নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহর ইসলামী জিন্দেগীর ইতিকথা
বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্যদূতঃ আমিরুল ইত্তেহাদ ফুরফুরার পীর আবদুল কাহহার সিদ্দিকী আল কুরাইশী (রহঃ)
بِسۡمِ ٱللهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِيمِِ ◯
বিশ্ব ইসলাম মিশন কুরআনী-সূন্নী জমিয়তুল মুসলিমিন হিযবুল্লাহর وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّـهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ “তোমরা আল্লাহর রজ্জু (রশিকে) শক্তভাবে (দৃঢ়ভাবে) আঁকড়ে ধরো এবং পরষ্পর পৃথক(বিচ্ছিন্ন) হয়ো না” সূরা আলে ইমরানের ১০৩ নং-আয়াত খচিত ইসলামী ঐক্যের পতাকা নিয়ে ইসলামী উম্মাহর ঐক্যদূত সিদ্দিকে আকবার রঃ এর সুযোগ্য ওয়ারিশ, প্যান ইসলামিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা জামাল উদ্দিন আফগানী রহঃ এর উত্তরসূরী আমিরুল ইত্তেহাদ, নায়েবে মুজাদ্দিদ মাওলানা আবুল আনসার মুহাম্মাদ আবদুল ক্বাহহার সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহ দেশ-বিদেশে ওয়াজ-নসিহত, মুখপত্র নেদায়ে ইসলামসহ সিদ্দিকীয়া কুতুবখানা থেকে কুরআন-হাদিস রিসার্চ করে প্রকাশিত জ্ঞানগর্ভ মূল্যবান কিতাবাদি প্রকাশ করে আমৃত্যু পর্যন্ত ইত্তেহাদের বিশ্ব ভিখারি, কাঙ্গাল হয়ে বৃহত্তর ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠায় যে নিরলস রিয়াজাত-মেহনত করে গেছেন- তা স্মরণকালের ইসলামের ইতিহাসে অনন্য-অসাধারণ।
আপাদমস্তক সুন্নী নায়েবে মুজাদ্দেদ (রহিমাহুল্লাহ) মুহিহুস সুন্নাহ ছিলেন
আপাদমস্তক সুন্নী নায়েবে মুজাদ্দেদ (রহিমাহুল্লাহ) মুহিহুস সুন্নাহ ছিলেন । প্রায় ওয়াজে তিনি সুন্নাহর উপর জ্ঞানগর্ভ ওয়াজ ফরমাতেন। তিনি বলতেনঃ সুন্নাতের তাবেদারী নাজাতের একমাত্র পথ। তবে পীর সাহেব খুবই বিব্রত ছিলেন সুন্নাতের নামে বেসুন্নাতি কাজের জন্য। এ জন্য স্বীয় জামাতা কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদীস বিভাগের শিক্ষক আ.ন.ম. খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবকে পবিত্র হাদিস (কোনটি সহীহ কোনটি জাল)-বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার উদ্দেশ্যে রিয়াদে পিএইচডিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। ডক্টরেট করে দেশে ফিরলে পীর সাহেব উনাকে ইসলামী কিতাব লেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এমনকি কোন্ বিষয়ের উপর কিতাব লিখবেন বিষয়টিও পীর সাহেব জানিয়ে দিতেন। সর্বশেষ যে কিতাবটি লিখতে খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর সাহেবকে অসিয়ত করেছিলেন বইটি পর্দা বিষয়ক। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, বায়েত হওয়ার পর সর্ব প্রথম পাহাড়তলী, বাছা মিয়া রোডস্থিত ফুরফুরা দরবারের চট্টগ্রাম জেলা মার্কাযে পীর সাহেবের একান্ত মজলিশে আমরা যে বিষয়ে পীর সাহেবের আলোচনা শুনছিলাম তা-ও ছিল মা-বোনদের মুখ ঢেকে রাখা, না রাখার অর্থাৎ পর্দা বিষয়ে।
উনার মৃত্যুও হয়েছিল সুন্নাত মতে ষাট এবং সত্তর বয়সের মাঝামাঝিতে। সুদূর অস্ট্রেলিয়ায় দ্বীনী সফরের সময়ও তিনি সুন্নাহর অনুসরণে লুঙ্গি পরিহিত থাকতেন। উনার বিশেষ সুন্নাহ ছিলঃ জামিউল ক্বওল। সত্যিকার সুন্নী হিসাবে তাই অল্প কথায় জ্ঞানের সব বিষয়কে একত্রিত করে ওয়াজ ফরমাতেন নায়েবে মুজাদ্দেদ (রহিমাহুল্লাহ)।
মাওলানা আবুল আনসার মুহাম্মাদ আবদুল ক্বাহহার সিদ্দিকী আল কুরাইশীঃ যুগশ্রেষ্ঠ জামিউ’ল ক্বওল
অল্প কথায় ব্যাপক অর্থবোধক ভাবসম্প্রসারিত বক্তব্য রাখতেন আশরাফুল আম্বিয়া, সাইয়্যেদুল মুরসালিন ﷺ সেই সুন্নাতের অনুসরণে পীর সাহেব ওয়াজ ফরমাতেন। যেমন নারীদের মহান মর্যাদা একবাক্যে শেষ করতেন এই বলেঃ মেয়েরা নবী হয় নাই কিন্তু নবীদের মা হয়েছে। এর চেয়ে নারীর মহান মর্যাদা আর কি সহজ-সরল সংক্ষিপ্ত ভাষায় বলা যায়।
এক সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাতে তাওরাত দেখে রসুলুল্লাহ সাঃ যেমন রাগান্বিত
এক সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু
আনহুর হাতে তাওরাত দেখে রসুলুল্লাহ ﷺ যেমন রাগান্বিত হলেন, পীর সাহেবও সুন্নতি কায়দায়
আমার হাতে ফুরফুরার পীর সাহেবের খলিফা দাবী করে লেখা একটি বই হাতে দেখে।
পৃথিবীতে আল্লাহর দর্শন
এ ধরণের নামে লিখিত। তাতে লেখা ছিলঃ কথিত খলিফা নাকি অআল্লাহকে পাখির মতো, যুবতী
নারীর মতো দেখেছেন। ফুরফুরার খলিফা নামে
এমনতর আকিদার বই দেখে পীর সাহেব কথিত খলিফার প্রতি যারপর নাই রাগান্বিত হলেন কেবল
তাই নয়; বরং আমার হাত থেকে বইটি চেয়ে নিয়ে তিনি লেখকের বিরুদ্ধে মামলা করার কথাও
বলেন। বইটি ছিল চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহর নিবাসী ঢাকার ফরিদাবাদ নিবাসী ভোলার
পীর সাহেব, জনাব হাবিবুর রহমান সাহেবের এক ভক্তের। বইটি যথাসময়ে ফেরত চাইলে আমি
অক্ষমতা প্রকাশ করলে বইয়ের মালিক ক্ষ্যেপে গিয়ে জমিদারের নিকট নালিশ করলেন। জমিদার
ছিলেন বাংলাদেশ গাউসিয়া কমিটির একজন উর্ধতন নেতা। তিনি সময় বেধে দিলেন...দিনের
মধ্যে বইটি ফেরত দিতে তা-ও নতুন নয়, যেটা ধার দেয়া হয়েছে অর্থাৎ পুরাতনটাই। আগে
চট্টগ্রামের লাইব্রেরিতে পাই কিনা দেখা যাক। তা নিয়ে দারুস সালাম যাওয়া যাবে
বদলিয়ে অআনার জন্য। নতুন দিয়ে পুরাতন যা সালিশের সিদ্ধান্ত। চট্টগ্রামের বইয়ের প্রধান ঘাটি আন্দর কিল্লাহসহ
তন্ন তন্ন করে শহরের অনেক অভিজাত লাইব্রেরিতে খোজা হলো কিন্তু পাওয়া তো দূরের
কথা, অনেকে এই বইয়ের নামও জীবন জিন্দেগিতে হয়ত শোনেননি। তাই অগত্যা চট্টগ্রামে এ
নামের কোনো বই না পেয়ে সরাসরি ঠিকানা ধরে ঢাকার যাত্রাবাড়ী হয়ে ফরিদাবাদ গিয়ে
চরমোনাইয়ের এক মুরীদ ভাইয়ের সহায়তায় লোকেশন ধরে রিক্সায় এগুতে দেখি মাওলানা হাবিবুর
রহমান যুক্তিবাদীর দরবার। আরও সামনে এগিয়ে গেলে রিক্সা থামিয়ে ভোলার পীর সাহেব
হাবিবুর রহমান সাহেবের দরবারের খোজ পাই। ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিলে ড্রয়িং রুমে অনেকক্ষণ
অপেক্ষার পর পীর সাহেব আসলেন। বললাম, আমি চিটাগং থেকে এসেছি পৃথিবীতে আল্লাহর
দর্শন বইয়ের জন্য। সেই সাথে আরও একটি বইয়ের নাম বললাম।
ভোলার পীর সাহেব বললেন বই আমার কাছে নেই তবে আমাদের খানকায় আছে।
খানকাহর যথাযথ ঠিকানা বলা হলে সেমতে পথ ধরে যাত্রাবাড়ী এসে লোকাল বাসে চিটাগং রোড
ধরে রিক্সাযোগে দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ঢাকার সবুজবাগ এলাকা পেরিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায়
উনার দরবারের খোজ পেলাম। দেখলাম পীর সাহেবের জন্য কবরগাহ নির্মাণ করা হচ্ছে। দরজা
নক করলে খানকাহর দরজা খুলে এক খাদেম এলে উনাকে বললাম, পীর সাহেব পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে
আল্লাহর দর্শন.নামের বইটি দিতে। খাদেম সাথে সাথে ভিতরে গিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে নতুন
একটা বই আমার হাতে দিলেন। মূল্য চুকিয়ে বইটি হাতে পেয়ে যারপর নাই খুশি হলাম। তবে বইটি নিয়ে চট্টগ্রাম না ফিরে সরাসরি দারুস সালামের দিকে
রওয়ানা হই সালিশের রায় মতে পুরাতন বই ফেরত দিতে হবে যে!
কারণ, সালিশে সাব্যস্ত হয়েছিল নতুন নয়, হুবহু পুরাতন বইটা ফেরত দিতে
হবে। তাই পুরাতন বইয়ের জন্য দারুস সালামে আসা। পীর সাহেব তখন দারুস সালামে অবস্থানরত।
বইটি চাওয়া মাত্র ফেরত দেয়া হয় তৎপরিবর্তে আমি নতুন বইটি পীর সাহেবকে হাদীয়া দিলাম
এবং বইয়ের প্রাপকের হাতে হুবহু বইটি ফেরত দিয়ে পারায় মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ শুকরিয়া
জানাই। ক্ষুদ্র ব্যাপারের বিশাল বিস্তৃতির বৈজ্ঞানিক নামঃ বাটার ফ্লাই তত্ত্ব।
Kvk‡di Av‡jv‡K bv‡q‡e gyRv‡Ï` cxi
mv‡n‡ei B‡š—Kv‡ji AvMvg c«¯—ywZt
Kvkd
Kvkd gv‡b nj ARvbv ‡Kvb
welq wb‡Ri Kv‡Q c«KvwkZ nIqv|
G Kvkd KL‡bv mwVK nq Avevi KL‡bv wg_¨v nq|
KL‡bv ev¯—em¤§Z nq,
KL‡bv ev¯—e cwicš’x
nq| ZvB GwU‡K kixq‡Zi Kwócv_‡i hvPvB Kiv Avek¨K| https://ahlehaqmedia.com/Kvkd-I-Bjnvg-m¤ú‡K©-kiq/
mnxn nv`x‡m
G‡m‡Q
عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: Ó إِنَّ لِلشَّيْطَانِ لِمَّةً، وَلِلْمَلَكِ لِمَّةً، فَأَمَّا لِمَّةُ الشَّيْطَانِ فَإِيعَادٌ بِالشَّرِّ، وَتَكْذِيبٌ بِالْحَقِّ، وَأَمَّا لِمَّةُ الْمَلَكِ فَإِيعَادٌ بِالْخَيْرِ، وَتَصْدِيقٌ بِالْحَقِّ، فَمَنْ وَجَدَ مِنْ ذَلِكَ فَلْيَعْلَمْ أَنَّهُ مِنَ اللهِ، فَلْيَحْمَدِ اللهَ، وَمَنْ وَجَدَ مِنَ الْآخَرِ فَلْيَتَعَوَّذْ مِنَ الشَّيْطَانِ، ثُمَّ قَرَأَ {الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُمْ بِالْفَحْشَاءِ وَاللهُ يَعِدُكُمْ مَغْفِرَةً مِنْهُ وَفَضْلًا} [البقرة: 268]
Òwbðq gvby‡li Aš—‡i kqZv‡bi c¶ ‡_‡KI
K_vi D‡`«K nq, ‡d‡ikZvi c¶ ‡_‡KI K_vi D‡`«K nq| ‡d‡ikZvi D‡`«K nj, Kj¨v‡Yi c«wZ
c«wZk&i“wZ `vb
Ges n‡Ki mZ¨vqb Kiv| ‡h e¨w³ GwU Abyfe Ki‡e, Zv‡K eyS‡Z n‡e ‡h, Zv Avjøvn
ZvAvjvi c¶ ‡_‡K, ZvB Zvi c«ksmv Kiv DwPZ| Avi ‡h e¨w³ wØZxqwU Abyfe Ki‡e, Zv‡K
weZvwoZ kqZvb ‡_‡K Avk«q Kvgbv Ki‡Z n‡e| AZtci wZwb [m~iv evKvivi 268 bs] AvqvZ
cvV K‡ib, A_©vr kqZvb ‡Zvgv‡`i Afve AbU‡bi fxwZ c«`k©b K‡i Ges AkøxjZvi Av‡`k
‡`q| Aciw`‡K Avjøvn ZvAvjv ‡Zvgv‡`i‡K wb‡Ri c¶ ‡_‡K ¶gv I AwaK AbyM«‡ni Iqv`v
K‡ibÓ|
{mybvbyj Kyeiv
wjbbvmvqx, nv`xm bs-10985, mnxn Be‡b wneŸvb, nv`xm bs-997, gymbv‡` Avex Bqvjv,
nv`xm bs-4999, mybv‡b wZiwgRx, nv`xm bs-2988} https://ahlehaqmedia.com/Kvkd-I-Bjnvg-m¤ú‡K©-kiq/
Avn‡j ÔKvkdÕ
Ges Avn‡j ÔBjnv‡giÕ AwaKvix wQ‡jb bv‡q‡e gyRv‡Ï` mv‡ne-hvi Kvi‡Y Dbvi Rxe‡bi
‡kl gyû‡Z©i g~j¨evb mgq¸wji c~Y© mبenv‡ii j‡¶¨ K‡i wb‡R‡K PgrKvifv‡e AvMvg
¸wQ‡q ‡djv wQj j¶¨Yxq| m¤¢eZt G‡Z Abyc«vwYZ KiwQj Kvkd Ges Bjnvg|| we‡kl K‡i
me©`jxq Bmjvgx HK¨ m‡¤§jb Abyôvb Kvk‡di ¯^v¶i enb K‡i g…Z¨yi c~e©eZ©x 2005 mv‡j
ÒZvui AeZ©gv‡b cieZ©x MÏxbmxb cxiÓ g‡bvbq‡bi ga¨w`‡q (hvi wek` weeiYx mvg‡b ‡ck
Kiv n‡e BbkvAvjøvn)| nvKxgyj D¤§Z Avkivd Avjx _vbex int Kvkd m¤ú‡K© e‡jb,
ÒeyhyM©‡`i ‡h Kvkd n‡q _v‡K, Zv Zvu‡`i ¶gZvaxb bq|{Bjg I Avgj, evmv‡q‡i nvKxgyj
D¤§Z-215-216}
Bjnvg
Bjnv‡gi
cvwifvwlK A_© nj, wPš—v I ‡Póv QvovB ‡Kvb K_v ü`‡q D‡`«K nIqv| Bjnvg Kvk‡diB
c«Kvi we‡kl| Bjnvg mnxn n‡j Zv‡K Bj‡g jv`ybœx ejv n‡q _v‡K|
‡h Bjnvg
kixq‡Zi ‡Kvb ûKyg AvnKvg m¤úwK©Z Ges Gi c‡¶ kixq‡Zi `jxjI we`¨gvb _v‡K, ïay G
ai‡Yi Bjnvg‡KB mnxn Bjnvg ejv n‡e Ges aiv n‡e GwU Avjøvn ZvAvjv c¶ ‡_‡K n‡q‡Q|
GwU Avjøvn ZvAvjvi wbqvgZ e‡j cwiMwYZ n‡e| G e¨vcv‡i Zvui ‡kvKi Av`vq Kiv
`iKvi{dvZûj evix-12/405, wKZveyZ Zvexi, eve-10, iƒûj gvAvbx-16/16-22,
ZvewmivZyj Avw`jøv-1/22-23, gvIwKdyj Bmjvg wgbvj Bjnvg Iqvj Kvkwd Iqviiƒqv-11-114}| https://ahlehaqmedia.com/Kvkd-I-Bjnvg-m¤ú‡K©-kiq/
আখেরি সফরে ‘বাবল ইসলাম’ চট্টগ্রামে নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহ
নির্ভরযোগ্য প্রাচীন বাংলার ইতিহাসসূত্রে জানা যায় যে, পাক-বাংলা-ভারত
উপমহাদেশে সাগর পথে ইসলামের প্রবেশ ঘটেছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
নিকটাত্মীয় মামা সম্পর্কের হযরত আবু ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহর আরব সাগর পথে বঙ্গোপসাগর
উপকূল অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পথে চীনের ক্যান্টনে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম বন্দরে
যাত্রাবিরতিকালে এদেশে (ﷺ)-এর জীবৎকালেই এই উপমহাদেশে ইসলামের প্রবেশ ঘটে।
এ কারণে চট্টগ্রামকে বলা হয় “বাবল
ইসলাম” অর্থাৎ “ইসলামের প্রবেশ দ্বার”।
উল্লেখ্য, রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাসুল (ﷺ)-এর মামা, মা আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস
(রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ৬২০ থেকে ৬২৬ ঈসাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন
(পৃ. ১২৬)। অনেকে অনুমান করেন, পঞ্চগ্রামের মসজিদটিও তিনি নির্মাণ করেন যা ৬৯০
খ্রিষ্টাব্দে সংস্কার করা হয়।
দেশের প্রথম ও প্রাচীন এই মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ২১ ফুট ও প্রস্থ ১০ ফুট। মসজিদের
ভিতরে রয়েছে একটি কাতারের জন্য ৪ ফুট প্রস্থ জায়গা।
মসজিদের চার কোণে রয়েছে
অষ্টকোণ বিশিষ্ট স্তম্ভ। ধ্বংসাবশেষ থেকে মসজিদের চূড়া ও গম্বুজ পাওয়া গেছে।
মতিউর রহমান বসুনিয়া রচিত ‘রংপুরে দ্বীনি দাওয়াত’ গ্রন্থেও এই মসজিদের বিশদ বিবরণ
আছে (তথ্যসূত্রঃ https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/nilakash2021/30275963)।
তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন
প্রান্ত থেকে অন্ততঃ বার জন খ্যাতনামা আউলিয়ার আগমন ঘটে যার কারণে চট্টগ্রামকে বলা
হয় বার আউলিয়ার ধন্যভূমি। মুঘল আমলে চট্টগ্রামের আদি নাম ছিল ইসলামাবাদ, যা বর্তমানে
অন্য দেশে স্থানান্তরিত।
‘ইসলাম ধন্য’ এই চট্টগ্রামেরই বিশিষ্ট পীরে কামেল, ‘সিতারা-ই-চাটগাম’ সুফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী
রহিমাহুল্লাহর নেক সুবহতে ধন্য ছিলেন উনারই সুযোগ্য খলিফা ফুরফুরা দরবারের ‘প্রাণ পুরুষ’ মুজাদ্দেদে জামান হযরত আবদুল্লাহ
আল মারুফ আবু বাক্বর সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা নিবাসী সুফী
ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত উপজেলা মীরশ্বরাইয়ের নিজামপুরে অবস্থিত ‘মলিয়াশ’ নামক গ্রামে শায়িত গাজিয়ে বালাকোট ‘হেলাল-ই-চাটগাম’ সুফী নূর মোহাম্মাদ নিজামপুরী রহিমাহুল্লাহর খলিফা।
ইতিহাস গবেষকদের মতে, গাজিয়ে বালাকোট ছিলেন একজন চেচেনিয়ান (সূত্রঃ মাওলানা
মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম, সাবেক প্রিন্সিপ্যাল, বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম)। গাজিয়ে
বালাকোট সুফী নূর মোহাম্মাদ নিজামপুরী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট
আলেমে বিল্লাহ, আরিফ বিল্লাহ শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহিমাহুল্লাহর বিশিষ্ট
খলিফা। শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন তদীয় পিতা উপমহাদেশের
আধ্যাত্মিক প্রাণ পুরুষ শাহ আবদুর রহীম দেহলভী রহিমাহুল্লাহর সুযোগ্য সাহেবজাদা।
ফুরফুরা দরবারঃ জ্ঞানীর দরবার, বিজ্ঞানীর দরবার
নায়েবে মুজাদ্দেদের (রহিমাহুল্লাহর) ইন্তেকাল
পরবর্তী ফুরফুরা দরবারের কেন্দ্রিয় মুখপত্র মাসিক নেদায়ে ইসলামের জানুয়ারি ২০০৭ থেকে
পরবর্তী কয়েক সংখ্যায় পীর সাহেবের স্মৃতিচারণমূলক ধারাবাহিক শোকগাথা প্রবন্ধ নিবন্ধ
প্রকাশিত হচ্ছিল। তাতে প্রসঙ্গক্রমে এক সংখ্যায় প্রসঙ্গক্রমে লেখা হয়েছিলঃ ফুরফুরা দরবার জ্ঞানের দরবার। কথাটির বাস্তবতা
মূল্যায়ের অপেক্ষা রাখে।
রিমোট কন্ট্রোল এবং ফুরফুরা দরবার
আজ থেকে শতবর্ষ আগের কথা। তখন ছিল মান্দাতার
আমলের এনালগ যুগ। ফুরফুরার তৎকালীন গদ্দীনসীন পীর মুজাদ্দেদে জামান (রহিমাহুল্লাহ)
কলিকাতা বা আশপাশের কোথাও পাল্কি চড়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে একদল মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত
হয়ে দৌড়ে আসলেন এবং বললেনঃ ছেলে একটার গলায় টেংরা মাছ ঢুকেছে। সে মরণাপন্ন প্রায়। কলিকাতার
অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়েছিল ছেলেটাকে। কিন্তু ডাক্তার অক্ষমতা প্রকাশ
করে রোগীকে ফেরত দেয়া কালে স্বজনদেরকে এও বলেছিলেন যে, অমুক জায়গায় অমুক এক পীর আছেন।
আমরা রোগীর কোনো ভালাই করতে না পারলে স্বজনরা ঐ পীর সাহেবের দরবারের নিয়ে যায় পীর
সাহেব কেমন ভাবে রোগীকে সারিয়েও তোলেন কখনও
কখনও। এই ছেলেটাকে সেই পীর সাহেবের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। সেমতে ছেলেটাকে আপনার কাছে
যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছিলাম।
লোকেরা মুর্মূর্ষ ছেলেটাকে পাল্কির কাছে নিয়ে
আসতে চাইলে মুজাদ্দেদে জামান রহঃ বললেন, থাক, নিয়ে আসতে হবে না। ছেলেটার মুখ হা করে
দিন বলেন। পীর সাহেব পাল্কী থেকে না নেমে বসেই সম্ভবতঃ তর্জনী আঙ্গুলকে বাকা করে আংটা
বা বড়শির মত পাকালেন এবং দূর থেকে ছেলের মুখগহ্বরের দিকে আংটা আকৃতির আঙ্গুলটা টান
দেয়া মাত্র রক্তাক্ত টেংরা মাছটি গলা থেকে রীতিমত বেরিয়ে এলো। বর্তমান ডিজিটাল কোয়ান্টাম
বিজ্ঞান যুগে যাকে বলা হয় রিমোট কন্ট্রোল!
বন্ধ দরজা হাজিপাড়ায় যেভাবে খুলেছিল!
নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহ একদা দ্বীনী
সফরে চট্টগ্রামের হাজিপাড়ায় অবস্থানরত। রাতে শোয়ার সময় সব দরজা বন্ধ আছে কিনা জানতে
চাইলে বলা হলো। সব দরজা বন্ধ। ঢাকা থেকে খাদেমের বিলম্বিত আগমনের কারণে পীর সাহেবের
একনিষ্ঠ ও একান্ত খাদেমের দায়িত্ব পালন করছিলেন পীর সাহেবের স্নেহধন্য মুহাম্মাদ ইলিয়াছ
হাওলাদার ফরিদপুরী। রাত তখন গভীর। ইলিয়াস ভাই হঠাৎ স্বপ্নের মতো জীবন্ত দেখলেন ঢাকা
থেকে আগত দারুস সালামে পীর সাহেবের একান্ত খাদেম আমজাদ হোসেন ভাইকে।বিস্মিত কন্ঠে
ইলিয়াস ভাইয়ের প্রশ্নঃ আপনাকে কে দরজা খুলে দিলেন?-এমনতর প্রশ্ন করতে না করতেই ইলিয়াস ভাইকে আমজাদ ভাই মুখে আঙ্গুল দিয়ে ইশারায়
চুপ থাকতে বল্লেন। ব্যস এতটুকুন।
পাকিস্তান আমলের কথা। তখন পূর্ব বাংলার হজ্ব
গমণেচ্ছুরা মানুষ সফিনা-ই-আরব নামের পানির জাহাজে করে হজ্ব পালন করতে যেতেন। সেবার
ফুরফুরার তৎকালীন গদ্দীনসীন পীর মুজাদ্দেদে জামান রহিমাহুল্লাহর বিশিষ্ট খলিফা চট্টগ্রামের
মিরশ্বরাই নিবাসী সূফী হযরত মাওলানা আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহও নৌপথে হজ্বে যান। হজ্ব
পালনকালে সেখানে এক গরীব হাজ্বী এসে সূফী সাহেবকে
নিজের অবস্থা বর্ণনা করে সাহায্যের আবেদন করেন।
লোকটি জানান যে, তিনি একজন গরীব মানুষ। কোনো
মতে, হজ্বের টাকা জমা করে হজ্বে এসে টাকা-পয়সা পাসপোর্ট, ফিরতি টিকিট সবই হারিয়ে বসেন।
ফিরে যাওয়ার মত আর্থিক সংগতি নেই। এমনকি বাকী দিন চলার মতও সংগতি নেই। সূফী সাহেব কী
বা করতে পারেন। তিনি বাকী দিনগুলে উনার কাছে থেকে যেতে বললেন এবং একদিন ওই লোকটি দেশে
ফিরতে চাইলে তিনি একটা মোমবাতি হাতে দিয়ে বললেনঃ ঐ যে দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে বাতিটা
ভেজায় (জ্বালিয়ে) আনো। লোকটি যেতে যেতে একবারে তার গাও গ্রামের রান্না ঘরের কাছে
এসে পড়েন। এক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা অনেকটা মডার্ণ কসমোলজিক্যাল স্ট্যান্ডার্ড মডেলে
স্বীকৃত মহাকর্ষ তরঙ্গের ন্যায় স্থান সংকোচনের ন্যায় বলা যায়। মহাকর্ষ তরঙ্গীয় এই
স্থান সংকোচন হয়তো সেদিন সৌদী আরব চট্টগ্রামের দূরত্বে ঘটেছিল যার ফলে বিনা যানবাহনে
সম্ভবপর হয়েছিল লোকটির ঘরে ফেরা। কিছুক্ষণের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। আইনস্টাইনের সাধারণ
আপেক্ষিকতা তত্ত্বে বলা হয়ঃ স্থান+কাল+ এবং সময় আপেক্ষিক।
ইচ্ছা করলে আল্লাহ বন্ধ করে দিতে পারেন আমাদের চলৎশক্তি, বাকশক্তি
বাকশক্তি যখন আপেক্ষিক!
ফুরফুরার তৎকালীন গদ্দীনসীন পীর মুজাদ্দেদে
জামান রহিমাহুল্লাহর মীরশ্বরাই দ্বীনী সফর কালে উপমহাদেশের একজন অন্যতম আলেমে দ্বীন
তথায় এক মসজিদের ইমামতির দায়িত্বে ছিলেন। মাগরিবের নামাজে মুকীম –মুসাফির নির্বিশেষে
সবার জন্য এক তরিকা অর্থাৎ তিন রাকায়াত। ইমাম সাহেব তাই মুসাফির মুজাদ্দেদে জামান রহিমাহুল্লাহকে
দিলেন জামাতে নামাজ পড়াতে। পীর সাহেব নিজে ইমামতি না করে সাধারণ এক মুরীদ মুহেব্বীনকে
ইমামতির দায়িত্ব দিলে ঐ ইমাম সাহেব কিছুটা মনোক্ষুন্ন হন মনে মনে।এশার নামাজ মুকিম-মুসাফিরের
জন্য ভিন্ন ভিন্ন। তাই ইমাম সাহেব নিজেই ইমামতির দায়িত্ব নিয়ে নামাজে কেরাত শুরু করলে
সুরাহ ফাতিহা কোন প্রকারে তেলোয়াত করলেও কোনো ভাবে পরবর্তী সূরাহ মনে অআসছিল না।শেষমেষ
কোনো মতে ছোট্ট একটা সুরা মিলিয়ে নামাজ শেষ করলেন। সেদিন বুঝতে পারেন, মানব সক্ষমতা
আর ক্ষমতার দৌড় কতটুকুন। পরবর্তিতে তিনি শুধু মুরীদ নন, খলিফাও হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন
এই সেই মিরশ্বরাই নিবাসী সূফী হযরত মাওলানা আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহ নায়েবে মুজাদ্দেদ
প্রায় ওয়াজে ফখরের সাথে বলতেন আমাদের ফুরফুরা দরবারে মাওলানা আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহর মতো আলেমে দ্বীন
ফুরফুরার খলিফা হয়েছেন । জানা যায়, মুজাদ্দেদে জামান রহিমুল্লাহর ৫০ হাজারের মত মুরিদ-মুহেব্বীন
খলিফা ছিলেন যাদের অধিকাংশই নোয়াখালীর। পীর সাহেব নোয়াখালী নিয়ে তাই ফখর করতেন।
নায়েবে মুজাদ্দেদঃ পিএইচডির যেন জীবন্ত থিসিস!
পীর সাহেবের ওয়াজের প্রায় কথা ছিল জমিউল ক্বওল
প্রকৃতির।অর্থাৎ অল্প কথায় ব্যাপক বিশ্লেষণ। শুধু ওয়াজে নয়, ভাব ভাবান্তরেও রয়েছে পিএইডির
থিসিসের প্রতিপাদ্য। তাই বলা যায়, নায়েবে মুজাদ্দেদঃ
পিএইচডির জীবন্ত থিসিস!
একদা দ্বীনী সফরে পীর সাহেব চট্টগ্রামের হাজীপাড়া।সময়
সম্ভবতঃ বাদ আছর, মাগরিবের কাছাকাছি। হঠাৎ হাউ মাউ করে উঠলেন এই ভেবে যে, বাপ দাদার
আমলে মাওলানা রুহুল আমিন বশিরহাটি, ডক্টর মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহর মত আলেমে দ্বীন-জ্ঞানী-গুণী
বিদ্বানে ভরপুর ছিল এখন তেমনটি নেই!
এহেন আহাজারির কিছুদিন পর চট্টগ্রামে বসবাসরত
বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন (পরবর্তীতে বায়তুল মুকাররমের খতিব পদের প্যানেল
কমিটির তালিকায় প্রথম এবং ইসলামী ব্যাংক
বাংলাদেশ লিমিটেডের শরীয়াহ বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান এবং দরবারের ফুরফুরার প্রধান মুফতি
নিযুক্ত হন, তিনি আমাদের ফেনীবাসী, দূর সম্পর্কের আত্মীয় হন) সংস্পর্শে আসেন এবং ফুরফুরা
দরবারে পীর সাহেবের বৈপ্লবিক সংস্কারে ডান হাত হিসাবে কাজ করে যেমন রসুলুল্লাহ সাঃ
এর ডান হাত ছিলেন সিদ্দিকে আকবার রদ্বিয়াল্লাহু আনহু। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্বরূপে
আবির্ভূত হন ডক্টর আল্লামা আ.ন.ম.খন্দকার আবদুল্লা জাহাঙ্গির রহিমাহুল্লাহ।
ফুরফুরা দরবারের মুজাদ্দেদে
জামান রহঃ এর চট্টগ্রাম অন্চলের খলিফা সূফী হযরত মাওলানা আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহর ওয়াকেয়াঃ
পাকিস্তান আমলের কথা। তখন পূর্ব
বাংলার হজ্ব গমণেচ্ছুরা মানুষ সফিনা-ই-আরব নামের পানির জাহাজে করে হজ্ব পালন করতে যেতেন।
সেবার সূফী হযরত মাওলানা আবদুল গণি রহিমাহুল্লাহও হজ্বে যান। সেখানে এক গরীব হাজ্বী
এসে সূফী সাহেবকে নিজের অবস্থা বর্ণনা করে সাহায্যের আবেদন করেন। তিনি জানান যে, তিনি
একজন গরীব মানুষ। কোনো মতে, হজ্বের টাকা জমা করে হজ্বে এসে টাকা-পয়সা পাসপোর্ট,
ফিরতি টিকিট সবই হারিয়ে বসেন। ফিরে যাওয়ার মত অআর্থিক সংগতি নেই। এমনকি বাকী দিন চলার
মতও সংগতি নেই। সূফী সাহেব কী বা করতে পারেন। তিনি বাকী দিনগুলে উনার কাছে থেকে যেতে
বললেন এবং একদিন ওই লোকটি দেশে ফিরতে চাইলে তিনি একটা মোমবাতি হাতে দিয়ে বললেনঃ ঐ
যে দেখা যাচ্ছে, সেখান থেকে বাতিটা ভেজায় (জ্বালিয়ে) আনো। লোকটি যেতে যেতে একবারে
ঘরের রান্না ঘরের কাছে এসে পড়েন। এক্ষেত্রে যা ঘটেছে তা অনেকটা মহাকর্ষ তরঙ্গের ন্যায়
স্থান সংকোচনের ফলে সৌদী আরব চট্টগ্রামের দূরত্ব কিছুক্ষণের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। আইনস্টাইনের সাধারণ তত্ত্ব মতে তাই স্থান+কাল+সময় আপেক্ষিক।
চট্টগ্রামে নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহকে শেষবার যেমন দেখেছি
চৌদ্দশত সাতাশ হিজরির পহেলা রবিউল আউয়াল থেকে
চট্টগ্রামে পীর সাহেবের ২৯ বছরের নায়েবে মুজাদ্দিয়াতের বিশ্ব ইসলাম মিশনের সর্বশেষ
দ্বীনী সফর মাহফিল শুরু হয়েছিল। কয়েকদিন ব্যাপী মাহফিলের আখেরি দিবসের আখেরি
দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাজির দেউরি ভি.আই.পি. টাওয়ারে ফুরফুরা দরবারের এক
মুহেব্বীন পুলিশ অফিসারের বাসভবনে। সেখানে ফুরফুরা দরবারের একনিষ্ঠ খাদেম ফজলুল হক ভাই, ইলিয়াস ভাইসহ আমরা বেশ কয়েকজন মুরিদ-মুহেব্বীন উপস্থিত
ছিলাম। সেখান থেকে আগ্রাবাদ হাজীপাড়ায় শেখ এনামুল হক সাহেবের বাড়িতে কিছুক্ষণ
বিশ্রাম নিয়ে রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম ছেড়ে যাওয়ার মুহূর্তে নায়েবে
মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহর সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি ছিল “তাওহীদ”! অর্থাৎ “সিজদাহ
একমাত্র আল্লাহর জন্যই”।
►চট্টগ্রামে পীর সাহেবের দ্বীনী মাহফিলের সর্বশেষ
ওয়াজ মাহফিলের কিছু স্মৃতি, কিছু ইতিহাস
নায়েবে মুজাদ্দেদী পীর সাহেবের ২০০৬ সালে অতি আকস্মিকভাবে
চট্টগ্রামের দ্বীনী সফরে আসার ঘোষণা দেন যা আমাদেরকে অনেকটা কিংকর্তব্যবিমঢ় করে
তোলে উইথ ইন শর্ট টাইমের কারণে। কারণ, ইতিপূর্বে প্রতি বছর চট্টগ্রামে আগমন পূর্বে মাহফিল এন্তেজামের
ব্যাপারে একটা দীর্ঘ সময়ের অবকাশ থাকতো যা সেবার ছিল অনেকটা ব্যতিক্রম। যেহেতু
সন্মানিত দরবারের সন্মানিত পীর সাহেব, সেহেতু উনার মেহমানীও যথাযোগ্য হওয়া
দরকার-এই বিবেচনায় চট্টগ্রামের ফুরফুরা দরবারের শীর্ষস্থানীয় মুরিদীন, মুহেব্বীন,
মুবাল্লেগীনরা সাহস করছিলেন না।
বিষয়টি যেহেতু স্পর্শকাতর সেহেতু জলসার আয়োজনের
ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য চট্টগ্রামের ছোট কুমিরায় অবস্থিত সিলসিলায়ে
ফুরফুরার দারুল মারেফাতের (দরবারী নামটি নায়েবে মুজাদ্দেদ কর্তৃক প্রদত্ত) পীর সাহেব হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ শামসুল ইসলাম
সাহেব রহিমাহুল্লাহর সভাপতিত্বে মার্কাযে দারুল ইসলামের জরুরি মাশওয়ারা সভা বসে
চট্টগ্রাম শহরের ফুরফুরার অস্থায়ী খানকাহতে। সভায় ফুরফুরা দরবারের পীর সাহেবের
জন্য এত অল্প সময়ে খেদমত আন্জাম দেয়ার ব্যাপারে উপস্থিত কেউ সাহস করছিলেন না। ফলে
একপ্রকার সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছিল “এত অল্প সময়ের ব্যবধানে মাহফিল সম্ভব নয়” মর্মে যেন পীর সাহেবকে জানিয়ে দেয়া হোক।
এমন সময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে চট্টগ্রামের এক প্রবীন মুরিদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শর্ষিনার বর্তমান গদ্দীনসীন পীর সাহেবের সহপাঠী, শর্ষিনা মাদরাসার ছাত্র হযরত মাওলানা শাসসুল ইসলাম সাহেব, খতিব সিএসডি গোডাউন জামে মসজিদ এবং প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সিএসডি গোডাউন প্রাইমারি স্কুল- (যিনি ১৯৭৭ সালে যখন নায়েবে মুজাদ্দেদ পীর সাহেব স্বীয় ওয়ালেদ কাইউমুজ্জামান হযরত মাওলানা আবদুল হাই সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহর ইন্তেকালের পর গদ্দীনসীন পীর হয়ে প্রথম বাংলাদেশের পাকশি মাহফিলে তাশরীফ আনেন তখন পীর সাহেবের সর্বপ্রথম বায়েত প্রাপ্ত হন এবং মাহফিলে মাইকযোগে উপস্থিত মাহফিলে অআগত অসংখ্য দরবারে ফুরফুরার জাকেরিন, সাকেরিন, মুরীদ-মুহেব্বীন, মুবাল্লেগে দ্বীনের প্রতি আহবান জানান পীর সাহেবের হাতে বায়াত হওয়ার শর্ষিনার ছাত্র জনাব শামসুল ইসলামের আহবানে সাড়া দিয়ে মহান আল্লাহর মেহেরবাণীতে পাকশির লক্ষ লক্ষ মাহফিল শ্রোতারা প্রথম নায়েবে মুজাদ্দেদের হাতে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন জন্য ) এই সেদিনকার আলোচনা সভা শেষ মুহুর্তে উপস্থিত হন এবং নিজ এলাকার মসজিদে (সিডিএ গোডাউন জামে মসজিদে) পীর সাহেবের মাহফিল অনুষ্ঠানে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ফলে আলোচনা সভার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রেক্ষাপট রাতারাতি বদলে গিয়ে মাহফিল অনুষ্ঠানের পক্ষেই সবাই মত প্রদান করেন (সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজী------ম)। অন্যথায় চট্টগ্রামে পীর সাহেবের আখেরি মাহফিল চির অসমাপ্তই থেকে যেত হয়তো।
চট্টগ্রামে নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহর জীবনের সর্বশেষ দ্বীনী মাহফিলের আখেরি দিনের আখেরি মুহুর্তের আখেরি কথা
চৌদ্দশত সাতাশ
ঈসাব্দের পহেলা রবিউল আউয়াল থেকে সপ্তাহের শেষ দিন। মাহফিলের শেষ দিনটি ছিল নায়েবে
মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহর রিস্তায়ে রসূলুল্লাহ ﷺ বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু ওয়াক্কাস
রদ্বিয়াল্লাহু আনহু, গাজিয়ে বালাকোট সূফী নুর মুহাম্মাদ নিজামপুরী
রহিমাহুমুল্লাহ, সূফী ফতেহ অআলী ওয়েসী রহিমাহুমুল্লাহ, তদীয় খলিফা মুজাদ্দেদে
জামান হযরত মাওলানা আবদুল্লাহ আল মারুফ আবু বকর সিদ্দিকী আল কুরাইশী
রহিমাহুমুল্লাহ, তদীয় সাহেবজাদা কাইউমুজ্জামান হযরত মাওলানা আবু নসর মুহাম্মাদ
আবদুল হাই সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুমুল্লাহসহ বার আউলিয়ার ধন্যভূমি ইসলামাবাদ চট্টগ্রামে ২৯ বছরের নায়েবে মুজাদ্দেদী
জীবনের সর্বশেষ দ্বীনী মাহফিলের সর্বশেষ দিনক্ষণটি ছিল বড়ই বারকাতময় এক অধ্যায়!
প্রায় তিন দশকের
মুজাদ্দেদিয়াতি জিন্দেগীর সারসংক্ষেপ তথা ডি.এন.এ যেন পীর সাহেবের শেষ মুহুর্তের
শেষ মূল প্রতিপাদ্য “তাওহীদ”-এই
একটিমাত্র শব্দে নিহিত যা ছিল নবিয়্যিন, সিদ্দিকীন, শুহাদায়ে স্বলেহীন, আইম্মায়ে
মুফাসসিরিন, মুহাদ্দেসীন, মুফতি, ফুকাহা, আলিমে বিল্লাহ, আরিফে বিল্লাহ, জমিউল
মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত তথা আল কুরআন তথা আল্লাহ
জাল্লা জালালুহু ওয়াশানুহুর মূল
প্রতিপাদ্য কথা।
এদিন সর্বশেষ ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরের
কে-ব্লক জামে মসজিদ চত্বরে। মাহফিল শেষে বাদ এশা সর্বশেষ দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়
নগরীর কাজির দেউরিতে অবস্থিত ভি.আই.পি টাওয়ারে ফুরফুরার দরবারে এক মুহেব্বীন পুলিশ
অফিসারের বাসভবনে। দোয়া খায়ের শেষে হালকা নাস্তা হিসাবে কিছু ফলমূল দেয়া হয়। পীর সাহেবসহ
অআমরা খাওয়ার পর মেজবান পীর সাহেবকে ভেতরে নিয়ে ব্যক্তিগত অআলাপ সারেন। ইত্যবসরে পীর
সাহেবের কিছু উচ্ছিষ্ট অআমি চিবুতে আরম্ভ করলাম। অল্পক্ষণ পরেই পীর সাহেব বেরিয়ে সরাসরি
গাড়ীতে উঠে পড়েন। বাসাটি বহুতল বিশিষ্ট হলে গাড়ী চক্রাকারে উপরে উঠে যাওয়ার সিস্টেম
ছিল।
দোয়ার মাহফিল শেষে ফেরার পথে পীর সাহেবের সাথে গাড়ির ভেতরে
আমাদের সরাসরি একান্ত আখেরি আলোচনা হয়। আলোচনায় ফুরফুরা দরবারের আঞ্চলিক মুখপত্র
নেদায়ে মদিনা প্রকাশের অগ্রগতি জানতে চাইলে
আমরা এ ব্যাপারে বাস্তব অবস্থা তুলে ধরি। পূর্ববতী অর্থাৎ ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক
(১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহকালে এখানে রজব আলী নামক বৃটিশ রেজিমেন্টের এক সিপাহী প্যারেড করেছিলেন) প্যারেড
ময়দানে অনুষ্ঠিত জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান উপলক্ষ্যে
চট্টগ্রাম সফর কালে তিনি আমাদেরকে নেদায়ে মদীনা বাংলা এবং ইংরেজী উভয় ভাষায় প্রকাশের
যে নির্দেশ দিয়েছিলেন; পীর সাহেব সেদিন তারই অগ্রগতি জানতে চেয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক পীর সাহেব উনিশ শত সাতানব্বই
সাল থেকে প্রকাশিত চট্টগ্রাম অঞ্চলের ফুরফুরার মুখপত্র নেদায়ে মদিনার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসাবে পীর সাহেব নিজেই উক্ত সাময়িকীর
নামকরণ করেন “নেদায়ে মদিনা” এবং উদ্বোধনী সংখ্যায় মতামত প্রদান করেন)।
এরপর তাওহীদ সম্পর্কে আলোচনার এক পর্যায়ে আমরা হাজীপাড়ায় পীর
সাহেবের অবস্থান স্থলে এসে পৌছি। রাত মোটামুটি গভীর থেকে গভীর হচ্ছিল। গাড়ী কাজির
দেউড়ি থেকে লালখান বাজার আসলে চট্টগ্রামের পীর সাহেবের প্রধান খাদেম ইলিয়াস ভাই নেমে
পড়েন। অতঃপর তথা হতে গাড়ী টাইগার পাস হয়ে দেওয়ানহাট আসলে ইলিয়াস ভাইয়ের মত আমাদেরও
নেমে যাওয়ার কথা। এটি বাসায় যাওয়ার প্রথম সড়ক। কিন্তু নেমে পড়ার চিন্তাভাবনা মাথায়
আসেনি। অতঃপর পরবর্তী স্টেশন ছিল চৌমুহুনী। তখনও নেমে পড়িনি, পীর সাহেব অন্য সময় নামিয়ে
দিতেন। এমনকি হাজীপাড়া এসে পীর সাহেব নিজ অবস্থান কক্ষে ঢুকে পড়লেও চলে যাওয়া ইচ্ছেটা
জাগেনি। পীর সাহেব নিজ কক্ষে ঢুকলে আমরা পাশের রুম গিয়ে শুয়ে রেস্ট নিই। তখন গরমের
দিন। রাতে রওয়ানা দিলে ঠান্ডায় ঠান্ডায় পৌছবেন-এই আশায় রাতেই পীর সাহেবের ঢাকা ত্যাগের
পরিকল্পনার কথা আগেই জানা গেছে। তবে ধারণা করেছিলাম রাতের খাওয়াটা সেরেই রওয়ানা হবেন।
কিন্তু হঠাৎ শোরগোল শোনা গেল। পীর সাহেব ও মেহমানবৃন্দ না খেয়েই বুঝি চলে যাচ্ছে।
হ্যা, পথেও তা সারা যাবে-তাই পীর সাহেব সাত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলেন। গাড়ী আগ্রাবাদ ছোটপোল
বাই লেইনে এসে ঢাকা অভিমুখী হয়ে দাড়ালো। পীর সাহেব গাড়িতে উঠার আগে আমাদের সাথে
কথা প্রসঙ্গে গাড়িতে আলোচিত সেই তাওহীদের কথাটি আবারও স্মরণ করিয়ে গাড়ীতে উঠে পড়েন। গাড়ী যথারীতি স্টার্ট
দেয়া হলো এবং ঢাকার উদ্দেশ্য রওয়ানা হলেন। তখনও জানতাম না যে, আল বিদা! আল বিদা!!
আল বিদা!!!
Comments
Post a Comment