শান্তিবাদ ইসলামঃ জানি এবং মানি
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ / বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
শান্তিবাদ ইসলামঃ জানি এবং মানি
The Pacifism Deen Al Islam: know and obey.
-শেখ
মুহাম্মাদ রমজান হোসেন
١٩- إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّـهِ الْإِسْلَامُ ۗ
“নি:সন্দেহে আল্লাহর
নিকট গ্রহণযোগ্য দীন একমাত্র ইসলাম”।
(সূরাহ আ-লি ইমরান, আয়াতঃ ১৯, তাফসীরে মাআ'রেফুল কুরআন,
দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন
প্রকাশনা নং-৬৮৬/১০)
ٱلۡيَوۡمَ أَكۡمَلۡتُ لَكُمۡ دِينَكُمۡ وَأَتۡمَمۡتُ عَلَيۡكُمۡ نِعۡمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا﴾ [سورة المائدة
“আজ আমি তোমাদের
জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম
এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দীন হিসাবে পছন্দ করলাম।” (সূরাহ আল-মায়েদা, আয়াত: ৩, তাফসীরে মাআ'রেফুল কুরআন,
তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশনা নং- ৬৮৭/৯)
وَمَن يَبۡتَغِ غَيۡرَ ٱلۡإِسۡلَٰمِ دِينٗا فَلَن يُقۡبَلَ مِنۡهُ وَهُوَ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٨٥﴾ [سورة آل عمران
“ যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম তালাশ
করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ক্ষতিগ্রস্থ”।
(সূরাহ আ-লি ইমরান, আয়াত: ৮৫, তাফসীরে মাআ'রেফুল কুরআন,
দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশনা নং-৬৮৬/১০)।
ইসলাম শব্দের মর্মার্থঃ
সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়ালার অন্যতম الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ (আসমাউল হুসনা) বা সুন্দর সুন্দর নামাবলীকে বলা হয়صفات أسموس (আসমাউস সিফাত) বা গুণবাচক নামাবলী- যার অন্যতম প্রধান গুণগত নাম হচ্ছে: السَّلَامُ (আস সালাম) অর্থাৎ শান্তিময়। আর এই السَّلَامُ (আস সালাম) অর্থাৎ শান্তি-প্রশান্তি (Peace-Pacific)শব্দ থেকে الاسلام (আল ইসলাম) অর্থাৎ শান্তিবাদ (Pacifist) শব্দের বুৎপত্তি।
অন্যদিকে إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُ [سُورَةُ آلِ عِمۡرَان] “নিঃসন্দেহে শান্তিময় [ السَّلَامُ (আস সালাম)] আল্লাহ তায়ালার নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য শান্তিবাদ (Pacifism) তথা দীন আল ইসলামে ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً [উদখুলু ফিস সিলমি কাফফাহ] অর্থাৎ পরিপূর্ণভাবে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাওয়া রাহমান-এর বান্দা- যাঁর ব্যক্তি সত্বার নামঃ مسلم (মুসলিম) অর্থাৎ শান্তিবাদী (Pacifist) মুসলমান-যাঁরা যুগে যুগে ইসলামের জীবন্ত শান্তির প্রতীক হয়ে জমীনের উপর বিনয়ীভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা বলে তখন তারা বলে ‘সালাম’ যাঁদের মধ্যে রয়েছেন নবিয়্যিন, সিদ্দিক্বীন, শুহাদায়ে স্বলিহিন, আইম্মায়ি মুস্তাহিদীন, মুফাসসিরীন, মুহাদ্দিসীন, ওলামায়ি ক্বিরাম, বুজুর্গানে দীন যাঁরা أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ (নিয়ামাত প্রাপ্ত) এবং যাঁরা ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন ٱلصِّرَٲطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَِ সত্য সঠিক শান্তিবাদ ইসলামের মতে পথে।
আল কুরআনের আলোকে সালাম
٨٦- وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ۗ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا ◯
(Sūrah 4: Nisāa, Ayat: 86). Verses 176 — Madani; Revealed at Medina — Sections 24, Translation by Abdullah Yusuf Ali)
আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,‘‘যখন কেউ তোমাদের সালাম করে, তখন তোমরা তাকে তদপেক্ষাও উত্তম পন্থায় সালাম (জবাব) দিও কিংবা (অন্ততপক্ষে) সেই শব্দেই তার জবাব দিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুর হিসাব রাখেন। (সূরাহ আন নিসা, আয়াতঃ ৮৬)
٨٦- وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ۗ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا ◯
َ فَإِذَا دَخَلْتُمْ بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَىٰ أَنْفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِنْ عِنْدِ اللَّـهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ ◯
২) জান্নাতের রক্ষীরা জান্নাতীদেরকে "সালামুন আলাইকুম" বলে অভিবাদন জানাবে (সুরা যুমারঃ আয়াতঃ ৩৯:৭৩)।
৩) "সালামুন আলাইকুম" (সুরা আ'রাফঃ আয়াতঃ ৭:৪৬)।
৪) "সালামুন আলাইকুম" (সুরা রা'দঃ আয়াতঃ ১৩:২৪)।
৫) "সালামুন আলাইকুম" (সুরা আন-নাহলঃ আয়াতঃ ১৬:৩২)।
৬) "সালামু আলাইকুম" (সুরা আল-আহযাবঃ আয়াতঃ ৩৩:৪৪)।
৭) আল্লাহ নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে সালামের উত্তর শিখিয়েছেন (সুরা নিসাঃ আয়াতঃ ৪:৮৬)।
মহান আল্লাহ বলেছেনঃ
"আর যখন তারা আপনার কাছে আসবে যারা আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করে, তখন আপনি বলে দিনঃ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের পালনকর্তা রহমত করা নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন যে, তোমাদের মধ্যে যে কেউ অজ্ঞতাবশতঃ কোন মন্দ কাজ করে, অনন্তর এরপরে তওবা করে নেয় এবং সৎ হয়ে যায়, তবে তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, করুণাময়।" (সুরা আল-আনআমঃ আয়াতঃ ৬:৫৪)।
মহান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
"যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করত তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌছাবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর।" (সুরা যুমারঃ আয়াতঃ ৩৯:৭৩)।
মহান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
"উভয়ের মাঝখানে একটি প্রাচীর থাকবে এবং আরাফের উপরে অনেক লোক থাকবে। তারা প্রত্যেককে তার চিহ্ন দ্বারা চিনে নেবে। তারা জান্নাতীদেরকে ডেকে বলবেঃ তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তারা তখনও জান্নাতে প্রবেশ করবে না, কিন্তু প্রবেশ করার ব্যাপারে আগ্রহী হবে।" (সুরা আ'রাফঃ আয়াতঃ ৭:৪৬)।
মহান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
"বলবেঃ তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিমান -গৃহ কতই না চমৎকার।" (সুরা রা'দঃ আয়াতঃ ১৩:২৪)।
মহান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
"ফেরেশতা যাদের জান কবজ করেন তাদের পবিত্র থাকা অবস্থায়। ফেরেশতারা বলেঃ তোমাদের প্রতি শাস্তি বর্ষিত হোক। তোমরা যা করতে, তার প্রতিদানে জান্নাতে প্রবেশ কর।" (সুরা আন-নাহলঃ আয়াতঃ ১৬:৩২)।
মহান আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
"যেদিন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে; সেদিন তাদের অভিবাদন হবে সালাম। তিনি তাদের জন্যে সম্মানজনক পুরস্কার প্রস্তুত রেখেছেন।"
আয়াতে
সালাম
سَلَامٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ ◯
করুণাময় পালনকর্তার
পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হবে সালাম। (সূরাহ ইয়াসীন, আয়াতঃ ৫৮, তাফসীরে মাআরেফুল কোরআন,
৭ম খন্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৩৮৫)
“Peace!”—a Word (of salutation) from a Lord
Most Merciful!
[সালামুন কাওলাম মির রব্বির রহীম:(ইয়াসিনঃ ৫৮]
٧٩- سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ ◯2
“Peace and salutation to
Noah Among the nations !”
বিশ্ববাসীর মধ্যে
নূহের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক (সূরাহ সাফফাত, আয়াত ৭৯, প্রাগুক্ত ৭ম খন্ড,
পৃষ্ঠা ৪৩০)
[সালামুন আ'লা নূহিন ফিল আ'লামীন:(সাফফাতঃ ৭৯)]
١٠٩- سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ ◯
3 “Peace and salutation
To Abraham!”
ইবরাহীমের প্রতি
সালাম বর্ষিত হোক (সূরাহ সাফফাত, আয়াত ১০৯, প্রাগুক্ত ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৩)
[সালামুন আ'লা ইব্রাহীম:(সাফফাতঃ ১০৯)]
١٢٠- سَلَامٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُونَ ◯4
“Peace and salutation To
Moses and Aaron !”
মূসা ও হারুণের
প্রতি প্রতি সালাম বর্ষিত হোক (সূরাহ সাফফাত, আয়াত ১২০, প্রাগুক্ত ৭ম খন্ড,
পৃষ্ঠা ৪৫৪)
[সালামুন আ'লা মূসা ওয়া হারুন:(সাফফাতঃ ১২০)]
١٣٠- سَلَامٌ عَلَىٰ إِلْ يَاسِينَ ◯5
“Peace and salutation To
such as Elias!
ইলিয়াসের প্রতি
সালাম বর্ষিত হোক (সূরাহ সাফফাত, আয়াত ১৩০, প্রাগুক্ত ৭ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪৫৬)
[সালামুন আ'লা ইলইয়াসিন:(সাফফাতঃ ১৩০)]
سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ ◯
◯6 “Peace be upon you! Well have ye done! Enter ye here, To dwell therein.”
তোমাদের প্রতি সালাম,
তোমরা সুখে থাক, অতপর সদা সর্বদা বসবাসের জন্য তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরাহ যুমার, আয়াত ৭৩, প্রাগুক্ত ৭ম খন্ড,
পৃষ্ঠা ৫৬৫)
[সালামুন আ'লাইকুম ত্বিবতুম ফাদখুলুহা খলিদীন:(যুমার ৭৩)]
٥- سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْر7
এটা
নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। (সূরাহ ক্বদর, আয়াতঃ ৫, প্রাগুক্ত
৮ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৮৩০)
[সালামুন হিয়া হাত্তা মাত্বলা'ইল ফাজর্:(কদরঃ
৫)]
Peace! This Until the rise of Morn!
আয়াতে সাকিনা
(Surah Taubah, Ayat: 26)
فَأَنزَلَ اللَّـهُ سَكِينَتَهُ عَلَيْهِ وَأَيَّدَهُ بِجُنُودٍ لَّمْ تَرَوْهَا
Then Allah sent down his peace upon him and strengthened him with forces which ye saw not
(Surah Taubah, Ayat: 40)
Allah’s Good Pleasure Was on the Believers When they swore Fealty To thee under the Tree : He knew what was In their hearts, and He Sent down Tranquillity To them ; and He rewarded Them with a speedy Victory ; (Surah Fatah, Ayat:18).
فَأَنزَلَ اللَّـهُ سَكِينَتَهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ
Allah sent down His Tranquillity To His Apostle and to The Believers
(Surah Fatah, Ayat: 26)
youtu.be/9sjloF7V9Fg
আল হাদীসের আলোকে সালাম
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,«لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا، ولا تؤمنوا حتى تحابوا، ألا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم» رواه مسلم“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণপর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আর আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলায়ে দেব যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালো বাসবে? এ কথার উত্তরে তিনি বলেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর”। [বর্ণনায় মুসলিম]
“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, হে মানব সকল! তোমরা সালামের প্রসার কর, মানুষকে খানা খাওয়াও, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখ, আর মানুষ যখন ঘুমায়, তখন তুমি সালাত আদায় কর। তাহলে তুমি নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। বর্ণনায় তিরমিযী । ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান ও সহীহ।
.“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ আমাদের সাতটি বিষয়ে নির্দেশ দেন: রুগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযার সালাতে অংশ গ্রহণ করা, হাঁচির উত্তর দেয়া, দুর্বলদের সাহায্য করা, অত্যাচারিত লোককে সহযোগিতা করা, সালামের প্রসার করা, শপথকারীকে মুক্ত করা” । বুখারি ও মুসলিম।
আবু ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,سمعت رسول الله e قال: «اذهب فسلم علىأولئك -نفر من الملائكة جلوس- فاستمع ما يحيونك، فإنها تحيتك وتحية ذريتك» فقال: السلام عليكم، فقالوا: السلام عليك ورحمة الله، فزاده ورحمة الله متفق عليه .“আল্লাহ্ তা‘আলা আদম আ. কে সৃষ্টি করার পর বললেন, যাও! তুমি ঐ সব ফেরেশতার জামাত যারা বসে আছে তাদের সালাম দাও। তারা তোমাকে কি উত্তর দেয়, তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ কর। কারণ, তারা যা উত্তর দেবে তা হবে তোমার ও তোমার বংশধরদের সালাম। তখন আদম আ. গিয়ে ফেরেশতাদের বলল,السلام عليكم، অর্থাৎ ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক’ এর উত্তরে তারা বলল,السلام عليك ورحمة الله‘তোমার উপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক’ তারা উত্তর দিতে গিয়ে আল্লাহর রহমত শব্দটিকে বাড়াল” । [বুখারি ও মুসলিম]
আবু উমামা ছুদাই ইব্ন ‘আজলান আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,«إن أولى الناس بالله من بدأهم بالسلام» رواه أبو داود بإسناد جيد.“আল্লাহর নিকট সর্ব উত্তম ব্যক্তি সে, যে মানুষকে আগেই সালাম দেয়”। বর্ণনায় আবু-দাউদ উত্তম সনদে।
ইমাম তিরমিযী আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,قيل: يا رسول الله الرجلان يلتقيان، أيهما يبدأ بالسلام؟ قال: «أولاهما بالله تعالى». قال الترمذي: هذا حديث حسن.“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! দুইজন ব্যক্তির মধ্যে যখন সাক্ষাত হবে, তখন কোন লোকটি প্রথমে সালাম দেবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ‘তাদের দুই জনের মধ্যে যে আল্লাহর অধিক কাছের লোক সে আগে সালাম দেবে’।ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত,হুজুর ( সা.) এর দরবারে এক লোক এসে: السلام عليكم (আসসালামু আলাইকুম) বলে বসে পড়ল। হুজুর ( সা.) তার উত্তর দিয়ে বললেন, সে দশটি নেকি পেয়েছে। তারপর আরেকজন এসে:السلام عليكم ورحمة الله (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ) বলে বসে গেল। হুজুর ( সা.) তার উত্তর দিয়ে বললেন, সে বিশটি নেকি পেয়েছে। অতঃপর আরেকজন লোক এসে: ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ وَبَرَكَاتُهُ (আসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু) পর্যন্ত বলে বসে গেল। রাসূল(সা.) তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে ত্রিশ নেকি পেয়েছে। –আবু দাউদ ৫১৯৫, তিরমিজি ২৬৯০।
১) সালামঃ ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ
(আসসালা-মু‘আলাইকুম)
অর্থঃ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক
সালামের জবাব: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ
(ওয়া ‘আলাইকুমুস সালা-ম)
অর্থঃ
২) সালাম: ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ
(আসসালা-মু‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ)
আপনার উপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
৩) সালাম: وَبَرَكَاتُهُٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ
(আসসালা-মু‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকা-তুহ)
সালামের জবাব: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
(ওয়া ‘আলাইকুমুস সালা-ম, ওয়া রহমাতুল্ল-হি, ওয়া বারাকা-তুহ্)
অর্থঃ “আপনার উপরও শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।”
অর্থাৎ কেহ যদি "আসসালা-মু ‘আলাইকুম" বলে সালা-ম দেন, তাঁর জবাবে বলতে হবে : "ওয়া ‘আলাইকুমুস সালা-ম ওয়া রহমাতুল্ল-হ" অথবা অন্ততপক্ক্ষে "ওয়া ‘আলাইকুমুস সালা-ম" বলতে হবে ।
আর কেউ যদি "আসসালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্ল-হ" বলে সালাম দেন, তাহলে জবাব হবেঃ : ‘ওয়া ‘আলাইকুমুস সালা-ম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়াবারাকা-তুহ’ অথবা অন্তত "ওয়া ‘আলাইকুমুস সালা-ম ওয়া রহমাতুল্ল-হ" বলা জরুরী।
He) Above the partners They attribute to Him.
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতাস সালা-ম, ওয়ামিনকাস্ সালা-ম তাবা-রকতা ইয়া-জ্বাল জালা-লি ওয়ালইকর-ম”।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনিই সালাম (শান্তি), আপনার থেকেই শান্তি, হে মহাসন্মানের অধিকারী ও মর্যাদা প্রদানের অধিকারী, আপনি বরকতময়।
“Allahumma antas salam wa minkas salam tabrakta Ya dhal Jalali wal ikram”
Translation
O Allah, You are peace, peace comes from You. Blessed are You O Possessor of Glory and Honour ((Sahih Muslim, Hadith: 591)
সালামের ইতিকথা
►ইসলামে সালামের অর্থ হল, নিরাপত্তা ও শান্তি। অর্থাৎ, যখন কোন মুমিন-মুসলিম অপর কোন মুমিন-মুসলিমের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ঘটলে একথা বলেনঃ আসসালামু আলাইকুম অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এ কথার প্রত্ত্যুতর পবিত্র কুরআনের বর্ণনামতে হবেঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ কিংবা একটু বাড়িয়ে হবেঃ ব্যক্তিকে সালাম দিলে এবং সে তোমার সালামের উত্তর দিল, এর অর্থ হল, সে তোমার জিম্মাদারী ও নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত হল। তুমি এখন তার কোন ক্ষতি করবে না এবং তাকে কোন বিপদে ঠেলে দেবে না।
► ‘আস-সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ হতে একটি অন্যতম নাম।
►এটি জান্নাতের নামসমূহ হতে একটি জান্নাতের নাম। জান্নাতিরা জান্নাতে পরস্পরকে সালাম দ্বারা সম্বোধন করবেন এবং তাদের পরস্পরের শুভেচ্ছা বিনিময় হবে ‘সালাম’।
স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা জান্নাতিদেরকে সালাম সম্ভাষণ করবেন মর্মে পবিত্র কুরআনে ইঙ্গিত রয়েছেঃ সালামুন কাওলাম মির রব্বির রহীম।
► “আল্লাহ্ তা‘আলা যখন আদম ‘আলাইহিমুস সালামকে সৃষ্টি করার পর তাঁকে নির্দেশ দেন, যাও, ঐ সব ফেরেশতাদের সালাম দাও যারা বসে আছে। তারপর দেখ, তারা তোমাকে কি উত্তর দেয়। তারা যে উত্তর দেবে তা হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের অভিবাদন ও সম্ভাষণ। তারপর তিনি (আদম‘আলাইহিমুস সালাম) ফেরেশতাদের নিকট গিয়ে বললেনঃ عليكم، ,السلام তার এ কথার উত্তরে তারা (ফেরেশতারা) বলল, وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ তারা وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ শব্দটিকে বাড়াল”।
উল্লেখ্য, ইয়াহূদী ও খৃষ্টানদের অভিবাদন মুসলিমদের অভিবাদনের চেয়ে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। ইয়াহূদীদের অভিবাদন হল, হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করা আর খৃষ্টানদের অভিবাদন হল, হাতের তালু দিয়ে ইশারা করা। আর মুসলমানের অভিবাদন হচ্ছে সালাম সম্ভাষণ দ্বারা।
সালামের ফযিলত
সালামঃ আল্লাহর
নিকট উত্তম ব্যক্তি হওয়ার মাধ্যম
►সালামের উদ্দেশ্য হল, একজন মুসলিমের জন্য শান্তি, রহমত ও বরকতের
জন্য দো‘আ করা।
► মহান আল্লাহর পবিত্র গুণবাচক নামাবলীর মধ্যে অন্যতম প্রধান নামটি হচ্ছে সালাম। নামটি প্রচার করার ফযিলত লাভ এবং তা প্রচার করার মাধ্যমে বিশেষ মর্তবা অর্জন করা:
► আল্লামা বাযযার ও তাবরানী উভয়ে শক্তিশালী সনদে আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ হতে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’
বলেন,السلام اسم من أسماء الله تعالى وضعه في الأرض فأفشوه بينكم
অর্থাৎالسلام (শান্তি) সর্বশক্তিমান আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম যা তিনি পৃথিবীতে স্থাপন করেছিলেন এবং তিনি তা তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
►সালামের প্রসার করা, মাগফিরাত ও ক্ষমা লাভ করার কারণ।আল্লামা তাবরানী আবু সারহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বিশুদ্ধ সনদে হাদিস বর্ণনা করে বলেন,"قلت يا رسول الله دلني على عمل يدخلني الجنة، قال: «إن من موجبات المغفرة بذل السلام وحسن الكلام».“আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমল বাতলেয়ে দাও, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ক্ষমা লাভের কারণ হল, সালামের প্রসার ও সুন্দর কথা”।
►.সালাম মুসলিম ভাইদের মধ্যে পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি করে।
শান্তিসূচক অভিবাদন বা দোয়ার নাম
পৃথিবী যেমন ফুল শয্যা নয়, তেমনি মানব জীবনও ফুল শয্যা নয় । বরং জীবন এক বিপদসঙ্কুল সত্বার নাম। চতুর্মুখী অশান্তি, বিপদাপদে পৃথিবীবাসী আক্রান্ত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে ইঙ্গিত করে ফরমানঃ
0- ١- وَالْعَصْرِ ◯
1- ٢- إِنَّ الْإِنسَانَ
لَفِي خُسْرٍ ◯
2- ১) কসম যুগের ২)নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত;
0-
2- ৩) কিন্তু তারা
নয়, যার বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎ কর্ম করে।
আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র শান্তিদাতা
এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ফরমান
0-
Translation: Allah is He, than Whom There is no other Lord;— The Sovereign, the Holy One, the Source of Peace (and Perfection), The Guardian of Faith, The Preserver of Safety, The Exalted in Might, The Irresistible, the Supreme : Glory to Allah ! (High is
সালামের ভুল উচ্চারণঃ
সালামের উচ্চারণে আমরা সচরাচর যে
ভুলগুলো করে থাকি তা হল- ১. স্লামালাইকুম ২. সালামালাইকুম, ৩. আস্লামালাইকুম,
৪. আস্লাআলাইকুম, ৫. সেলামালাইকুম,
৬. ইস্লামালাইকুম, ৭. অয়ালাইকুম ইত্যাদি
বলা। অথচ,এই শব্দগুলো বলার কারণে সালামের অর্থ সহীহ-শুদ্ধ থাকেনা।
সালামের সহীহ্ উচ্চারণঃ
১) সালামঃ ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ
(আস্+সালা--মু+‘আলাইকুম)
জবাব: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ
(ওয়া+‘আলাইকুমুস্+সালা--ম)
২) সালাম: ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ
(আস+সালা--মু+‘আলাইকুম+ওয়া+রহমাতুল্ল--হ)
জবাব: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
(ওয়া+‘আলাইকুমুস+সালা--ম+ওয়া+রহমাতুল্ল-হ)
৩) সালাম: وَبَرَكَاتُهُٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ
(আস+সালা-মু+‘আলাইকুম+ওয়া+রহমাতুল্ল--হি+ওয়া+বারাকা-তুহ)
জবাব: وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
(ওয়া+‘আলাইকুমুস+সালা-ম+ওয়া+রহমাতুল্ল-হি+ওয়া+বারাকা-তুহ্)
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন: পাঁচটি জিনিস একজন মুসলিম ব্যক্তির উপর অপর ভাইয়ের জন্য করা ওয়াজিব।
যথা:
- ১) সালামে জবাব দেওয়া,
- (২) হাঁচির জবাব দেয়া (ইয়ার হামুকাল্লাহ বলা)
- (৩) দাওয়াত কবূল করা
- (৪) রোগীর দেখা-শুনা করা
- (৫) জানাজায় উপস্থিত হওয়া। (মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ﺇﺫﺍ ﺳﻠﻢ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏﻓﻘﻮﻟﻮﺍ ﻭﻋﻠﻴﻜﻢ ‘আহলে কিতাবগণ তোমাদের সালাম দিলে, তার উত্তরে তোমরা শুধু ‘অয়া আলাইকুম’ বলবে।’ (বুখারি ৬২৫৮ মুসলিম ২১৬৭)
►‘আস-সালাম’ আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ হতে একটি অন্যতম নাম।
►এটি জান্নাতের নামসমূহ হতে একটি জান্নাতের নাম। জান্নাতিরা জান্নাতে পরস্পরকে সালাম দ্বারা সম্বোধন করবেন এবং তাদের পরস্পরের শুভেচ্ছা বিনিময় হবে ‘সালাম’।
সালামের উত্তর দেয়ার শরয়ী
বিধান:
►সালামের
উত্তর দেয়া ওয়াজিব।
وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٖ فَحَيُّواْ بِأَحۡسَنَ مِنۡهَآ أَوۡ رُدُّوهَآۗ ٨٦ [النساء: ٨٦
“আর যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়া হবে, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম সালাম দেবে। অথবা জবাবে তাই দেবে”। [সূরা নিসা, আয়াত: ৮৬]
►আলী রাদিয়াল্লাহু
‘আনহু’ হতে মারফু হাদিস বর্ণিত, তিনি বলেন,
يجزي عن الجماعة: إذا مروا أن يسلم أحدهم ويجري عن الجلوس أن يرد أحدهم» رواه أبو داود
“যখন কোন জামাত অতিক্রম করে, তখন
তাদের থেকে যে কোন একজনের সালাম যথেষ্ট হবে এবং কোন মজলিস হতে যে কোন একজন সালামের
উত্তর দিলে তা সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে”। আবু-দাউদ ।
অমুসলিম পরিবেষ্টিত জনসমাবেশে সালাম
►“রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ একটি মজলিসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, সেখানে সেখানে মুসলিম, মুশরিক, মূর্তি-পূজারী ও ইয়াহুদূসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ তাদের সালাম দেন” ।
‘তাযকীরুল আনাম বি আহকামীস সালাম’ এর তথ্যসূত্র: 1-রিয়াযুস সালেহীন মিন কালামে সাইয়্যেদুল মুরসালীন। 2-শাইখ মুহাম্মদ আস-সাফারিনির গিযাউল আলবাব শরহু মানযূমাতুল আদাব। 3-আল্লামা আব্দুল কাওয়ী এর মানযূমাতুল আদব। 4-শাইখ আব্দুল আযীয ইবন মুহাম্মদ আস-সালমান এর ইত্তেহাফুল মুসলিমিন বিমা তায়াসসারা মিন আহকামিদদ্বীন। 5-: বাহজাতুন নাযেরীন ফি-মা ইয়ুসলিহুদ দুনিয়া ওয়াদ দ্বীন। 6-শাইখ হামূদ ইবন আব্দুল্লাহ আত-তুয়াইজিরী এর তুহফাতুল ইখওয়ান বিমা জাআ ফিল মুয়ালাত ওয়াল মুয়াদাত ওয়াল হুব্বে ওয়াল বুগজে ওয়াল হিজরান। 7-ফাহাদ ইবন সারহান আল-জুহানীর লেখা- রিসালাতু ‘এফশা-উস সালাম ওয়াল মুসাফাহা’। 8 ‘কাযায়া তাহুম্মুল মারআ’ 9 আবু হুজাইফা ইব্রাহীম ইবন মুহাম্মদ এর লিখা বই ‘আদাবুস সালাম’ ।
আন্তর্জাতিক জমায়েতে সালাম সম্ভাষণ পদ্ধতিঃ ওয়াস সালামু আলা মানিত্তাবা আল-হুদা
٤٧- فَأْتِيَاهُ فَقُولَا إِنَّا رَسُولَا رَبِّكَ فَأَرْسِلْ
مَعَنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلَا تُعَذِّبْهُمْ قَدْ جِئْنَاكَ بِآيَةٍ مِنْ
رَبِّكَ وَالسَّلَامُ عَلَىٰ مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَىٰ ◯
“ So go ye both to him, And say, ‘ Verily we are Apostles sent by thy Lord : Send forth, therefore, the Children Of Israel with us, and Afflict them not : With a Sign, indeed, Have we come from thy Lord ! And Peace to all Who follow guidance! (Surah Tohaa, Ayat: 47).
সালামের নিয়ম-পদ্ধতি
ইমাম নাওয়াভী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: সালামের চর্চা করা তথা সালাম
দেওয়া সুন্নাত। তবে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। আর যদি সালাম প্রদানকারী একটি জামায়াত
হয় তবে তাদের জন্য সালাম দেওয়া সুন্নতে কেফায়া (অর্থাৎ একজন সালাম দিলেই সকলের
পক্ষ হতে এ সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে আর কেউ সালাম না দিলে সকলেই সুন্নাত পরিত্যাগকারী
বলে গণ্য হবে)। সুতরাং একজন সালাম দিলেই সকলের পক্ষ থেকে সালামের সুন্নাত আদায় হয়ে
যাবে। যাকে সালাম দেয়া হল তিনি যদি এক জন ব্যক্তি হয় তবে তাকেই জবাব দেয়া আবশ্যক।
আর যদি তারা এক জামায়াত (দল) হয়, তবে জবাব দেয়া তাদের জন্য ফরযে কেফায়া। যদি তাদের মধ্যে থেকে একজন সালামের
জবাব দেন তবে সবাই গুনাহ মুক্ত হয়ে যাবেন।
ইমাম নাওয়াভী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: সালামের সর্বনিম্ন শব্দ হল: (السلام عليكم)
আসসালা-মু আলাইকুম বলা। যাকে সালাম দেয়া হচ্ছে তিনি যদি একক ব্যক্তি হন, তবে
তার জন্য সর্ব নিম্ন শব্দ হল: (السلام عليك) আসসালামু আলায়কা বলা। তবে এক্ষেত্রে উত্তম
হল (السلام عليكم)
আস্ সালামু আলাইকুম বলা যাতে করে এ সালাম তাকে ও তার দুই ফেরেশতাকেও শামিল করে। এর
চেয়েও পূর্ণাঙ্গরূপ হল: (ورحمة الله) ওয়া রহমাতুল্লাহ বৃদ্ধি করে বলা, অনুরূপ
ভাবে (وبركاته)
ওয়া বারাকাতুহু শব্দ বৃদ্ধি করে বলা আরও উত্তম। যদি কেউ (سلام عليكم)
সালামুন আলাইকুম বলে তবুও তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।
সালামের জবাব:
ইমাম নাওয়াভী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন: সালামের জওয়াব দেয়ার সর্বোত্তম ও পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি হল: ( وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته)ওয়া 'আলাইকুমুসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকা-তুহ্ বলা।
সালামের কতিপয় আদব:
পথে দুজনের সাক্ষাত হলে সুন্নত হল আরোহী
ব্যক্তি পদব্রজে চলমান ব্যক্তিকে, কম সংখ্যক মানুষ
বেশী সংখ্যক মানুষকে সালাম দিবে। ছোট বড়কে সালাম দিবে (বড়রা ছোটদেরকে আগে সালাম
দিতে পারবেন)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে চলা ব্যক্তিকে, চলমান
ব্যক্তি উপবিষ্ট ব্যক্তিকে, কম সংখ্যক বেশি সংখ্যক লোককে
সালাম দিবে। (মুসলিম)
► মুসলিম ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব হল: সে যখন নিজ বাড়িতে
প্রবেশ করবে সালাম দিবে। কারণ সালামের মাধ্যমে বরকত নাযিল হয়। যদি ঘরে কেউ না থাকে
তবে বলবে: আসসালামু আলায়না ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালেহীন আমাদের উপর এবং আল্লাহ্র
সৎ বান্দাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। (মুসলিম)
► শ্রোতাকে বিরক্ত করে না, ঘুমন্ত ব্যক্তিকে
জাগিয়ে তোলে না- এই ধরণের স্বরে সালাম প্রদান করা উচিত। হযরত মেক্বদাদ (রদ্বিয়াল্লাহু
আনহু:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য তাঁর অংশের
দুধ উঠিয়ে রাখতাম। তিনি রাত্রে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম প্রদান করতেন যে তা ঘুমন্ত
ব্যক্তিকে জাগ্রত করত না অথচ জাগ্রত ব্যক্তির কর্ণ গোচর হত। (মুসলিম)
►যে সব কারণগুলো
মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে, সালাম অন্যতম একটি কারণ।
সালাম জান্নাতে প্রবেশকে ওয়াজিব করে। যেমন-আবু সারাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর হাদিস; তিনি বলেন,يا رسول الله أخبرني بشيء يوجب الجنة، قال: طيب الكلام، وبذل السلام، وإطعام الطعام রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এমন আমল বাতলে দিন, যা জান্নাতে প্রবেশকে ওয়াজিব করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, “মিষ্টি কথা, সালামের প্রসার এবং মানুষকে খানা খাওয়ানো। বর্ণনায় তাবরানী, ইবনে হিব্বান স্বীয় সহীহতে এবং হাকেম তার সহীহতে।
সালামের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য
► সালামের প্রসার করা, মাগফিরাত ও ক্ষমা লাভ করার কারণ।আল্লামা তাবরানী আবু সারহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বিশুদ্ধ সনদে হাদিস বর্ণনা করে বলেন,"قلت يا رسول الله دلني على عمل يدخلني الجنة، قال: إن من موجبات المغفرة بذل السلام وحسن الكلام “আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন আমল বাতলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বললেন, ক্ষমা লাভের কারণ হল, সালামের প্রসার ও সুন্দর কথা”।
►সালাম মুসলিম ভাইদের মধ্যে পরস্পর মহব্বত সৃষ্টি করে।
►সালাম দেয়ার মাধ্যমে অপর মুসলিম ভাইয়ের অধিকার আদায় করা হয়। যেমন- সহীহ মুসলিমে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,حق المسلم على المسلم ست، قيل وما هن يا رسول الله؟ قال: إذا لقيته فسلم عليه، وإذا دعاك فأجبه، وإذا استنصحك فانصح له، وإذا عطس فحمد الله فشمته، وإذا مرض فعده، وإذا مات فاتبعه “একজন মুসলিমের জন্য অপর মুসলিমের হক ছয়টি। জিজ্ঞাসা করা হল হে আল্লাহর রাসূল! সে গুলো কি? তিনি বললেন, তোমার সাথে সাক্ষাৎ হলে, সালাম দেবে। তোমাকে দাওয়াত দিলে, তাতে শরিক হবে, উপদেশ চাইলে, উপদেশ দেবে। হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ বললে, তার উত্তর দেবে। অসুস্থ হলে, তাকে দেখতে যাবে এবং মারা গেলে, তার জানাযায় শরিক হবে”।
ঘরে প্রবেশ করে সালাম দেয়া
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা
বলেন,
فَإِذَا دَخَلۡتُم بُيُوتٗا فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ النور: ٦١
“তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের উপর
সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র
অভিবাদনস্বরূপ”। [সূরা নূর, আয়াত: ৬১]
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’
বলেন,
يا بني إذا دخلت على أهلك فسلم يكن بركة عليك وعلى أهلك رواه الترمذي، وقال حديث حسن.
“হে বৎস! তুমি যখন ঘরে প্রবেশ করবে, তখন সালাম দাও। তা তোমার জন্য ও তোমার পরিবার পরিজনের জন্য বরকত হিসেবে
চিহ্নিত হয়ে থাকবে”। বর্ণনায় তিরমিযী এবং তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান।
কবর জিয়ারাতে সালাম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ রাতের শেষাংশে বাকী গোরস্থানের দিকে বের হতেন এবং বলতেন- “হে মুমিন সম্প্রদায়! তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। তোমাদের যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তা তোমাদের জন্য দ্রুত করা হবে। আর আমরা অবশ্যই তোমাদের সাথে একত্র হব। হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমা কর! বাকীর অধিবাসীদের” ।
►সুলাইমান ইব্ন বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তারা যখন কবরস্থানের দিকে যেতেন, তাদেরকে এ দু'আ শিক্ষা দিতেন: তাদের কোনো বর্ণনাকারী বলতেন, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ এর বর্ণনায় বর্ণিত,
হে মুমিন ও মুসলিম কবর বাসী তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। ইনশা-আল্লাহ অচিরেই আমরা তোমাদের সাথে একত্র হব। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি ।
►কবর বাসীদের সালাম দেয়া কবর বাসীদের সালাম দেয়া, তাদের জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দো‘আ করা সুন্নত। যেমনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ হতে বর্ণিত “হে মুমিন মুসলিম কবর বাসী তোমাদের উপর সালাম বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমরা তোমাদের সাথে একত্র হব। তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী আর আমরা তোমাদের অনুসারী। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি তাদের ক্ষমা কর এবং তাদের তুমি দয়া কর” ।
সালামের আরও কিছু বিধান
►আবু
হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে
বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি
ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
ليسلم الصغير على الكبير، والمار على القاعد، والقليل على الكثير متفق عليه، وفي رواية لمسلم: والراكب على الماشي.
“ছোটরা যেন বড়দের সালাম দেয়, পায়ে
হাঁটা ব্যক্তি যেন বসা ব্যক্তিকে সালাম দেয় এবং কম সংখ্যক লোক যেন বেশি সংখ্যক
লোককে সালাম দেয়”। বুখারি ও মুসলিম। আর মুসলিমের বর্ণনায় বর্ণিত, “আরোহী ব্যক্তি পায়ে হাটা ব্যক্তিকে সালাম দেবে”।
বাচ্চাদের
সালাম দেয়া
يفعله متفق عليه عن أنس أنه مر على صبيان فسلم عليهم وقال: كان رسول الله
অর্থ: আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বাচ্চাদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন এবং তাদের সালাম দেন এবং বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ অনুরূপ করতেন। বুখারি ও মুসলিম। আল্লাহ ভালো জানেন। লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো রক্ষা করেন আত্মীয়তার বন্ধন, বহন করেন অন্যের বোঝা, উপার্জনক্ষম করেন নিঃস্বকে, আহার দেন অতিথিকে, সাহায্য করেন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে।’ (বুখারি, হাদিস)।
►সালামঃ শান্তি-নিরাপত্তার প্রতীক:
বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর হাদিসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,أفشوا السلام تسلموا “তোমরা সালামকে প্রসার কর, নিরাপদ থাকবে”।
সালামঃ ইসলামী সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক: তোমার অপর মুসলিম ভাইয়ের প্রতি খালেস ভালোবাসাকে জাগ্রত করে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা তাবরানী তাঁর আওসাত গ্রন্থে শাইবা আল-হাজাবী, তিনি তাঁর চাচা থেকে মারফু হাদিস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,ثلاث يصفين لك ود أخيك: تسلم عليه إذا لقيته، وتوسع له في المجلس، وتدعوه بأحب أسمائه إليه.“তিনটি জিনিস তোমার জন্য তোমার মুসলিম ভাইয়ের মহব্বতকে খাঁটি করে। এক- তোমার সাথে সাক্ষাৎ হলে, সালাম দেবে। দুই- কোনো মজলিসে তাকে জায়গা করে দেবে। তিন- তার নিকট যে নামটি প্রিয়, সে নামে তাকে ডাকবে” ।
জান্নাতিদের সম্ভাষণ হবে সালামঃ যারা জান্নাতে যাবে তাদের সম্ভাষণ হবে সালাম। যেমন, আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনে করীমে এরশাদ করেন। وَتَحِيَّتُهُمۡ فِيهَا سَلَٰمَۚ ١٠ يونس: “আর তাতে তাদের অভিবাদন হল ‘সালাম’। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০]
►দূর থেকে চিঠির মাধ্যমে অথবা দূতের মাধ্যমে সালাম প্রদানের বিধানঃ আর যখন কোনো ব্যক্তি দূর থেকে চিঠির মাধ্যমে অথবা দূতের মাধ্যমে কাউকে সালাম দেয়, তখন তার নিকট সালাম পৌছার পর সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। তবে মোস্তাহাব হল, দূতকেও সালাম দেয়া এবং এ কথা বলা, وعليك وعليه السلام তোমার উপর ও তার উপর সালাম। কারণ, হাদিসে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে একজন ব্যক্তি এসে বলল,
أبي يقرؤك السلام فقال: عليك وعلى أبيك السلام
“আমার পিতা আপনাকে সালাম দিয়েছে।” এ কথা শোনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’
বললেন, “তোমার উপর এবং তোমার পিতার উপর
সালাম” ।
ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রহ. কে বলা হল, অমুক
আপনাকে সালাম দিয়েছে। তখন তিনি বললেন, ‘তোমার উপর ও তার
উপর সালাম’।
দ্বিতীয়
অধ্যায়
আল কুরআনের আলোকে মেহমানদারী
١٧٧- لَّيْسَ الْبِرَّ أَن
تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَـٰكِنَّ الْبِرَّ
مَنْ آمَنَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ
وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ
وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ
الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا ۖ
وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ ۗ أُولَـٰئِكَ
الَّذِينَ صَدَقُوا ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ ◯
Surah Baqorah, Ayat: 177. It is not righteousness that ye turn your faces toward East or West; but it is righteousness to believe in Allah and the Last Day and the Angels and the Book and the Messengers; to spend of your substance out of love for Him for your kin for orphans for the needy for the wayfarer for those who ask and for the ransom of slaves; to be steadfast in prayer and practice regular charity; to fulfil the contracts which ye have made; and to be firm and patient in pain (or suffering) and adversity and throughout all periods of panic. Such are the people of truth the Allah-fearing.
মেহমানদারি নবী-রসুল (আ'লাইহিমুস সালামদের অনন্য অসাধারণ আদর্শ। হজরত ইবরাহিম (আ'লাইহিমুস সালাম) এর মেহমানদারিত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ফরমান: বলেন, ‘আমার ফেরেশতারা (পুত্রসন্তানের) সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহিমের কাছে এলো। তারা বলল,‘সালাম।’ সেও বলল,‘সালাম।’ সে অবিলম্বে কাবাবকৃত গোবৎস (ভুনা গরুর গোশত) নিয়ে এলো।’ (সুরা : হুদ,আয়াত : ৬৯)
হজরত ইবনে আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু.) থেকে বর্ণিত, ইবরাহিম (আ'লাইহিমুস সালাম) এর কাছে প্রেরিত ফেরেশতাদের দলে হজরত জিব্রাইল(আ'লাইহিমুস সালাম), মিকাইল (আ'লাইহিমুস সালাম) ও ইস্রাফিল (আ'লাইহিমুস সালাম) ছিলেন। তাঁরা মানুষের আকৃতি ধারণ করে ইবরাহিম (আ'লাইহিমুস সালাম)এর কাছে আগমন করেন। তিনি তাঁদের মানুষ মনে করে তাঁদের জন্য আতিথেয়তার আয়োজন করেন। ইবরাহিম (আ'লাইহিমুস সালাম)ই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মেহমানদারির প্রথা প্রচলন করেন। (তাফসিরে কুরতুবি)
"আমর ইবন
খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু আবদুল্লাহ ইবন আমর রদ্বিয়াল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল, ইসলামের কোন্ কাজটি
উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাবার খাওয়াবে ও পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম করবে।" (হাদিস নং-১১, ঈমান অধ্যায়, খাবার খাওয়ানো ইসলামী গুণ: পরিচ্ছেদ:৬,
বুখারী হাদীস: প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৮)।
অপর ধর্মের নবী-রসূল-কে ব্যঙ্গ নয় কটুক্তি নয়: সালাম সম্ভাষণ ইসলামের মহান রীতি
আমরা মুসলিমরা অপর ধর্মের নবী-রসূল-কে সালাম (শান্তি) সম্ভাষণ জানাই যে ভাবেঃ
►আমরা ইসা মসীহ (যিশু খ্রীস্ট)-কে জানাই এই সম্ভাষণেঃ ঈসা আলাইহিমুস সালাম
►আমরা মুসলিমরা মূসা (মোসেস)-কে জানাই এই সম্ভাষণেঃ মূসা আলাইহিমুস সালাম
►আমরা ইবরাহীম (আব্রাহাম)-কে জানাই এই সম্ভাষণেঃ ইবরাহীম আলাইহিমুস সালাম
আমরা ফিরিশ্তাদের সালাম (শান্তি) সম্ভাষণ জানাই যে ভাবেঃ
► জিবরাইল (গাব্রিল)-কে জানাই এই সম্ভাষণেঃজিবরাইল আলাইহিমুস সালাম
রহমানের বান্দা সত্যিকার মুসলমানরা পৃথিবীতে সালাম (শান্তি) সম্ভাষণে চলে
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ফরমান:
'রহমান'-এর
বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন মূর্খরা কথা
বলতে থাকে, তখন তারা বলে সালাম। ( সূরাহ ফুরক্বন, অআয়াত: ৬৩, তফসীরে মাআরেফুল কোরআন,
ষষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা: ৪৯০)
মেহমানদারিঃ ইসলামের সৌন্দর্য
বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মেহমানদারির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত
উল্লেখ্য, নবুয়াত প্রকাশিত হওয়ার আগ থেকেই বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিথিসেবায় সচেষ্ট ছিলেন। সর্বপ্রথম ওহিপ্রাপ্ত হয়ে অনেকটা বিচলিত হয়ে পড়লে উম্মাহাতুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তখন তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এভাবে—‘আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো রক্ষা করেন আত্মীয়তার বন্ধন, বহন করেন অন্যের বোঝা, উপার্জনক্ষম করেন নিঃস্বকে, আহার দেন অতিথিকে, সাহায্য করেন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে।’ (বুখারি, হাদিস)
‘আর (হে নবী!) প্রথমত, আপনি আপনার নিকটতম আত্মীয়-স্বজনদেরকে (পথ ভ্রষ্টতার পরিণাম সম্বন্ধে) ভয় প্রদর্শন করুন’’ (সূরাহ আশ্ শু’আরাঃ আয়াত : ২১৪)
আল্লাহপাক কর্তৃক উপরোক্ত দাওয়াতুল ইসলামের আনুষ্ঠানিক সদয়
অনুমতি লাভ করে মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজ বাড়ীতে
নিকটাত্মীয়দের প্রথমতঃ (খাবার) দাওয়াত জানালেন। দাওয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের শীর্ষ¯হানীয় মোট ৪৫ জন পরমাত্মীয় শরীক
হন-যাতে আপন চাচাজান ও কুরাইশ সর্দার আবু লাহাব বিন আবদে মুত্তালিবও শরিক
ছিল। (সূত্রঃ মাসিক মদিনা সীরাতুন্নবী সঃ
সংখ্যা- ৯৯, পৃ
: ৯৩) (প্রাগুক্ত-৯৩)। নবুয়াতের পূর্বেও মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মেহমানদারীতে
অভ্যস্ত ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় গারে হেরায় ওয়াহি প্রাপ্ত হয়ে ঘরে ফিরে অআসলে
নবুয়াতের মত কঠিন দায়িত্বে বিচলিত নবীজী সাঃ যাতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে
এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন তার জন্য অভয় বাণী শুনান নবীজীর অনন্য অসাধারণ গুণ-গরিমা
তুলে ধরেন তাতে তন্মধ্যে অন্যতম ছিল প্রাক নবুয়াতের সময় নবীজী সাঃ এর মেহমানদারীর
বিষয়টিও উম্মাহাতুল মুমিনিন খাদিজাতুল কুবরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক
নিম্নোক্তভাবে তুলে ধরা হয়ঃ
—‘আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো রক্ষা করেন আত্মীয়তার বন্ধন, বহন করেন অন্যের বোঝা, উপার্জনক্ষম করেন নিঃস্বকে, আহার দেন অতিথিকে, সাহায্য করেন দুর্যোগ-দুর্বিপাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩)
মেজবানের আদব ও করণীয়
‘তারা নিজের ওপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে
থাকে। যদিও বা নিজেরা ক্ষুধার্ত থাকে। আর যারা স্বভাবজাত লোভ-লালসা এবং কামনা থেকে নাজাত পেয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সূরা হাশর : ৯)
মেহমান কারা?
কোনো ব্যক্তি যখন
কারও বাড়িতে উপস্থিত হন, তখন আগত
ব্যক্তি সেই বাড়ির মেহমান বলে গণ্য হন, সমাদৃত হন।
মেজবান বা মাহরাম কারা?
আর যাঁর বাড়িতে মেহমান গেছেন, সেই বাড়ীওয়ালাকে মেজবান বা মাহরাম বলা হয়।
মেজবানের করণীয়
এক. মেহমান এলে খুব
দ্রুত তাঁকে স্বাগত জানাবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধিরা মহানবী (সা.)-এর
কাছে আগমন করে, মহানবী (সা.) তাদের জিজ্ঞাসা করলেন,
‘তোমরা কারা?’ তারা বলল, ‘আমরা (আবদুল
কায়েস গোত্রের) রবিআ শাখার লোক।’ মহানবী (সা.) বললেন, ‘ওই জাতিকে মারহাবা! ওই প্রতিনিধিদলকে মারহাবা! এটা তোমাদের
অপরিচিত কোনো জায়গা নয়। এখানে লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩; মুসলিম, হাদিস : ১৭)
দুই.
উপস্থিত যা আছে, তা দিয়ে
আপ্যায়ন করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওবায়েদ ইবনে উমায়ের (রহ.) বলেন, হজরত জাবের (রা.) নবী করিম (সা.)-এর সাহাবিদের এক জামাতের সঙ্গে আমার
কাছে তাসরিফ আনলেন। হজরত জাবের (রা.) সঙ্গীদের সামনে রুটি ও সিরকা পেশ করলেন এবং
বললেন, “এটা
খাও, কেননা আমি
রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ইরশাদ করতে শুনেছি, ‘সিরকা’ উত্তম তরকারি। সে ধ্বংস হোক, যে তার কয়েকজন ভাই তার কাছে আসে, আর সে ঘরে যা
আছে, তা তাদের সামনে পেশ করাকে কম মনে করে। ওই সব লোক
ধ্বংস হোক, যারা তাদের সামনে যা পেশ করা হয়, তারা তাকে তুচ্ছ ও কম মনে করে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘মানুষের ধ্বংসের জন্য এটা যথেষ্ট যে যা
তার সামনে পেশ করা হয়, সে তাকে
কম মনে করে।’ (মুসনাদে আহমাদ, তাবারানি)
তিন. মেহমানের জন্য আলাদা
বসার ব্যবস্থা করা। মেহমান কারো কাছে গিয়ে মেজবানের জন্য নির্ধারিত স্থানে বসবে
না। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী
(সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কেউ কারো ঘরে গিয়ে
তার অনুমতি ছাড়া তার নির্দিষ্ট আসনে বসবে না।’ (মুসলিম,
হাদিস : ২৮৩)
চার. মেহমান আলেম হলে
তাঁকে অত্যধিক সম্মান করা। আল্লাহ বলেন, ‘যাদের ধর্মীয় জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদায় উন্নীত করবেন।’ (সুরা : মুজাদালা, আয়াত : ১১)
পাঁচ. মেজবান ও বাড়ির কর্তার নিজেরই
মেহমানদারির কাজে অংশগ্রহণ করা। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ঘটনায় আমরা দেখতে পাই, তিনি নিজেই দ্রুত আগত মেহমানদের জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করেছেন।
তাঁর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “তোমার কাছে ইবরাহিমের সম্মানিত মেহমানদের কথা পৌঁছেছে
কি?
যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম।’ জবাবে সেও বলল,
‘সালাম।’ তারা তো (ছিল) অপরিচিত
লোক। তারপর ইবরাহিম তার স্ত্রীর কাছে গেল এবং মোটাতাজা গরুর বাছুর ভুনা করে নিয়ে
এলো। তারপর তা তাদের সামনে রেখে বলল, ‘তোমরা খাচ্ছ না কেন?’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত
: ২৪-২৭)
ছয়. খাবার নিয়ে কোনো লৌকিকতা প্রদর্শন
করবে না। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, “আমরা হজরত উমর (রা.)-এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘আমাদেরকে
লৌকিকতা প্রদর্শন করতে নিষেধ করা হয়েছে’।” (বুখারি, হাদিস : ৭২৯৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘দুজনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট। আর তিনজনের খাবার
চারজনের জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৯২, মুসলিম, হাদিস : ২০৫৮)
মেহমানের করণীয়
এক. মেহমানের উচিত হলো তাঁর চক্ষু সংযত
রাখা ও দৃষ্টি অবদমিত রাখা। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের বলে দাও, তারা যেন তাদের
দৃষ্টি সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০)
দুই. মেহমানের উচিত হলো তাঁর আওয়াজ ও
কণ্ঠস্বর নিচু রাখা। অহেতুক চিল্লাপাল্লা না করা। হজরত লোকমান (আ.)-এর কথা উল্লেখ
করে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি
তোমার কণ্ঠস্বর নিচু রেখো। নিশ্চয়ই কণ্ঠস্বরের মধ্যে গাধার কণ্ঠস্বরই সবচেয়ে
অপ্রীতিকর।’ (সুরা : লোকমান, আয়াত : ১৯)
তিন. খাবার শেষ হলে মেহমান এই দোয়া পাঠ
করবে—আল্লাহুম্মা
বারিক লাহুম ফিমা রাজাকতাহুম। ওগিফর লাহুম ওর্হামহুম।’ (মুসলিম, হাদিস : ২০৪২) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি তাদের রিজিকে বরকত দান করুন,
তাদের ক্ষমা করুন এবং তাঁদের ওপর অনুগ্রহ করুন।
চার. খাবার শেষ হলে মেহমানের কোনো কাজ না
থাকলে চলে যাবে। অহেতুক বসে থেকে মেজবানের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না। মহানবী
(সা.)-এর এক ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ বলেন, ‘খাওয়াদাওয়া শেষে তোমরা চলে যাও। তোমরা কথাবার্তায়
মশগুল হয়ে পড়ো না। কারণ তোমাদের এই আচরণ নবীকে পীড়া দেয়। সে তোমাদের উঠিয়ে দিতে
সংকোচ বোধ করে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৫৩)
পাঁচ. মেহমানের উচিত হলো দীর্ঘ সময় বা
দীর্ঘদিন অবস্থান করে মেজবানকে বিরক্ত না করা। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি
আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে
সম্মান করে। মেহমানের পারিতোষিক (বিশেষ মেহমানদারি) এক দিন ও এক রাত। (স্বাভাবিক)
মেহমানদারি তিন দিন। এর অতিরিক্ত মেহমানদারি সদকাস্বরূপ। মেহমানের জন্য বৈধ নয় যে
সে মেহমান হতে হতে মেজবানকে বিরক্ত করে ফেলবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১৩৫; মুসলিম, হাদিস : ৪৮)
ইসলাম নয়, দুর্বল বিশ্ব অর্থনীতি জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী : পোপ
ইসলাম নয় বরং দুর্বল বিশ্ব অর্থনৈতিক
ব্যবস্থাপনা বিশ্বব্যাপী চলা জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী। বলে মন্তব্য করেছেন পোপ ফ্রান্সিস।
পোল্যান্ডের কারাকো বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সময় গত ৩১
জুলাই রোববার এমন মন্তব্য করেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি আরো বলেন, ইসলাম
একটি জঙ্গি ধর্ম বা ইসলাম জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য দায়ী, এমন কথা বলা উচিত নয়। কোন ধর্মই সহিংসতাকে একচ্ছত্রভাবে সমর্থন করে না।
সম্প্রতি ফ্রান্সে ইসলামিক স্টেট নামধারী সংগঠন কর্তৃক একটি চার্চের ফাদার নিহত
হওয়ার প্রসঙ্গ তুলে পোপকে এই প্রশ্ন করা হয়। এ সময় তিনি বলেন, জঙ্গি হামলার সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। বর্তমান অর্থনীতি ‘অর্থই ঈশ্বর’ মেনে চলায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি
হচ্ছে। মানুষ বিশ্বাসের স্থান হারিয়ে ফেলছে। ফলে বেশ দ্রুত সে হতাশ হয়ে যাচ্ছে।
আন্তঃধর্মীয় সংলাপে ইসলাম সম্পর্কে হওয়া আলোচনাকে প্রতিপাদ্য করে তিনি বলেন,
ইসলাম শান্তির ধর্ম হিসেবেই তার অনুসারীদের কাছে পরিচিত। তারা
কখনই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না।তিনি আরো বলেন, যদি
ইসলামের হিংস্রতা নিয়ে আমাকে কথা বলতে বলা হয়, তাহলে
ক্যাথলিকদের হিংস্রতা নিয়েও আমাকে কথা বলতে হবে। সকল ক্যাথলিকরা যেমন হিংস্র নয়,
তেমনি সকল মুসলমানেরাও হিংস্র নয়। তিনি ইসলামিক স্টেটকে ‘ছোট্ট একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী’ আখ্যা দিয়ে বলেন,
তারা মূল ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে না।এ সময়
তিনি বলেন, সকল ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যেই একটি ছোট মৌলবাদী
গোষ্ঠী থাকে। ক্যাথলিকদের মধ্যেও আছে। ক্যাথলিকরা হয়ত সরাসরি হত্যা করছে না।
কিন্তু মনে রাখা উচিত আপনি ছুরি দিয়ে যেমন মানুষ হত্যা করতে পারেন, তেমনি কথা দিয়েও মানুষ হত্যা করতে পারেন। বিমানে থাকাকালে পোপ
ফ্রান্সিস তার সঙ্গে থাকা রিপোর্টারদের জানান, বর্তমানে
চলা যুদ্ধ অনেকটা গত শতকে হয়ে যাওয়া বিশ্বযুদ্ধের মতই। সূত্র : ওয়াল স্ট্রিট
জার্নাল।


Comments
Post a Comment