগতের কোন বস্তুই তাঁর সমতুল্য নয়’’ (সূরাহ আশ্ শুরাহ) ●‘‘সুতরাং তোমরা সৃষ্টি
জগতের কোন কিছুকেই আল্লাহ তা’আলার দৃষ্টান্ত স্বরূপ পেশ করতে যেও না’’। (সূরাহ আন্
নাহল)
●‘‘কল্পনাসমূহ আল্লাহর ধারে কাছেও পৌঁছেনা এবং বুদ্ধি, অনুভূতিসমূহ আল্লাহকে উপলদ্ধি করতে পারে না’’। (আকিদাহঃ ইমাম আবু জাফর তাহাবী রহঃ) আহলে কাশফ ছিলেন নায়েব মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহ
কাশফ মানে হল অজানা কোন বিষয় নিজের কাছে প্রকাশিত হওয়া।
এ কাশফ কখনো সঠিক হয় আবার কখনো মিথ্যা হয়। কখনো বাস্তবসম্মত হয়,
কখনো বাস্তব পরিপন্থী হয়। তাই এটিকে শরীয়তের কষ্টিপাথরে যাচাই করা আবশ্যক।
সহীহ হাদীসে এসেছে
عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ لِلشَّيْطَانِ لِمَّةً، وَلِلْمَلَكِ لِمَّةً، فَأَمَّا لِمَّةُ الشَّيْطَانِ فَإِيعَادٌ بِالشَّرِّ، وَتَكْذِيبٌ بِالْحَقِّ، وَأَمَّا لِمَّةُ الْمَلَكِ فَإِيعَادٌ بِالْخَيْرِ، وَتَصْدِيقٌ بِالْحَقِّ، فَمَنْ وَجَدَ مِنْ ذَلِكَ فَلْيَعْلَمْ أَنَّهُ مِنَ اللهِ، فَلْيَحْمَدِ اللهَ، وَمَنْ وَجَدَ مِنَ الْآخَرِ فَلْيَتَعَوَّذْ مِنَ الشَّيْطَانِ، ثُمَّ قَرَأَ {الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا} [البقرة: ২৬৮]
“নিশ্চয় মানুষের অন্তরে শয়তানের পক্ষ থেকেও কথার উদ্রেক হয়, ফেরেশতার
পক্ষ থেকেও কথার উদ্রেক হয়। ফেরেশতার উদ্রেক হল, কল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতি দান এবং
হকের সত্যায়ন করা। যে ব্যক্তি এটি অনুভব করবে, তাকে বুঝতে হবে যে, তা আল্লাহ তাআলার
পক্ষ থেকে, তাই তার প্রশংসা করা উচিত। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয়টি অনুভব করবে, তাকে বিতাড়িত
শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করতে হবে। অতঃপর তিনি [সূরা বাকারার ২৬৮ নং] আয়াত পাঠ করেন,
অর্থাৎ শয়তান তোমাদের অভাব অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। অপরদিকে
আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অধিক অনুগ্রহের ওয়াদা করেন”।
{সুনানুল কুবরা লিননাসায়ী, হাদীস নং-১০৯৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৯৯৭, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪৯৯৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৯৮৮}
https://ahlehaqmedia.com//কাশফ-ও-ইলহাম-সম্পর্কে-শরয়/
আহলে ‘কাশফ’ এবং আহলে ‘ইলহামের’ অধিকারী ছিলেন নায়েবে মুজাদ্দেদ সাহেব-যার
কারণে উনার জীবনের শেষ মুহুর্তের মূল্যবান সময়গুলির পূর্ণ সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে করে
নিজেকে চমৎকারভাবে আগাম গুছিয়ে ফেলা ছিল লক্ষ্যণীয়। সম্ভবতঃ এতে অনুপ্রাণিত করছিল কাশফ
এবং ইলহাম।। বিশেষ করে সর্বদলীয় ইসলামী ঐক্য সম্মেলন অনুষ্ঠান কাশফের স্বাক্ষর বহন
করে মৃত্যুর পূর্ববর্তী ২০০৫ সালে “তাঁর অবর্তমানে পরবর্তী গদ্দীনসীন পীর” মনোনয়নের
মধ্যদিয়ে (যার বিশদ বিবরণী সামনে পেশ করা হবে ইনশাআল্লাহ)। হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী
থানবী রহঃ কাশফ সম্পর্কে বলেন, “বুযুর্গদের যে কাশফ হয়ে থাকে, তা তাঁদের ক্ষমতাধীন
নয়।{ইলম ও আমল, বাসায়েরে হাকীমুল উম্মত-২১৫-২১৬}
ইলহাম
ইলহামের পারিভাষিক অর্থ হল, চিন্তা ও চেষ্টা ছাড়াই কোন কথা হৃদয়ে উদ্রেক
হওয়া। ইলহাম কাশফেরই প্রকার বিশেষ। ইলহাম সহীহ হলে তাকে ইলমে লাদুন্নী বলা হয়ে থাকে।
যে ইলহাম শরীয়তের কোন হুকুম আহকাম সম্পর্কিত এবং এর পক্ষে শরীয়তের দলীলও বিদ্যমান থাকে, শুধু এ ধরণের ইলহামকেই সহীহ ইলহাম বলা হবে এবং ধরা হবে এটি আল্লাহ তাআলা পক্ষ থেকে হয়েছে। এটি আল্লাহ তাআলার নিয়ামত বলে পরিগণিত হবে। এ ব্যাপারে তাঁর শোকর আদায় করা দরকার{ফাতহুল বারী-১২/৪০৫, কিতাবুত তাবীর, বাব-১০, রূহুল মাআনী-১৬/১৬-২২, তাবসিরাতুল আদিল্লা-১/২২-২৩, মাওকিফুল ইসলাম মিনাল ইলহাম ওয়াল কাশফি ওয়াররূয়া-১১-১১৪}।
https://ahlehaqmedia.com//কাশফ-ও-ইলহাম-সম্পর্কে-শরয়/
অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জটিল উদ্ভূত পরিস্থিতিতেও আহলে হক্ব ফুরফুরা দরবারের
পীর সাহেববৃন্দ ঐতিহ্যগতভাবে সুন্নাতি তরিকায় রয়ে সয়ে সবরে জামিলের মাধ্যমে ইলহাম-ইলকার
আলোকে শরয়ী নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।
অন্তিমকালে যেভাবে প্রকাশমান হচ্ছিল
নায়েবে মুজাদ্দিদ রহিমাহুল্লাহর ‘কাশফ’ আর ‘ইলহাম-ইলকা’
১৪২৬ হিজরি
মোতাবেক ২০০৫ সাল থেকে পীর সাহেবের আখেরি জীবন-জিন্দেগিতে যেন একের পর এক ধারাবাহিকভাবে প্রকাশমান
হচ্ছিল কাশফ ও ইলহাম-ইলকা। মনে হচ্ছিল, হজ্ব কিংবা প্রবাসের দীর্ঘ সফরের উদ্দেশ্যে
রওয়ানা হওয়ার অনেক আগ থেকে যেমন দীর্ঘ পথযাত্রী মুসাফির তাঁর পারিবারিক, সামাজিক,
আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে জাগতিক লেনদেনের হিসাবের ইজা চুকিয়ে নেন; আত্মীয় স্বজন-বন্ধু
বান্ধব যাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ জরুরী মনে করেন, তাঁদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ সেরে নেন,
থাকেন প্রতিটা মুহুর্ত জরুরী কাজে ব্যস্ত সমস্ত- ঠিক সেভাবে আগামী দিনের নায়েবে
মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহ উনার মৃত্যু পূর্ববতী বছর থেকে একে একে সব কাজ যেন দ্রুত সেরে
নিচ্ছিলেন।
দারুস
সালামে অনুষ্ঠিত জাতীয় মুবাল্লেগ সম্মেলন-২০০৫ সম্পর্কে কিছু কথা
১৪২৬ হিজরী মোতাবেক ২০০৫
সাল। এই বছরের মাঝামাঝিতে পীর সাহেব আহবান করেছিলেন ঢাকার মীরপুরে অবস্থিত স্বীয়
ফুরফুরা দরবারের মার্কাযে ইশাআতে ইসলাম দারুস সালামে “জাতীয় মোবাল্লিগ
সম্মেলন”। উদ্দেশ্যঃ এই সম্মেলনে ফুরফুরা দরবারের সর্বস্তরের
মুবাল্লেগবৃন্দের প্রতি প্রয়োজনীয় অসমাপ্ত সাংগঠনিক দিক নির্দেশনা প্রদান এবং আগামীদিনের
রাহবার মনোনয়নের ঘোষণা ইত্যাদি।
জাতীয় মুবাল্লেগ সম্মেলনের
কোনো এক দিবসের বাদ যোহর। খাওয়া দাওয়ার পর সবাই কায়লুলা অবস্থায়। এমন সময় দারুস
সালাম মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা এলোঃ, মুবাল্লিগ ভাইয়েরা আপনারা সবাই মার্কায
মসজিদে চলে আসুন, পীর সাহেবের জরুরী বয়ান আছে।
জমিয়তুল মুসলিমীন
হিযবুল্লাহর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হযরত মাওলানা আবুল বাশার জিহাদী (ওস্তাদ হুযুর)
সাহেব পূর্বেই মসজিদে তাশরীফ এনেছেন। অতঃপর পীর সাহেব আসলেন। পীর সাহেব দেশের
বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বিভাগ, জেলা, থানাসহ সর্বস্তরের মুবাল্লিগবৃন্দের
উদ্দেশ্যে বিশ্ব ইসলাম মিশন কোরঅআনী-সূন্নী জমিয়তুল মুসলিমিন হিযবুল্লাহর জরুরী
সাংগঠনিক দিক-নির্দেশনার ছাড়াও ফুরফুরা দরবারের আগামীদিনের রাহবার হিসাবে পরবর্তী
গদ্দীনসীন পীর মনোনয়নের ঘোষণা প্রদান করেন।
PÆM«v‡g me©‡kl Øxbx mdi‡K ‡K›`« K‡i ‡hb c«Kvkgvb nw”Qj bv‡q‡e gyRvwÏ` iwngvûjøvni Kvkd I Bjnvg-BjKv|
যেভাবে চট্টগ্রামে পীর সাহেবের আকস্মিক সফর এন্তেজামের হয়েছিল
মাহফিল ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে পীর সাহেব কর্তৃক আয়োজনকারীদের সাধারণতঃ যথেষ্ট সময় দেওয়ার একটা ঐতিহ্য ছিল। ১৪২৭ হিজরির (২০০৬ ঈসাব্দের) সফর মাসের শেষ সপ্তাহের দিকে তার কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটিয়ে অল্প সময়ের নোটিশে পীর সাহেবের চট্টগ্রামে দীনী সফরের খবরে ফুরফুরা দরবারের চট্টগ্রামের মুরিদ-মুহিব্বীনদের মধ্যে কিছুটা দোদুল্যমান অবস্থার উদ্রেক ঘটে। এত অল্প সময়ের মধ্যে দিনে অন্ততঃ ২/৩টা মাহফিলের যে ধারা তা বজায় রাখাও দুরুহ ব্যাপার বটে করেন দরবারের মুরব্বীবৃন্দ ।
পীর সাহেবের আকস্মিক চট্টগ্রামের দ্বীনী জলসার আয়োজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দারুল মারেফাতের পীর সাহেবের সভাপতিত্বে মার্কাযে দারুল ইসলামে জরুরি মাশওয়ারা সভা বসে চট্টগ্রাম শহরের অস্থায়ী খানকাহতে। ফুরফুরা দরবারের পীর সাহেবের জন্য এত অল্প সময়ে খেদমত আন্জাম দেয়ার ব্যাপারে কেউ সাহস করছিলেন না।
এমন সময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত চট্টগ্রামের এক প্রবীন মুরিদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মাওলানা শামসুল ইসলাম সাহেব, খতিব, সিএসডি গোডাউন জামে মসজিদ, শিক্ষক, সিএসডি গোডাউন প্রাইমারি স্কুল সভায় উপস্থিত হয়ে নিজ উদ্যোগে মাহফিল আয়োজনে আগ্রহ প্রকাশ করলে উপস্থিত সবার মধ্যে আগ্রহ পয়দা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে পীর সাহেবের মাহফিল সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরের কে ব্লক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে সর্বশেষ মাহফিল প্রসঙ্গেঃ
পহেলা রবিউল আউয়াল, চৌদ্দশত চুয়াল্লিশ হিজরি মোতাবেক ২০০৬ থেকে মাহফিল শুরু হয়েছিল।চট্টগ্রামে সর্বশেষ ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল উত্তর হালিশহরের কে ব্লক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে। পীর সাহেবের সেদিনের মাহফিলদ্বয় অনেকটা সংক্ষিপ্তকারের। প্রথম মাহফিল পোর্ট কলোনী বার নম্বর সড়ক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে। এসে দেখি মাহফিল শেষ। বাদ এশার মাহফিলও দ্রুত মনে হলো। সর্বশেষ দোয়ার মাহফিলটা আরও দ্রুত। কয়েকদিন ব্যাপী মাহফিলের আখেরি দিবসের আখেরি দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাজির দেউরি ভি.আই.পি. টাওয়ারে এক পুলিশ অফিসারের বাসভবনে। উক্ত বাসভবন থেকে দ্রুত দোয়া-খায়েরের পর হাজীপাড়া এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতের খাবার না খেয়েই দ্রুত চট্টগ্রাম ত্যাগের প্রস্তুতি নিলেন। রাত প্রায় গভীর। তবুও কেন জানি পীর সাহেবের সঙ্গ ছাড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল বিশেষ একটা লক্ষ্য নিয়ে এত অল্প সময়ের নোটিশে চট্টগ্রামে এসেছেন।
পীর সাহেবের আকস্মিক চট্টগ্রামের দ্বীনী জলসার আয়োজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দারুল মারেফাতের পীর সাহেবের সভাপতিত্বে মার্কাযে দারুল ইসলামে জরুরি মাশওয়ারা সভা বসে চট্টগ্রাম শহরের অস্থায়ী খানকাহতে। ফুরফুরা দরবারের পীর সাহেবের জন্য এত অল্প সময়ে খেদমত আন্জাম দেয়ার ব্যাপারে কেউ সাহস করছিলেন না।
এমন সময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত চট্টগ্রামের এক প্রবীন মুরিদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মাওলানা শামসুল ইসলাম সাহেব, খতিব, সিএসডি গোডাউন জামে মসজিদ, শিক্ষক, সিএসডি গোডাউন প্রাইমারি স্কুল সভায় উপস্থিত হয়ে নিজ উদ্যোগে মাহফিল আয়োজনে আগ্রহ প্রকাশ করলে উপস্থিত সবার মধ্যে আগ্রহ পয়দা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে পীর সাহেবের মাহফিল সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরের কে ব্লক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে সর্বশেষ মাহফিল প্রসঙ্গেঃ
পহেলা রবিউল আউয়াল, চৌদ্দশত চুয়াল্লিশ হিজরি মোতাবেক ২০০৬ থেকে মাহফিল শুরু হয়েছিল।চট্টগ্রামে সর্বশেষ ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল উত্তর হালিশহরের কে ব্লক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে। পীর সাহেবের সেদিনের মাহফিলদ্বয় অনেকটা সংক্ষিপ্তকারের। প্রথম মাহফিল পোর্ট কলোনী বার নম্বর সড়ক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে। এসে দেখি মাহফিল শেষ। বাদ এশার মাহফিলও দ্রুত মনে হলো। সর্বশেষ দোয়ার মাহফিলটা আরও দ্রুত। কয়েকদিন ব্যাপী মাহফিলের আখেরি দিবসের আখেরি দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাজির দেউরি ভি.আই.পি. টাওয়ারে এক পুলিশ অফিসারের বাসভবনে। উক্ত বাসভবন থেকে দ্রুত দোয়া-খায়েরের পর হাজীপাড়া এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতের খাবার না খেয়েই দ্রুত চট্টগ্রাম ত্যাগের প্রস্তুতি নিলেন। রাত প্রায় গভীর। তবুও কেন জানি পীর সাহেবের সঙ্গ ছাড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল বিশেষ একটা লক্ষ্য নিয়ে এত অল্প সময়ের নোটিশে চট্টগ্রামে এসেছেন।
যাহোক, পীর সাহেব সিডিউল মোতাবেক যথারীতি ১লা রবিউল আউয়াল, ১৪২৭ হিজরি সাল দিন কয়েকের জন্য এসে পৌঁছলেন।
পুরো সফরের প্রায় সময়
আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ সম্ভবপর হয় না, পরবর্তী দিনের মাহফিল এন্তেজামের কারণে।
মধ্যবর্তী একদিন মাহফিল ছিল আমাদের অফিসের মসজিদ চত্বরে। বাদ আসর মাহফিলের সময়।
মাহফিল শেষ হলো মাগরিবের অনেক আগে। পীর সাহেব রওয়ানা করলেন উনার অনেকদিনের
স্বপ্নের মার্কাযঃ মার্কাযে দারুল ইসলাম, ফুরফুরা দরবার, ফুরফুরা নগর, সাগরিকা
রোড, পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের দিকে। পুরো মার্কায তিনি পরিদর্শন করেন নি। দূর থেকে
কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন দীর্ঘদিনের স্বপ্নের মার্কায!
উল্লেখ্য, কার্যক্রম শুরু
করতে তিনি নিজ থেকে যেমন আর্থিক সাহায্য দিয়েছিলেন তেমনি উত্তর হালিশহর এইচ ব্লক
জামে মসজিদে তিনি মুসল্লিদের উদারহস্তে (ফীসাবিলিল্লাহ) দারুত তাওহীদ জামে মসজিদের
জন্য দান করার উদাত্ত্ব আহবান জানিয়েছিলেন । এর পর মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে
যথারীতি মার্কাযের কাজ শুরু হয় দামপাড়ার মুরব্বী মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল লতিফ
সাহেবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন পীর
সাহেব মনোনীত ফুরফুরা দরবার, চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি দারুল মারেফাতের
পীর সাহেব হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ শামসুল ইসলাম সাহেব রহিমাহুল্লাহ।
আরো উল্লেখ্য, হিন্দু
অধ্যুষিত এলাকায় এই দারুত তাওহীদ মসজিদ নির্মিত হয়। অত্র এলাকার একজন মুসলমান
আমাদের জানালেন, এই এলাকায় ২০ বছর যাবৎ বসবাসরত আছি। কিন্ত্ত এই মসজিদের আগে এখানে
কখনও আজান শুনিনি।
পীর সাহেব এ এলাকার
নামকরণ করেন ‘ফুরফুরা নগর’, মসজিদের নামকরণ করেন ‘দারুত তাওহীদ’। ২০০৫ সালে দারুত তাওহীদ জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন পীর সাহেব নিজেই।
নায়েবে মুজাদ্দেদ
রহিমাহুমুল্লাহর কিছু খুঁটিনাটি কিছু জীবন কথা
ফখরে
অআউলিয়া নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহ অনেকটা ফখরের সাথে ওয়াজে বলতেনঃ
(চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আলেমে দীন) শেরে বাংলা হাশেমী সাহেবের আব্বা মাওলানা আহছান
উল্লাহ সাহেব, (চট্টগ্রামের মীরশ্বরাইয়েরর বিশিষ্ট আলেমে) দীন হযরত মাওলানা অআবদুল
গণি (অআউয়াল সাহেব) রহিমাহুল্লাহর মতো লোক ফুরফুরার খলিফা ছিলেন। উল্লেখ্য,
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী তরিকতপন্থী সংগঠন বায়তুশ শরফের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা হযরত
মাওলানা মীর মুহাম্মাদ আখত্বর সাহেবের পিতা হযরত মাওলানা মীর মুহাম্মাদ মাসউদ
রহিমাহুমুল্লাহ, শর্ষিনা দরবারের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা নেছার উদ্দিন
রহিমাহুমুল্লাহ, মুজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বকর সিদ্দিকী রহিমাহুমুল্লাহর খলিফা
ছিলেন।
চট্টগ্রামের
আগ্রাবাদ, ঢেবার পাড়ে মাঝে মাঝে সেনাবাহিনীর গাড়ীর আনাগোনা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে
যায়। গাড়িতে থাকেন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা। ব্যাপার হচ্ছে, সেদিন ঢেবার পাড়ে
কুমিল্লার দারুল আমান দরবারের পীর সাহেবের আগমন ঘটায় উনার সুহবত এখতিয়ার করার জন্য
সামরিক কর্মকর্তারা এসে থাকেন। অনেক সেনা প্রধানও এই পীর সাহেবের মুরীদ। উল্লেখ্য,
ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের অদূরে কুমিল্লায় অবস্থিত দারুল আমান দরবারের প্রতিষ্ঠাতা
হযরত মাওলানা হাতেম আলী বাগদাদী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন প্রফেসর মুহাম্মাদ অআবদুল
খালেক রহিমাহুল্লাহর খলিফা, অআর প্রফেসর সাহেব ছিলেন ফুরফুরার মুজাদ্দেদে জামান
রহিমাহুল্লাহর খলিফা। ইন্টারনেটবিহীন সময়ে ফুরফুরা সিলসিলার এই পীর সাহেব
চট্টগ্রামে দীনী মাহফিলে তশরীফ আনার পর যখন জানতে পারতেন, ফুরফুরা দরবারের পীর সাহেব
আবদুল কাহহার সিদ্দিক একই সময়ে চট্টগ্রামে তশরীফ এনেছেন, আদব রক্ষার্থে তখন দারুল আমানের
পীর সাহেব দ্রুত ফিরে যেতেন দারুল আমানের আপন দরবারে।
এক
সময় চট্টগ্রামের দামপাড়া জমিয়তুল ফালাহ বিশ্ব মসজিদ মাঠে ফুরফুরার নায়েবে
মুজাদ্দেদ পীর সাহেব তশরীফ আনলে তৎকালীন বায়তুশ শরফের পীর সাহেবের যেন দায়িত্ব হয়ে
যেতঃ ছোট ছোট ছেলেদের শব্দ দূষণ কলরব ঠেকাতে, যাতে নায়েবে মুজাদ্দেদের তাকরিরে
ব্যাঘাত না ঘটে।
উল্লেখ্য, নায়েবে মুজাদ্দেদ পীর সাহেবের এজাযতে
চট্টগ্রামে ফুরফুরা দরবারের আঞ্চলিক মুখপত্র নেদায়ে মদীনা ছাপানো হলে তাতে
বিজ্ঞাপন ছাপা হয় বায়তুশ শরফের পীর সাহেবের লিখিত এবং অনুদিত কিতাবাদির।
একদা
বায়তুশ শরফের পীর সাহেব বায়তুশ শরফ মসজিদের দরজার সামনে বাদ আছর দাঁড়িয়ে ছিলেন চিন্তামগ্নভাবে।
আমি সদ্য প্রকাশিত নেদায়ে মদীনার এককপি হাতে দিলে তিনি তা অতি বিনয়ের সাথে গ্রহণ
করেন। একদিন রোজার সময় বায়তুশ শরফে আমি আছর নামায পড়তে আসলে, বায়তুশ শরফের এক
আশেকান আমাকে অনেকটা তাগাদার সাথে বায়তুশ শরফের ইফতার মাহফিলের দাওয়াত দেন। পীর
সাহেবের জীবনের এটাই শেষ রমজান। কারণ, মাস কয়েক পর ১৯৯৮ সালের ২৫ মার্চ উনার ওফাত
হবে।
ইফতার
মাহফিলে প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন বায়তুশ শরফের পীর সাহেব। আমিই তাতে অংশ নিই। এক
পর্যায়ে কৌতুহল বশতঃ পীর সাহেবের খাস কামরায় ঢুকে পড়ি । কক্ষে দেখি, পীর সাহেবের
ওয়াজ নসিহতের জন্য নির্দিষ্ট ছোট একটা উচু টেবিল। তারই উপর সযতনে রাখা ছিল সেই চট্টগ্রামে
ফুরফুরা দরবারের আঞ্চলিক মুখপত্র নেদায়ে মদীনা (শরীফ)।
চতুর্থ অধ্যায়
চট্টগ্রামে নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহকে যেমন দেখেছি
উপমহাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার (বাবল ইসলাম) ইসলামাবাদ চট্টগ্রামে নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহকে যেমন দেখেছি
ইসলামাবাদ চট্টগ্রাম
নির্ভরযোগ্য প্রাচীন
বাংলার ইতিহাসসূত্রে জানা যায় যে, পাক-বাংলা-ভারত উপমহাদেশে সাগর পথে ইসলামের
প্রবেশ ঘটেছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটাত্মীয় মামা
সম্পর্কের হযরত আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহ আনহু আরব সাগর পথে বঙ্গোপসাগর উপকূল
অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথে চীনের ক্যান্টনে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম
বন্দরে যাত্রাবিরতিকালে এদেশে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
জীবৎকালেই এই উপমহাদেশে ইসলামের প্রবেশ ঘটে। এ কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় বাবল
ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের প্রবেশ উল্লেখ্য, রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়,
রাসুল (ﷺ)-এর মামাজান, মা আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস
(রদ্বিয়াল্লাহ আনহু) ৬২০ থেকে ৬২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার
করেন (পৃ. ১২৬)। অনেকে অনুমান করেন, রংপুরের পঞ্চগ্রামের মসজিদটিও তিনি নির্মাণ
করেন যা ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কার করা হয়।
দেশের প্রথম ও প্রাচীন এই
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ২১ ফুট ও প্রস্থ ১০ ফুট। মসজিদের ভিতরে রয়েছে একটি কাতারের
জন্য ৪ ফুট প্রস্থ জায়গা। মসজিদের চার কোণে রয়েছে অষ্টকোণ বিশিষ্ট স্তম্ভ।
ধ্বংসাবশেষ থেকে মসজিদের চূড়া ও গম্বুজ পাওয়া গেছে।
মতিউর রহমান বসুনিয়া রচিত ‘রংপুরে দ্বীনি দাওয়াত’ গ্রন্থেও এই মসজিদের বিশদ বিবরণ আছে (তথ্যসূত্রঃ https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/nilakash2021/30275963)|
বার
আউলিয়ার ধন্যভূমি চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের বিশিষ্ট পীরে কামেল, ‘সিতারা-ই-চাটগাম’ সুফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহর নেক সুবহতে ধন্য হচ্ছেন উনারই সুযোগ্য খলিফা ফুরফুরা দরবারের ‘প্রাণ পুরুষ’ মুজাদ্দেদে জামান হযরত আবদুল্লাহ আল মারুফ আবু বাক্বর সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের
সাতকানিয়া উপজেলা নিবাসী সুফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহ (https://bn.wikipedia.org/wiki/ফতেহ_আলী_ওয়াসি) ছিলেন
চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত উপজেলা মীরশ্বরাইয়ের নিজামপুরে অবস্থিত ‘মলিয়াশ’ নামক
গ্রামে শায়িত গাজিয়ে বালাকোট ‘হেলাল-ই-চাটগাম’ সুফী নূর মোহাম্মাদ নিজামপুরী রহিমাহুল্লাহর (https://www.google.com/search?client=firefox-b-e&q=সুফী+নূর+মোহাম্মাদ+নিজামপুরী)
খলিফা।
ইতিহাস গবেষকদের মতে,
গাজিয়ে বালাকোট ছিলেন একজন চেচেনিয়ান (সূত্রঃ মাওলানা মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম,
সাবেক প্রিন্সিপ্যাল, বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম)। গাজিয়ে বালাকোট সুফী নূর
মোহাম্মাদ নিজামপুরী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেমে বিল্লাহ, আরিফ
বিল্লাহ সৈয়দ আহামাদ শহীদ বেরেলভী রহিমাহুল্লাহ (https://www.google.com/search?client=firefox-b-e&q=সৈয়দ+আহামাদ+শহীদ+বেরেলভী+)এর
খলিফা। সৈয়দ আহামাদ শহীদ বেরেলভী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস
দেহলভী রহিমাহুল্লাহ (https://www.google.com/search?client=firefox-b-e&q=শাহ+আবদুল+আজিজ+মুহাদ্দিস+দেহলভী)
এর খলিফা। শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন তদীয় পিতা
উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক প্রাণ পুরুষ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী
রহিমাহুল্লাহ https://bn.wikipedia.org/wiki/শাহ_ওয়ালিউল্লাহ_দেহলভী
এর সুযোগ্য বড় সাহেবজাদা।
বার আউলিয়ার ধন্যভূমি চট্টগ্রামে ফখরে আউলিয়া নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহকে যেমন দেখেছি
নায়েবে মুজাদ্দেদ
রহিমাহুল্লাহ গদ্দীনসীন পীর হন ১৯৭৭ সালে। এই বছরেই নাকি শেষবারের মত চট্টগ্রাম
তাশরীফ এনেছিলেন পরতাপে কাইউমুজ্জামান তদীয় ওয়ালেদ সাহেব হযরতুল আল্লাম মুফতি
মুহাম্মাদ আবদুল হাই সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহ । এর আগে ফুরফুরা দরবারের
প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা মুজাদ্দেদে জামান হযরত মাওলানা আবদুল্লাহ মারুফ আবু বকর
সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহ। ঠিক কত সালে ফখরে আউলিয়া নায়েবে মুজাদ্দেদ
রহিমাহুল্লাহ বার আউলিয়ার ধন্যভূমি চট্টগ্রামে তাশরীফ আনেন আমাদের জানা নেই। তবে
১৯৯২ সালে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদস্থিত জাম্বুরী মাঠে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ও ইসালে
সওয়াব উপলক্ষ্যে তারও আগে ঐতিহাসিক রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ড মাঠ চত্বরে অনুষ্ঠিত
মাহফিলের শ্রোতা হিসাবে ফুরফুরা দরবারের নেসবত লাভ হয়। পরবর্তীতে এক মাহফিল হতে যারা ফুরফুরা দরবারের সাথে সম্পর্ক রাখতে চান
মেহেরবাণী করে তাঁরা যেন জুমাবাদ বাদ মাগরিব টাইগার পাস মামা ভাগিনার মসজিদে
ফুরফুরা দরবারের হালকায়ে জিকিরের মাহফিলে আসেন। সেমতে মহান আল্লাহর অশেষ
মেহেরবাণীতে কোনো এক জুমাবার বাদ মাগরিব হালকায়ে জিকির মাহফিলে শরীক হয়। দেখলাম,
বাদ আসর ফুরফুরা দরবারের ছাত্র-যুব সংগঠন হিযবুল্লাহ হিলফুল ফুযুলের কর্মী সভা
অনুষ্ঠিত হয় উক্ত মসজিদ চত্বরে। তাতেও শরীক হলাম।
মাস কয়েক পর ঢাকা দারুস
সালাম ঢাকায় জাতীয় হিলফুল ফুযুলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সম্ভবতঃ ১৯৯৩
সালে। চট্টগ্রাম জেলার হিলফুল ফুযুলের সদস্য হিসাবে কেন্দ্রীয় সম্মেলনে উপস্থিত হই
এবং কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়। হিযবুল্লাহ হিলফুল ফুযুলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ইশাআতে
ইসলাম কুতুবখানার বহু মূল্যবান কিতাবাদির লেখক, বর্তমানে ফুরফুরা দরবারের মুখপত্র
মাসিক নেদায়ে ইসলামের সম্পাদক আরিফ আল মান্নান (মামুন) ভাইয়ের বাদ মাগরিব রুহানী
তালীম এখনও প্রাতঃস্মরণীয়। তাছাড়া জমিয়তুল মুসলিমিন হিযবুল্লাহর ভারপ্রাপ্ত
মহাপরিচালক হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আবুল বাশার জিহাদী (ওস্তাদ হুযুর)
রহিমাহুল্লাহর ঈমানী জিহাদী তাকরীরে সুন্নাতের তাবেদারী বিষয়ে যে তাকরির ফরমান
তাতে ছিল ইহুদী-নাসারার অনুকরণ, অনুসরণের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারী, যা আমাকে এমন
দারুনভাবে প্রভাবিত করে।
যাহোক, ঢাকা দারুস
সালামে আসার পথে আনন্দিত ছিলাম এ কারণে যে, এ বছর পীর সাহেবের বাড়তি দর্শন হবে
দারুস সালামে! প্রতি বছর (চট্টগ্রামে)
ইসালে সওয়াব মাহফিলের আখেরি মুনাজাতে এই ভেবে অশ্রুসজল হতো যে, আবার একটি বছর পর
পীর সাহেবের মোলাকাত হবে। দারুস সালাম এসে জানতে পারি, আশেকে রসূল ﷺ তখন মদীনা মুনওয়ারায় অবস্থান করছেন।
বদ্ধমূল ধারণা ছিল,
তরিকতপন্থী এই সংগঠনেও অন্যন্য মারেফাতী সংগঠনের মত দরবারে এসে জড়োসড়ো হয়ে থাকার
মধ্যে সত্যিকার মুরীদের আদব আখলাকের উসওয়াত বা বৈশিষ্ট্য। তাই এ ধারণা ছিল, চায়ের
দোকানে যাওয়া, সাহিত্য চর্চা এসবের স্থান অন্ততঃ এখানে নেই। পত্রপত্রিকা পড়াও হাটহাজারীসহ
অনেক জায়গায় নিষিদ্ধ। তাই ঢাকা রওয়া হবার আগে শেষবারের মতো পারিবারিক ঐতিহ্য
সাহিত্য চর্চা কুরবাণী দেয়ার আগে দৈনিক ইনকিলাবে ছোট্ট একটা আখেরি লেখা দিয়ে ঢাকা
রওয়ানা হই। দারুস সালাম গেইটে এসে নুরু ভাইয়ের চায়ের দোকান দেখে প্রথম ধারণা
পরিবর্তন হতে থাকে। চট্টগ্রাম ফেরার আগে ইশাআতে ইসলাম কুতুবখানা কর্তৃক প্রকাশিত হিযবুল ফুযুল কেন্দ্রীয় দপ্তর
হতে প্রদত্ত এক বস্তা বই যখন আমার হাতে দেওয়া হলে কিছুদূর যাওয়ার পর বস্তাটি মাথায়
তুলে নেয়ার পর অনুভব করলাম এ দরবার তো সাহিত্য তথা জ্ঞান চর্চার উর্বর ক্ষেত্র! ছাড়ার ক্ষেত্র নয়।
ফুরফুরা দরবারঃ জ্ঞানীর দরবার, বিজ্ঞানীর দরবার
নায়েবে
মুজাদ্দেদের (রহিমাহুল্লাহর) ইন্তেকাল পরবর্তী ফুরফুরা দরবারের কেন্দ্রিয় মুখপত্র
মাসিক নেদায়ে ইসলামের ২০০৭ সালের প্রথমভাগ থেকে পরবর্তী কয়েক সংখ্যায় পীর সাহেবের
স্মৃতিচারণমূলক ধারাবাহিক শোকগাথা প্রবন্ধ নিবন্ধ প্রকাশিত হচ্ছিল। তাতে এক
সংখ্যায় প্রসঙ্গক্রমে লেখা হয়েছিলঃ ফুরফুরা দরবার জ্ঞানের দরবার। কথাটির
বাস্তবতা মূল্যায়নের অপেক্ষা রাখে।
রিমোট কন্ট্রোল এবং
ফুরফুরা দরবার
আজ থেকে
শতবর্ষ আগের কথা। তখন ছিল মান্দাতার আমলের এনালগ যুগ। ফুরফুরার তৎকালীন গদ্দীনসীন
পীর মুজাদ্দেদে জামান (রহিমাহুল্লাহ) কলিকাতা বা আশপাশের কোথাও পাল্কি চড়ে কোথাও
যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একদল মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দৌড়ে আসলেন এবং বললেনঃ ছেলে
একটার গলায় টেংরা মাছ ঢুকেছে। সে মরণাপন্ন প্রায়। কলিকাতার অ্যালোপ্যাথিক
ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়েছিল ছেলেটাকে। কিন্তু ডাক্তার অক্ষমতা প্রকাশ করে রোগীকে
ফেরত দেয়া কালে স্বজনদেরকে এও বলেছিলেন যে, অমুক জায়গায় অমুক এক পীর আছেন। আমরা
রোগীর কোনো ভালাই করতে না পারলে স্বজনরা ঐ পীর সাহেবের দরবারের নিয়ে যায় পীর
সাহেব কেমন ভাবে রোগীকে সারিয়েও তোলেন কখনও কখনও। এই ছেলেটাকে সেই পীর
সাহেবের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। সেমতে ছেলেটাকে আপনার কাছে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা
করছিলাম।
লোকেরা
মুর্মূর্ষ ছেলেটাকে পাল্কির কাছে নিয়ে আসতে চাইলে মুজাদ্দেদে জামান রহঃ বললেন,
থাক, নিয়ে আসতে হবে না। ছেলেটার মুখ হা করে দিন বলেন। পীর সাহেব পাল্কী থেকে না
নেমে বসেই সম্ভবতঃ তর্জনী আঙ্গুলকে বাকা করে আংটা বা বড়শির মত পাকালেন এবং দূর
থেকে ছেলের মুখগহ্বরের দিকে আংটা আকৃতির আঙ্গুলটা টান দেয়া মাত্র রক্তাক্ত টেংরা
মাছটি গলা থেকে রীতিমত বেরিয়ে এলো। বর্তমান ডিজিটাল কোয়ান্টাম বিজ্ঞান যুগে যাকে
বলা হয় রিমোট কন্ট্রোল!
বন্ধ দরজা হাজিপাড়ায় যেভাবে
খুলেছিল!
নায়েবে
মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহ একদা দ্বীনী সফরে চট্টগ্রামের হাজিপাড়ায় অবস্থানরত। রাতে
শোয়ার সময় সব দরজা বন্ধ আছে কিনা জানতে চাইলে বলা হলো। সব দরজা বন্ধ। ঢাকা থেকে
খাদেমের বিলম্বিত আগমনের কারণে পীর সাহেবের একনিষ্ঠ ও একান্ত খাদেমের দায়িত্ব পালন
করছিলেন পীর সাহেবের স্নেহধন্য মুহাম্মাদ ইলিয়াছ হাওলাদার ফরিদপুরী। রাত তখন গভীর।
ইলিয়াস ভাই হঠাৎ স্বপ্নের মতো জীবন্ত দেখলেন ঢাকা থেকে আগত দারুস সালামে পীর
সাহেবের একান্ত খাদেম আমজাদ হোসেন ভাইকে।বিস্মিত কন্ঠে ইলিয়াস ভাইয়ের প্রশ্নঃ
আপনাকে কে দরজা খুলে দিলেন?-এমনতর প্রশ্ন করতে না করতেই ইলিয়াস ভাইকে আমজাদ
ভাই মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায় চুপ থাকতে বল্লেন। ব্যস এতটুকুন।
ফুরফুরা
দরবারের মুজাদ্দেদে জামান রহঃ এর চট্টগ্রাম অন্চলের খলিফা সূফী হযরত মাওলানা
আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহর ওয়াকেয়াঃ
পাকিস্তান
আমলের কথা। তখন পূর্ব বাংলার হজ্ব গমণেচ্ছুরা মানুষ সফিনা-ই-আরব নামের পানির
জাহাজে করে হজ্ব পালন করতে যেতেন। সেবার ফুরফুরার তৎকালীন গদ্দীনসীন পীর
মুজাদ্দেদে জামান রহিমাহুল্লাহর বিশিষ্ট খলিফা চট্টগ্রামের মিরশ্বরাই নিবাসী সূফী
হযরত মাওলানা আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহও নৌপথে হজ্বে যান। হজ্ব পালনকালে
সেখানে এক গরীব হাজ্বী এসে সূফী সাহেবকে নিজের অবস্থা বর্ণনা করে সাহায্যের আবেদন
করেন।
লোকটি
জানান যে, তিনি একজন গরীব মানুষ। কোনো মতে, হজ্বের টাকা জমা করে হজ্বে এসে টাকা-পয়সা
পাসপোর্ট, ফিরতি টিকিট সবই হারিয়ে বসেন। ফিরে যাওয়ার মত আর্থিক সংগতি নেই। এমনকি
বাকী দিন চলার মতও সংগতি নেই। সূফী সাহেব কী বা করতে পারেন। তিনি বাকী দিনগুলে
উনার কাছে থেকে যেতে বললেন এবং একদিন ওই লোকটি দেশে ফিরতে চাইলে তিনি একটা
মোমবাতি হাতে দিয়ে বললেনঃ ঐ যে দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে বাতিটা ভেজায় (জ্বালিয়ে)
আনো। লোকটি যেতে যেতে একবারে তার গাও গ্রামের রান্না ঘরের কাছে এসে পড়েন।
এক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা অনেকটা মডার্ণ কসমোলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মডেলে স্বীকৃত
মহাকর্ষ তরঙ্গের ন্যায় স্থান সংকোচনের ন্যায় বলা যায়। মহাকর্ষ তরঙ্গীয় এই স্থান
সংকোচন হয়তো সেদিন সৌদী আরব চট্টগ্রামের দূরত্বে ঘটেছিল যার ফলে বিনা যানবাহনে
সম্ভবপর হয়েছিল লোকটির ঘরে ফেরা। কিছুক্ষণের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। ঘটনাটি
ফেনী-মীরশরাইয়ে বহুল আলোচিত। একাধিক সূত্রে এ ঘটনার সত্যতা যাচাই করেছি। সর্বশেষ
গত অআগষ্ট, ২০২৩ মাসে সূফী সাহেবের সুযোগ্য নাতি মীরশ্বরাই উপজেলার বারৈয়ারহাটের শান্তিরহাট
মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল হযরত মাওলানা একরামুল হক সাহেবের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে
ঘটনাটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করেন এবং জানান
যে, ঘটনাটি ‘(জীবিতকালে) প্রকাশ না করতে লোকটিকে নিষেধ করেছিলেন। আমিই বললাম,
তাহলে উনার ওয়াকেয়া লেখা বাদ দেব? তিনি বললেন, না। উল্লেখ্য, মুহতামিম সাহেব
একাধিকসূত্রে আমাদের আত্মীয় হন।
আইনস্টাইনের
সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে বলা হয়ঃ স্থান+কাল+ এবং পাত্র আপেক্ষিক। স্থানঃ
কোনো স্থানে যাওয়ার দূরত্ব বেশি মনে হয়, ফিরে আসার দূরত্ব কম মনে হয়। যদিও
দূরত্ব একই। কাল বা সময়ঃ সুখের দিন যত তাড়াতাড়ি যায়, দুঃখের দিন তত ধীর গতির মনে
হয় অথচ উভয়ের জন্য চব্বিশ ঘন্টায় এক দিন।
ইচ্ছা করলে আল্লাহ বন্ধ করে দিতে পারেন
আমাদের চলৎশক্তি, বাকশক্তি
বাকশক্তি যখন আপেক্ষিক!
ফুরফুরার তৎকালীন গদ্দীনসীন পীর মুজাদ্দেদে জামান রহিমাহুল্লাহর মীরশ্বরাই দ্বীনী সফর কালে উপমহাদেশের একজন অন্যতম আলেমে দ্বীন তথায় এক মসজিদের ইমামতির দায়িত্বে ছিলেন। মাগরিবের নামাজে মুকীম –মুসাফির নির্বিশেষে সবার জন্য এক তরিকা অর্থাৎ তিন রাকায়াত। ইমাম সাহেব তাই মুসাফির মুজাদ্দেদে জামান রহিমাহুল্লাহকে দিলেন জামাতে নামাজ পড়াতে। পীর সাহেব নিজে ইমামতি না করে সাধারণ এক মুরীদ মুহেব্বীনকে ইমামতির দায়িত্ব দিলে ঐ ইমাম সাহেব কিছুটা মনোক্ষুন্ন হন মনে মনে। এশার নামাজ মুকিম-মুসাফিরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন। তাই ইমাম সাহেব নিজেই ইমামতির দায়িত্ব নিয়ে নামাজে কেরাত শুরু করলে সুরাহ ফাতিহা কোন প্রকারে তেলোয়াত করলেও কোনো ভাবে পরবর্তী সূরাহ মনে আসছিল না।শেষমেষ কোনো মতে ছোট্ট একটা সুরা মিলিয়ে নামাজ শেষ করলেন। সেদিন বুঝতে পারেন, মানব সক্ষমতা আর ক্ষমতার দৌড় কতটুকুন। পরবর্তিতে তিনি শুধু মুরীদ নন, খলিফাও হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন এই সেই মিরশ্বরাই নিবাসী সূফী হযরত মাওলানা আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহ নায়েবে মুজাদ্দেদ প্রায় ওয়াজে ফখরের সাথে বলতেন আমাদের ফুরফুরা দরবারে মাওলানা আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহর মতো আলেমে দ্বীন ফুরফুরার খলিফা হয়েছেন । একই সাথে ফখরে আউলিয়া ফখরের সাথে প্রায় বলতেনঃ (চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আলেমে দীন) শেরে বাংলা হাশেমী সাহেবের আব্বা মাওলানা আহছান উল্লাহ সাহেব ফুরফুরার খলিফা ছিলেন। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী তরিকতপন্থী সংগঠন বায়তুশ শরফের প্রাণ প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা মীর মুহাম্মাদ আখত্বর সাহেবের পিতা হযরত মাওলানা মীর মুহাম্মাদ মাসউদ রহিমাহুল্লাহও মুজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বকর সিদ্দিকী রহিমুল্লাহর খলিফা ছিলেন।
জানা যায়, মুজাদ্দেদে জামান রহিমুল্লাহর ৫০ হাজারের মত
মুরিদ-মুহেব্বীন খলিফা ছিলেন যাদের অধিকাংশই নোয়াখালীর। পীর সাহেব নোয়াখালী নিয়ে
তাই ফখর করতেন।
নায়েবে মুজাদ্দেদঃ পিএইচডির
যেন জীবন্ত থিসিস!
পীর
সাহেবের ওয়াজের প্রায় কথা ছিল জমিউল ক্বওল প্রকৃতির।অর্থাৎ অল্প কথায় ব্যাপক
বিশ্লেষণ। শুধু ওয়াজে নয়, ভাব ভাবান্তরেও রয়েছে পিএইডির থিসিসের প্রতিপাদ্য। তাই
বলা যায়, নায়েবে মুজাদ্দেদঃ পিএইচডির জীবন্ত থিসিস!
একদা
দ্বীনী সফরে পীর সাহেব চট্টগ্রামের হাজীপাড়া।সময় সম্ভবতঃ বাদ আছর, মাগরিবের
কাছাকাছি। হঠাৎ হাউ মাউ করে উঠলেন এই ভেবে যে, বাপ দাদার আমলে মাওলানা রুহুল আমিন
বশিরহাটি, ডক্টর মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহর মত আলেমে দ্বীন-জ্ঞানী-গুণী বিদ্বানে ভরপুর
ছিল এখন তেমনটি নেই!
এহেন
আহাজারির কিছুদিন পর চট্টগ্রামে বসবাসরত বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন
(পরবর্তীতে বায়তুল মুকাররমের খতিব পদের প্যানেল কমিটির তালিকায় প্রথম এবং
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শরীয়াহ বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান এবং দরবারের
ফুরফুরার প্রধান মুফতি নিযুক্ত হন, তিনি আমাদের ফেনীবাসী, দূর সম্পর্কের আত্মীয়
হন) সংস্পর্শে আসেন এবং ফুরফুরা দরবারে পীর সাহেবের বৈপ্লবিক সংস্কারে ডান হাত
হিসাবে কাজ করে যেমন রসুলুল্লাহ সাঃ এর ডান হাত ছিলেন সিদ্দিকে আকবার
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্বরূপে আবির্ভূত হন ডক্টর আল্লামা
আ.ন.ম.খন্দকার আবদুল্লা জাহাঙ্গির রহিমাহুল্লাহ।
বিশ্ব সৃষ্টি
তত্ত্ব বিষয়ে ফুরফুরা দরবার
ﻻ
ﻴﻌﺰﺐ ﻋﻨﻪ ﻣﺜﻗﺎﻞ ﺬﺭﺓ
ﻓﻰ ﺍﻠﺴﻣﻮﺖ ﻮﻻ ﻓﻰ
ﺍﻻﺭﺽ ﻮﻻ ﺍﺼﻐﺭﻤﻦ ﺬﻠﻚ
ﻮﻻ ﺍﻜﺑﺮﺍﻻ ﻓﻰ ﻜﺘﺐ
ﻤﺑﻴﻦ অর্থঃ “তিনি অদৃশ্য সম্বন্ধে
পরিজ্ঞাত, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছু কিংবা তদপেক্ষা ক্ষুদ্র অথবা
বৃহৎ কিছু যাঁর অগোচর নয়; ওর প্রত্যেকটি সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ।”
(সূরাহ্ সাবা, আয়াতঃ ৩)।
“বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের
অনুসারীগণ পরমাণুবাদের সমর্থক” (সূত্রঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদাঃ
ফতেহ্ আলী মোহাম্মাদ আয়াতুল্লাহ সিদ্দিকী আল্ কোরাইশী, নেদায়ে ইসলাম, বর্ষঃ ৭৩,
সংখ্যা-৬, মহররম-সফর ১৪৩৫ হিঃ ডিসেম্ববর-২০১৩, পৃষ্ঠা-৪০)।
“পবিত্র কুরআনের মতে, বিশ্ব জগৎ আদিতে ছিল একটি বিশালকার একক
পিন্ডাকৃতির বস্তু-বস্তু-সুক্ষ্ণাতি সুক্ষ্ণ অণু পরমাণু বিশিষ্ট গোলক।”(সূত্র:
কম্পিউটার ও আল-কুরআন, কুরআন-হাদিস রিসার্চ সেন্টার, ইশায়াতে ইসলাম কুতুবখানা,
দারুস্ সালাম, ঢাকা)।
উল্লেখ্য,
মডার্ণ কসমোলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড থিওরিমতে, মহাবিশ্বের সূচনা হয় বিগ ব্যাং (Big Bang) আর যে বস্তুর বিস্ফোরণে বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত
হয় তার বৈজ্ঞানিক উচ্চশক্তির বিকিরণ (Highest Energetic Radiation)।
“বিশ্ব বলিতে পূর্বে কিছুই ছিলনা” । (ফাওয়ায়ে সিদ্দিকীন, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৭৪, কুরআন হাদীস রিসার্চ সেন্টার (ফুরফুরা দরবারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান), প্রকাশনায়ঃ ইশায়াতে ইসলাম, কুতুবখানা, মার্কাজে ইশায়াতে ইসলাম, ২/২, দারুস সালাম, মীরপুর, ঢাকা-১২১৬), প্রকাশকালঃ সাবান-১৪২০হিজরি, নভে¤বর ১৯৯৯ ঈসায “গোটা সৃষ্টিকূলের মধ্যে আল্লাহ তাআলার কুন ফা ইয়া কুনের তাজাল্লীই বিরাজমান” (প্রাগুক্ত পৃঃ ৩৮)।
“আসমান-যমীন, আরশ কুরসী
লাওহ-কলম, গাছ পালা, বৃক্ষ লতা, এক কথায় দৃশ্যমান ও অদৃশ্য যত কিছু রয়েছে “সব
কিছুই সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ” (প্রাগুক্ত পৃঃ ৩৩)। “আল্লাহ তায়ালা সমস্ত
বস্তুকে পূর্ব উপাদান ব্যতীত সৃষ্টি করেছেন” (প্রাগুক্ত পৃঃ ১৬২)।
(আল্লাহপাক) “বিশেষ
মুছলেহাতের কারণে প্রথমে বিনা উপাদানে উপকরণে সৃষ্টি করে, সেই সব উপাদানের মাধ্যমে
বিভিন্ন বস্তু সৃষ্টি করার ব্যবস্থা চালু করেছেন”(সূত্রঃ ফাতাওয়ায়ে সিদ্দিকীন,
১-৪ খন্ড, পৃষ্ঠা ১৬৩)।
বয়ানুল কোরআনে হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) বলেনঃ
আমার মনে হয় যে, প্রথমে পৃথিবীর উপকরণ সৃজিত হয়েছে। এমতাবস্থায় ধুম্রকুঞ্জ এর
আকারে আকাশের উপকরণ নির্মিত হয়েছে। এরপর পৃথিবীকে বর্তমান আকারে বিস্তৃত করা
হয়েছে এবং এতে পর্বতমালা, বৃক্ষ ইত্যাদি সৃষ্টি করা হয়েছে। এরপর আকাশের তরল
ধুম্রকুঞ্জ এর উপকরণকে সপ্ত আকাশে পরিণত করা হয়েছে। (পবিত্র কোরআনুল করীমঃ তফসীর
মাআরেফুল ক্বোরআন, পৃষ্ঠাঃ ১১৯
(২) পবিত্র কুরআনের মতে, বিশ্ব জগৎ আদিতে ছিল একটি
বিশালকার একক পিন্ডাকৃতির বস্তু-সুক্ষ্ণাতি সুক্ষ্ণ অণু-পরমাণু বিশিষ্ট গোলক-যাকে
দুখান বলা হয়েছে। এই দুখান হলো স্তর বিশিষ্ট এমন এক গ্যাস জাতীয় পদার্থ যা
স্থিরভাবে ঝুলানো এবং যার মধ্যে বস্তু-সুক্ষ্ণাতি সুক্ষ্ণ অণু কণা উচ্চতর বা
নিম্নতর চাপের দরুণ কখনও কঠিন, এমনকি কখনও বা তরল অবস্থায় বিদ্যমান ছিল। মহাকালের
বিভিন্ন পর্যায়ে সেই মহাপিন্ডটি খন্ড বিখন্ড হয়ে তৈরী হয়েছে এক একটি নীহারিকা
বা ছায়াপথ এবং সেই সব ছায়াপথ সূর্যের মত কোটি কোটি নক্ষত্র নিয়ে একটা একটা পৃথক
জগৎ রূপে মহাশূণ্যে সঞ্চারমান। আদি গ্যাসীয় পিন্ডের খন্ড বিখন্ড হয়ে পড়া
বিশালকার টুকরাগুলি কালক্রমে আবার একীভুত হয়ে সূর্যের মত এক একটি নক্ষত্র সৃষ্টি
করেছে। ...... বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব সৃষ্টির আদিতে ছিল ‘নীহারিকা’ বা ‘নেবুলা’
যা মূলতঃ গ্যাসীয় ধুম্রপিন্ড এর অনুরূপ। পবিত্র কুরআনও বলছেন, বিশ্ব সৃষ্টির আদি
পর্যায়ে ছিল একটি একীভুত দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের
বক্তব্য আধুনিক বিজ্ঞানের আবিস্কৃত তথ্যের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ।” {সূত্র:
কম্পিউটার ও আল-কুরআন, পৃষ্ঠা ৫৯ ও ৬০ : ডাঃ খন্দকার আবদুল মান্নান, এম.বি.বি.এস
(ঢাকা), কুরআন-হাদিস রিসার্চ সেন্টার(ফুরফুরা দরবারের গবেষণা প্রতিষ্ঠান),
ইশায়াতে ইসলাম কুতুবখানা, দারুস সালাম, মীরপুর, ঢাকা-১২১৬}
অসুস্থতাবস্থায় পীর সাহেবকে যেভাবে দেখলাম
অসুস্থতার এই সংবাদের পাশাপাশি এও বলা হয়, পীর সাহেবকে
দেখা সাক্ষাতে ডাক্তারী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনেক দিন পর জানতে পারি যে, পীর সাহেব দারুস
সালামে আছেন এবং দেখা-সাক্ষাৎতে বাধা নেই। এ সংবাদ শোনার পর একটা সুযোগ আল্লাহর রহমতে
এসে যায় তা হচ্ছে সরকারী ছুটির পাশাপাশি মাসিক বেতন পাওয়া। দারুত তাওহীদের জন্য একজন
দাতা বেশ কিছু টাকা দেয়ার যে কথা ছিল শেখ সাহেবকে নিয়ে তা দিনে উসুল করে রাতেই তূর্ণা
নিশিথায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। দারুস সালাম পৌঁছে দেখি, ওয়াজ স্টেজের কাছাকাছি
জায়গায় দাঁড়ানো চোখে-মুখে নূরে নুরান্বিত এক জ্যোতির্ময় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে যেন হাসছেন। এশরাকের নামায কমলাপুর রেল স্টেশন
মসজিদে আদায় করলেও খুতখুতে মনের কারণে দারুস সালাম গিয়ে আবার আদায় করার খেয়াল চাপলে
পীর সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ না করে সোজা দারুস সালাম মার্কাযের মসজিদে ঢুকে গেলাম। ততক্ষণে
পীর সাহেব চলে গেলেন অন্দরমহলে।
তখন রোজার মাস ছিল। তাই কতক্ষণ কুতুবখানায় ঘুরে ফিরে
কুতুবখানার উপরে উঠে আবদু্ল্লাহ ভাই নাকি আনোয়ার ভাই উনার সাথে কথা বলতে বলতে মনে
হয় এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ি। রেস্টের পর নীচে নেমে দেখি পীর সাহেব নিত্যদিন কুতুবখানার
পার্শ্বে বসে দর্শনার্থীদের দর্শন দিতে বসে থাকতেন অআজ সে একই জায়গায় বসে আছেন। তবে
নির্বাক। চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসার সময় একটা
দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার অগ্রগতি পীর সাহেবকে জানানোর একান্ত ইচ্ছা থাকলেও এই নির্বাকতার
কারণে সে ইচ্ছাটাও উবে যায়। তবে কলকাতার চকচাদনী এলাকা থেকে এক দর্শনার্থী দর্শন করতে
গিয়ে পীর সাহেবের সাথে আলাপে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কলকাতার ঐ এলাকার কিছু দ্বীনী
ব্যাপার নিয়ে পীর সাহেবের সামনে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং লক্ষ্য করলাম পীর সাহেব
তা মনোযোগ সহকারে শুনছেন তাতে নীরবে সম্মতিও প্রকাশ পাচ্ছিল দেখে বুঝলাম নির্বাক
হলেও পীর সাহেব অচেতন নন। এরপর তাই আমি পীর সাহেবকে আমার কাজের অগ্রগতি শোনাচ্ছিলাম
আর পীর সাহেব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন মনে হচ্ছিল। কিন্ত একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না।
এর বেশ কিছুদিন পর বার্ষিক ইসালে সওয়াব মাহফিল।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো দারুস সালামে বার্ষিক ইসালে সওয়াবের
মাহফিল-২০০৬-কে কেন্দ্র করে পোষ্টার ব্যানারে লেখা ছিল, মাহফিল পরিচালনা করবেন (অর্থাৎ
ওয়াজ করবেন গদ্দীনসীন পীর সাহেব)। প্রশ্ন জাগেঃ হাউ ইট পসিবল? কৌতুহলী মন নিয়ে মাগরিব
পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখলাম সত্যি সত্যি পীর সাহেব যথারীতি স্টেজে উঠেছেন এবং ভাঙা
ভাঙা শব্দে ওয়াজ করছেন তবে তা স্পষ্ট। স্টেজ থেকে নামার পর আবারও নির্বাক। এ এক
অপূর্ব আয়াত (নিদর্শন বা কারামাত) বটে!
তাওহীদঃ
নায়েবে মুজাদ্দেদ, শেরে ফুরফুরার চট্টগ্রামে সর্বশেষ দ্বীনী সফরের সর্বশেষ কথা
চট্টগ্রামে জীবনের সর্বশেষ দ্বীনী মাহফিলের শেষে রাত প্রায় গভীরে
পীর সাহেবের গাড়ী ঢাকামুখী অবস্থায় অর্থাৎ যাত্রা শুরুর পূর্ব মুহুর্তে সর্বশেষ মূল
যে শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন সে শব্দটি হচ্ছে ছিল “তাওহীদ”। শব্দটিকে বলা যায় দ্বীন
আল ইসলামের ডিএনএ। সর্বশেষ দোয়ার মাহফিল
শেষে ফিরতি পথে গাড়িতে উপবিষ্ট স্বীয় মুরিদ-মুহেব্বীনদের সাথে যে মূল বিষয়ের উপর পীর
সাহেব আলোচনা করছিলেন তা-ও ছিল “তাওহীদ”।
উল্লেখ্য, পীর সাহেব প্রায় ওয়াজে ফরমাতেনঃ “তাওহীদ কি আমানত, ছিনো মে হে হামারে। আছান নেহী মিটানা নামও নিশান হামারা”। ২০০৫ এই চট্টগ্রামেই তাওহীদের নামে পীর সাহেব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “দারুত তাওহীদ জামে মসজিদ”। আজ তা-ই ছেড়ে যাচ্ছেন! এর পর যথা সময়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়া হলো। কে জানতেন: الوداع আল উইদা! আল উইদা!! উইদা!!!
Comments
Post a Comment