Shere Furfur Abul Ansar Muhammad Abdul Qahhar Siddiquee Rh

 Shere Furfur Abul  Ansar Muhammad Abdul Qahhar Siddiquee Rh

চট্টগ্রামে সর্বশেষ দ্বীনী সফরকে কেন্দ্র করে যেভাবে প্রকাশমান হচ্ছিল                                        নায়েবে মুজাদ্দিদ রহিমাহুল্লাহর ‘কাশফ’ আর ‘ইলহাম-ইলকা’

চট্টগ্রাম থেকে ফিরে পীর সাহেব উত্তর বঙ্গ সফরকালে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন-রসুলুল্লাহ সাঃ বিদায় হজ্বের ভাষণের পর ফিরে এসে কিছুদিন পর মদীনা মুনওয়ারার জান্নাতুল বাকীতে জিয়ারত শেষে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ পীর সাহেবের এই আখেরি অসুস্থতা বলতে গেলে সুন্নতি কায়দায় ঘটে ।

অসুস্থতার এই সংবাদের পাশাপাশি এও বলা হয়, পীর সাহেবকে দেখা সাক্ষাতে ডাক্তারী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনেক দিন পর জানতে পারি যে, পীর সাহেব দারুস সালামে আছেন এবং দেখা-সাক্ষাৎতে বাধা নেই। এ সংবাদ শোনার পর একটা সুযোগ আল্লাহর রহমতে এসে যায় তা হচ্ছে সরকারী ছুটির পাশাপাশি মাসিক বেতন পাওয়া। দারুত তাওহীদের জন্য একজন দাতা বেশ কিছু টাকা দেয়ার যে কথা ছিল শেখ সাহেবকে নিয়ে তা দিনে উসুল করে রাতেই তূর্ণা নিশিথায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। দারুস সালাম পৌঁছ দেখি ওয়াজ স্টেজের কাছাকাছি জায়গায় দাঁড়ানো চোখে-মুখে নূরের নুরান্বিত এক জ্যোতির্ময় দৃষ্টিতে আমার দিকে  তাকিয়ে যেন হাসছেন। এশরাকের নামায কমলাপুর রেল স্টেশন মসজিদে আদায় করলেও খুতখুতে মনের কারণে দারুস সালাম গিয়ে অআবার অআদায় করার খেয়াল চাপলে পীর সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ না করে সোজা মসজিদে ঢুকে গেলাম। ততক্ষণে পীর সাহেব চলে গেলেন অন্দরমহলে। তখন রোজার মাস ছিল। তাই কতক্ষণ কুতুবখানায় ঘুরে ফিরে আবদু্ল্লাহ ভাই নাকি অআনোয়ার ভাই উনার সাথে কথা বলতে বলতে কুতুবখানার আমি উপরে উঠে রেস্ট নেই। রেস্টের অনেকক্ষণ পর নীচে নেমে দেখি পীর সাহেব নিত্যদিন কুতুবখানার পার্শ্বে বসে দর্শনার্থীদের দর্শন দিয়ে থাকেন সেখানে বসে আছেন। তবে নির্বাক। চট্টগ্রাম থেকে অআসার সময় অআমাকে একটা অসিয়ত করে ছিলাম তার অগ্রগতি পীর সাহেবকে জানানোর একান্ত ইচ্ছা থাকলেও এই নির্বাকতার কারণে সে ইচ্ছাটাও উবে যায়। তবে কলকাতার চকচাদনী এলাকা থেকে এক দর্শনার্থী দর্শন করতে গিয়ে পীর সাহেবের সাথে আলাপে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কলকাতার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং পীর সাহেব তাতে নীরবে সম্মতি প্রকাশ করছেন দেখে বুঝলাম নির্বাক হলেও পীর সাহেব অচেতন নন। এরপর তাই আমি পীর সাহেবকে অআমার কাজের অগ্রগতি শোনাচ্ছিলাম অআর পীর সাহেব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন মনে হচ্ছিল। কিন্ত একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না। জাতীয় কবি কাজী নজরুল যেমন নীরব ছিলেন তাই বলা হতো নীরব কেন কবি? তেমনি নীরব কেন রাহবার? এ প্রশ্ন সংগত বটে। বেঘোরে সংগঠনের কাউকে না বলে একা ঢাকায় হুজুরের সাথে দেখা করাকে সাংগঠিকভাবে অসাংগঠনিক বিবেচনা করায় আমাকে ভর্ৎসনার শিকার হতে হয়েছিল একা একা যাওয়ার জন্য। সবাই সাংগঠনিকভাবে একজোট হয়ে পীর সাহেবকে দেখতে রোজামুখে সবাই গাড়ীভাড়া করেন। উনাদের রোষানলের কাফফরা গুনতে হলো অআবারও উনাদের সাথে সফর সাথী হয়ে। এর বেশ কিছুদিন পর বার্ষিক ইসালে সওয়াব মাহফিল। পীর সাহেব শুয়ে আছেন। শেখ সাহেব পীর সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলে পীর সাহেব নাকি বলে উঠেনঃ এইতো জীবন, এইতো জীবন বলে। রসুলুল্লাহ সাঃ বলতেন, জীবন! এতো কিচ্ছু না।

যেভাবে চট্টগ্রামে পীর সাহেবের আকস্মিক সফর এন্তেজামের হয়েছিল

পীর সাহেবের আকস্মিক চট্টগ্রামের দ্বীনী জলসার আয়োজনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য দারুল মারেফাতের পীর সাহেবের সভাপতিত্বে মার্কাযে দারুল ইসলামে জরুরি মাশওয়ারা সভা বসে চট্টগ্রাম শহরের অস্থায়ী খানকাহতে। ফুরফুরা দরবারের পীর সাহেবের জন্য এত অল্প সময়ে খেদমত আন্জাম দেয়ার ব্যাপারে কেউ সাহস করছিলেন না।

এমন সময় আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত চট্টগ্রামের এক প্রবীন মুরিদ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, মাওলানা  শামসুল ইসলাম সাহেব, খতিব, সিএসডি গোডাউন জামে মসজিদ, শিক্ষক, সিএসডি গোডাউন প্রাইমারি স্কুল সভায় উপস্থিত হয়ে নিজ উদ্যোগে মাহফিল আয়োজনে আগ্রহ প্রকাশ করলে উপস্থিত সবার মধ্যে আগ্রহ পয়দা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে পীর সাহেবের মাহফিল সম্পন্নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। 

চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরের কে ব্লক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে সর্বশেষ মাহফিল প্রসঙ্গেঃ

পহেলা রবিউল আউয়াল, চৌদ্দশত চুয়াল্লিশ হিজরি মোতাবেক ২০০৬ থেকে মাহফিল শুরু হয়েছিল।চট্টগ্রামে সর্বশেষ ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল উত্তর হালিশহরের কে ব্লক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে। পীর সাহেবের সেদিনের মাহফিলদ্বয় অনেকটা সংক্ষিপ্তকারের। প্রথম মাহফিল পোর্ট কলোনী বার নম্বর সড়ক জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে। এসে দেখি মাহফিল শেষ। বাদ এশার মাহফিলও দ্রুত মনে হলো। সর্বশেষ দোয়ার মাহফিলটা আরও দ্রুত। কয়েকদিন ব্যাপী মাহফিলের আখেরি দিবসের আখেরি দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল কাজির দেউরি ভি.আই.পি. টাওয়ারে এক পুলিশ অফিসারের বাসভবনে। উক্ত বাসভবন থেকে দ্রুত দোয়া-খায়েরের পর হাজীপাড়া এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রাতের খাবার না খেয়েই দ্রুত চট্টগ্রাম ত্যাগের প্রস্তুতি নিলেন। রাত প্রায় গভীর। তবুও কেন জানি পীর সাহেবের সঙ্গ ছাড়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।  মনে হচ্ছিল বিশেষ একটা লক্ষ্য নিয়ে এত অল্প সময়ের নোটিশে চট্টগ্রামে এসেছেন। 

চট্টগ্রামে নায়েবে মুজাদ্দেদ রহিমাহুল্লাহকে যেমন দেখেছি

চট্টগ্রামের বিশিষ্ট পীরে কামেল, ‘সিতারা-ই-চাটগাম’ সুফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহর নেক সুবহতে ধন্য হচ্ছেন উনারই সুযোগ্য খলিফা ফুরফুরা দরবারের ‘প্রাণ পুরুষ’ মুজাদ্দেদে জামান হযরত আবদুল্লাহ আল মারুফ আবু বাক্বর সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহ।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা নিবাসী সুফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত উপজেলা মীরশ্বরাইয়ের নিজামপুরে অবস্থিত ‘মলিয়াশ’ নামক গ্রামে শায়িত গাজিয়ে বালাকোট ‘হেলাল-ই-চাটগাম’ সুফী নূর মোহাম্মাদ নিজামপুরী রহিমাহুল্লাহর খলিফা। ইতিহাস গবেষকদের মতে, গাজিয়ে বালাকোট ছিলেন একজন চেচেনিয়ান (সূত্রঃ মাওলানা মুহাম্মাদ আমিনুল ইসলাম, সাবেক প্রিন্সিপ্যাল, বায়তুশ শরফ, চট্টগ্রাম)। গাজিয়ে বালাকোট সুফী নূর মোহাম্মাদ নিজামপুরী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেমে বিল্লাহ, আরিফ বিল্লাহ শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহিমুল্লাহর খলিফা। শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহিমাহুল্লাহ ছিলেন তদীয় পিতা উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক প্রাণ পুরুষ শাহ আবদুর রহীম রহিমাহুল্লাহর সুযোগ্য সাহেবজাদা। 

চট্টগ্রামে সর্বশেষ দ্বীনী সফরকে কেন্দ্র করে যেভাবে প্রকাশমান হচ্ছিল নায়েবে মুজাদ্দিদ রহিমাহুল্লাহর ‘কাশফ’ আর ‘ইলহাম-ইলকা

চট্টগ্রামে সর্বশেষ দ্বীনী সফরকে কেন্দ্র করে যেন প্রকাশমান হচ্ছিল নায়েবে মুজাদ্দিদ রহিমাহুল্লাহর কাশফ ও ইলহাম-ইলকা। মনে হচ্ছিল, হজ্ব কিংবা প্রবাসের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার অনেক আগ থেকে যেমন মুসাফির তাঁর পারিবারিক, সামাজিক, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে জাগতিক লেনদেনের হিসাবের ইজা চুকিয়ে নেন, আত্মীয় স্বজন-বন্ধু বান্ধব যাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ জরুরী; তাঁদের সাথে জরুরী দেখা সাক্ষাৎ করে নেন, থাকেন প্রতিটা মুহুর্ত জরুরী কাজে ব্যস্ত সমস্ত- ঠিক সেভাবে নায়েবে মুজাদ্দেদ উনার মৃত্যু পূর্ববতী একে একে সব কাজ যেন দ্রুত সেরে নিচ্ছিলেন সেই ২০০৫ সাল থেকে দার-আস-সালামে অনুষ্ঠিত জাতীয় মুবাল্লেগ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পরবর্তী গদ্দীনসীন পীর মনোনয়নের মাধ্যমে। তারও অনেক অআগেই সেরে নিয়েছিলেন দল-মত-নির্বিশেষ সর্বস্তরের জাতীয় ইসলামী ঐক্য সম্মেলন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের। যার কারণে জমিয়তুল হিযবুল্লাহর সবুজ ইসলামী পতাকায় খচিত ছিল ঐক্যের আয়াতঃ ওয়াতাসিমু বিহাবলিল্লাহ.. যেমন দেখতে প্যান ইসলামিজমের স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লামা জামাল উদ্দিন আফগানী রহিমাহুল্লাহ। নায়েবে মুজাদ্দিদ ছিলেন বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সত্যিকারের ঐক্য দূত। এ কারণে উনাকে বলা হয়ঃ আমির-উল-ইত্তেহাদ।

এই দ্রুততা টের পাওয়া যাচ্ছিল চট্টগ্রামে আকস্মিক দ্বীনী সফরের ঘোষণায়। মাহফিল এন্তেজামে মাত্র কয়েকদিন বেঁধের দেয়ার তথ্য আমাদের জানা নেই। ফলে এতে কঠিন এক সিদ্ধান্তহীনতা বয়ে আনে ফুরফুরা দরবারের চট্টগ্রাম মার্কাযের দায়িত্বশীলদের জন্য। পীর সাহেবের চট্টগ্রাম আগমনকে কেন্দ্র করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে দারুল মারেফাত কুমিরার পীর সাহেবের সভাপতিত্বে জরুরী আলোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপমহাদেশের শানওয়ালা দরবারের শানদার পীর সাহেবের জন্য শানদার অআয়োজন এত স্বল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান উপস্থিত সবাই প্রায় ঐকমত্যে পৌঁছে। কেবল না হওয়ার অআনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং অবিলম্বে তা পীরসাহেবকে জানিয়ে দেওয়া। সত্যিই এত অল্প সময়ে পীর সাহেবের ওয়াজ মাহফিল এন্তেজাম প্রায়  একপ্রকার অসম্ভব মনে হলেও অনুষ্ঠানের পক্ষে ছিলাম মনে মনে। সভার একেবারে শেষ দিকে সর্ব সম্মতিক্রমে প্রায় সিদ্ধান্ত হতে যাচ্ছিল যে, “অতি অল্প সময়ের কারণে চট্টগ্রামে মাহফিল সম্ভবপর নয়”-এই মর্মে সিদ্ধান্ত পীর সাহেবকে জানিয়ে দেয়া।

আলহামদুলিল্লাহ, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগেই বাদ মাগরিব আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন হযরত মাওলানা শামসুল ইসলাম সাহেব, খতিব দেওয়ান হাট সি.এস.ডি. গোডাউন জামে মসজিদের খতিব সাহেব। তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন উনার মসজিদে পীর সাহেবের মাহফিল করার। ফলে পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন ঘটে এবং মাহফিল অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সর্বসম্মত  সিদ্ধান্ত পীর সাহেবকে জানিয়ে দেয়ার প্রস্তাব গৃহীত হলে শুরু হয় জরুরীভিত্তিতে মাহফিল এন্তেজামের।

 যাহোক, পীর সাহেব সিডিউল মোতাবেক যথারীতি ১লা রবিউল আউয়াল, ১৪২৭ হিজরি সাল দিন কয়েকের জন্য এসে পৌঁছলেন।

পুরো সফরের প্রায় সময় আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ সম্ভবপর হয় না, পরবর্তী দিনের মাহফিল এন্তেজামের কারণে। মধ্যবর্তী একদিন মাহফিল ছিল আমাদের অফিসের মসজিদ চত্বরে। বাদ আসর মাহফিলের সময়। মাহফিল শেষ হলো মাগরিবের অনেক আগে। পীর সাহেব রওয়া করলেন উনার অনেকদিনের স্বপ্নের মার্কাযঃ মার্কাযে দারুল ইসলাম, ফুরফুরা দরবার, ফুরফুরা নগর, সাগরিকা রোড, পাহাড়তলী, চট্টগ্রামের দিকে। পুরো মার্কায তিনি পরিদর্শন করেন নি। দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন দীর্ঘদিনের স্বপ্নের মার্কায। এর কার্যক্রম শুরু করতে তিনি নিজ থেকে যেমন আর্থিক সাহায্য দিয়েছিলেন উত্তর হালিশহর এইচ ব্লক জামে মসজিদে তিনি মুসল্লিদের উদারহস্তে (ফীসাবিলিল্লাহ) দারুত তাওহীদ জামে মসজিদের জন্য দান করার উদাত্ত্ব আহবান জানিয়েছিলেন । এর পর মহান অআল্লাহর অশেষ রহমতে যথারীতি মার্কাযের কাজ শুরু হয় দামপাড়ার মুরব্বী মাওলানা মুহাম্মাদ অআবদুল লতিফ সাহেবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন পীর সাহেব মনোনীত খলিফা দারুল মারেফাতের পীর সাহেব হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ শামসুল ইসলাম সাহেব রহিমাহুল্লাহ। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় দারুত তাওহীদ মসজিদ নির্মিত হয়। পীর সাহেব এ স্থানের নামকরণ করেন ফুরফুরা নগর, মসজিদের নামকরণ করেন দারুত তাওহীদ।২০০৫ সালে দারুত তাওহীদ জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন পীর সাহেব নিজেই। মসজিদের “দারুত তাওহীদ” নামটিও নিজ প্রদত্ত।

২০০৫ সাল থেকেই পীর সাহেব একের পর এক কর্ম ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছিলেন। এ বছর আহবান করেছিলেন দারুস সালামে “জাতীয় মোবাল্লিগ সম্মেলন”। উদ্দেশ্য, এই সম্মেলনে পীর সাহেব গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন, মুবাল্লেগবৃন্দকে সাংগঠনিক দিক নির্দেশনা দেবেন।

বাদ যোহর। খাওয়া দাওয়ার পর সবাই কায়লুলা অবস্থায়। এমন সময় দারুস সালাম মসজিদ থেকে ঘোষণা এলোঃ, মুবাল্লিগ ভাইয়েরা আপনারা সবাই মার্কায মসজিদে চলে অআসুন, পীর সাহেবের জরুরী বয়ান আছে।

জমিয়তুল মুসলিমীন হিযবুল্লাহর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হযরত মাওলানা আবুল বাশার জিহাদী সাহেব পূর্বেও মসজিদে তাশরীফ এনেছেন। অতঃপর পীর সাহেব আসলে। মূল উদ্দেশ্য ছিলঃ গদ্দীনসীন পীর মনোনয়ন। অনেক প্রাসঙ্গিক বয়ান, মুবাল্লিগবৃন্দের প্রতি আখেরি দিক-নির্দেশনার এক পর্যায়ে ঘোষণা এলো গদ্দীনসীন পীর মনোনয়নের। ফুরফুরা দরবারের মুজাদ্দেদে জামান রহিমাহুল্লাহ থেকে অনুস্মৃত ধারাবাহিক বিধানমতে পীর সাহেব উনার অবর্তমানে গদ্দীনসীন স্থলাভিষিক্ত করলেন স্বীয় বড় সাহেবজাদাকে যিনি মদীনা মুনওয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা শেষে সদ্য দেশে ফেরত। পীর সাহেব কেবল যোগ্যতা হিসাবে যে কথাটি বলেছিলেন নিজ থেকে তা ছিলঃ মেশকাত আমার সাথেক কখনও মিথ্যা বলেনি অর্থাৎ সত্যবাদিতা তথা সিদ্দিকীয়াত-কে উপলক্ষ্য করে এই গদ্দীনসীন মনোনয়ন। এরপর যথাসময়ে জরুরী সভা শেষ হয়। এরপর দিন যায়, সপ্তাহ মাস পেরিয়ে নতুন বছরের অর্থাৎ হিজরি ১৪২৭ মোতাবেক ২০০৬ সালের আগমন ঘটে। পহেলা রবিউল আউয়াল, ১৪২৭ হিজরী। মাত্র দিন কয়েক আগে ফুরফুরা দরবার,,চট্টগ্রামের প্রবীন মুরব্বি শেখ মুহাম্মাদ এনামুল হক সাহেব মারফত পীর সাহেবের পক্ষ থেকে জানানো হলো তিনি উক্ত তারিখে আসছেন। পীর সাহেব এতে সংক্ষিপ্ত সময় দিয়ে চট্টগ্রামে দ্বীনী সফর করতে কখনও দেখিনি।

চট্টগ্রাম থেকে ফিরে পীর সাহেব উত্তর বঙ্গ সফরকালে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন-রসুলুল্লাহ সাঃ বিদায় হজ্বের ভাষণের পর ফিরে এসে কিছুদিন পর মদীনা মুনওয়ারার জান্নাতুল বাকীতে জিয়ারত শেষে ফেরার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ পীর সাহেবের এই আখেরি অসুস্থতা বলতে গেলে সুন্নতি কায়দায় ঘটে ।

অসুস্থতার এই সংবাদের পাশাপাশি এও বলা হয়, পীর সাহেবকে দেখা সাক্ষাতে ডাক্তারী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনেক দিন পর জানতে পারি যে, পীর সাহেব দারুস সালামে আছেন এবং দেখা-সাক্ষাৎতে বাধা নেই। এ সংবাদ শোনার পর একটা সুযোগ আল্লাহর রহমতে এসে যায় তা হচ্ছে সরকারী ছুটির পাশাপাশি মাসিক বেতন পাওয়া। দারুত তাওহীদের জন্য একজন দাতা বেশ কিছু টাকা দেয়ার যে কথা ছিল শেখ সাহেবকে নিয়ে তা দিনে উসুল করে রাতেই তূর্ণা নিশিথায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। দারুস সালাম পৌঁছ দেখি ওয়াজ স্টেজের কাছাকাছি জায়গায় দাঁড়ানো চোখে-মুখে নূরের নুরান্বিত এক জ্যোতির্ময় দৃষ্টিতে আমার দিকে  তাকিয়ে যেন হাসছেন। এশরাকের নামায কমলাপুর রেল স্টেশন মসজিদে আদায় করলেও খুতখুতে মনের কারণে দারুস সালাম গিয়ে অআবার অআদায় করার খেয়াল চাপলে পীর সাহেবের সাথে সাক্ষাৎ না করে সোজা মসজিদে ঢুকে গেলাম। ততক্ষণে পীর সাহেব চলে গেলেন অন্দরমহলে। তখন রোজার মাস ছিল। তাই কতক্ষণ কুতুবখানায় ঘুরে ফিরে আবদু্ল্লাহ ভাই নাকি অআনোয়ার ভাই উনার সাথে কথা বলতে বলতে কুতুবখানার আমি উপরে উঠে রেস্ট নেই। রেস্টের অনেকক্ষণ পর নীচে নেমে দেখি পীর সাহেব নিত্যদিন কুতুবখানার পার্শ্বে বসে দর্শনার্থীদের দর্শন দিয়ে থাকেন সেখানে বসে আছেন। তবে নির্বাক। চট্টগ্রাম থেকে অআসার সময় অআমাকে একটা অসিয়ত করে ছিলাম তার অগ্রগতি পীর সাহেবকে জানানোর একান্ত ইচ্ছা থাকলেও এই নির্বাকতার কারণে সে ইচ্ছাটাও উবে যায়। তবে কলকাতার চকচাদনী এলাকা থেকে এক দর্শনার্থী দর্শন করতে গিয়ে পীর সাহেবের সাথে আলাপে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কলকাতার পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং পীর সাহেব তাতে নীরবে সম্মতি প্রকাশ করছেন দেখে বুঝলাম নির্বাক হলেও পীর সাহেব অচেতন নন। এরপর তাই আমি পীর সাহেবকে অআমার কাজের অগ্রগতি শোনাচ্ছিলাম অআর পীর সাহেব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন মনে হচ্ছিল। কিন্ত একটা শব্দও উচ্চারণ করলেন না।

ঐক্যের স্বার্থে ফুরফুরা দরবারের ঐতিহ্যের কুরবাণী! 

সত্যের জন্য ফুরফুরা দরবার সাতশত বছরের অধিক সময়কালের ঐতিহ্যের কুরবানী করতে দ্বিধা বোধ করেনি। টুপিকে কেন্দ্র করে অতীতের ন্যায় ফুরফুরা-অফুরফুরা-এই ভেদাভেদ যাতে উম্মাহর মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপন না করে সে জন্য ফুরফুরার ঐতিহ্যবাহী ড্রেসকোড থেকে শানদার সেই টুপি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে যা ছিল ফুরফুরা দরবারের ঐতিহ্যগত প্রতীক।

কথিত আছে, ফুরফুরার ঐতিহ্যবাহী ঐ টুপিধারী মুরিদ-মুহেব্বীনদেরকে দেখামাত্র সশ্রদ্ধচিত্তে মাজারের খাদেম সাহেবরা বিদায়াতিদের সতর্ক করে দিতেন।

বার আউলিয়ার ধন্যভূমি চট্টগ্রামে ফখরে আউলিয়া আবুল আনসার মুহাম্মাদ আবদুল কাহহার সিদ্দিকী রহিমাহুল্লাহকে অন্তিম দর্শন যেমন দেখেছি

পহেলা রবিউল আউয়াল ১৪২৭ হিজরি মোতাবেক ২০০৬ ঈসাব্দ থেকে বার আউলিয়ার ধন্যভূমি, বাবল ইসলাম (উপমহাদেশে ইসলামের প্রবেশদ্বার) ইসলামাবাদ চট্টগ্রামে ফখরে আউলিয়া আবুল আনসার মুহাম্মাদ আবদুল কাহহার সিদ্দিকী রহিমাহুল্লাহর ২৯ বছরের নায়েবে মুজাদ্দেদিয়াতী মিশনের সর্বশেষ মাহফিল শুরু হয়েছিল। কয়েকদিন ব্যাপী মাহফিলের আখেরি দিবসের আখেরি ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল চট্টগ্রাম মহানগরীর উত্তর হালিশহরস্থিত কে-ব্লক জামে মসজিদ চত্বরে এবং দোয়ার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল নগরীর কাজির দেউরি ভি.আই.পি. টাওয়ারে বসবাসরত এক পুলিশ অফিসারের বাসভবনে। সেখানে ফজলু ভাই, ইলিয়াস ভাইসহ আমরা উপস্থিত ছিলাম। সেখান থেকে ফিরতি পথে পীর সাহেবের সাথে আমাদের এই প্রথম সরাসরি কথাবার্তা হয়। উল্লেখ্য ,পহেলা রবিউল আউয়াল ১৪২৭ হিজরি প্রতিবারের ন্যায় যথা নিয়মে পীর সাহেব হাজীপাড়া শেখ এনামুল হক সাহেবের বাড়ীতে তশরীফ আনেন। অআনার পর অআমাকে ব্যক্তিগতভাবে তলব করলে কে বা কারা অফিসে ফোন করেন । কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে তৃতীয় কেউ তা রিসিভ করে পরে জানালেন, হাজীপাড়া থেকে ফোন করা হয়েছে আপনাকে পীর সাহেব জরুরীভাবে দেখা করতে বলেছেন। সরকারী দপ্তর। জরুরী কাজে শর্ট লীভের সুযোগ অআছে সত্য কিন্ত্ত সেদিন ছিল মাননীয় প্র্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম বন্দরকে ডিজিটাল করণ কর্মসূচীর উদ্বোধন। ফলে কর্মকর্তাদের কর্মব্যস্ততা ছিল নজিরবিহীন। এ অবস্থায় শর্টলীভের সুযোগ থাকে না। তবুও এক কর্মকর্তা প্রশাসনিক কাজেঅআমাদের কক্ষে ঢুকলে সুযোগ খুজছিলাম শর্ট লীভের। কিন্তু কর্মকর্তার নজর ছিল ফাইলের দিকে  । একটিবারও তাকালেন না অআমার মুখের দিকে। তাই শর্টলীভের অআর সুযোগ হয়নি। পীর সাহেবের কয়েকদিন ব্যাপী মাহফিলে সাধারণতঃ শেষ হাজির থাকার সুযোগ থাকতো। কারণ, পূর্ববতী দিন পরবর্তী দিনের মাহফিল এন্তেজামেয়া কমিটিকে অবহিতকরণ, ব্যবস্থাপনার তদারকির কারণে মাহফিলে হাজির থাকা সম্ভবপর ছিল না। কারণ, তখন মোবাইলের ব্যবহার ছিল সীমিত। তাই অনিবার্য কারণে পীর সাহেবের সাথে সেবার অন্তরঙ্গ সহার্য্য ছিল সেদিনের গাড়ীতে বসেই।

অতঃপর শুরুতেই পীর সাহেব আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, নেদায়ে মদীনা ছাপানো হয়েছে কি-না, উল্লেখ্য, পূর্ববতী ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত জাতীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসাবে চট্টগ্রাম তশরীফ আনার পর ফিরতি পথে নেদায়ে মদীনার পরবর্তী সংস্করণ বাংলা এবং ইংরেজী ভার্সনে ছাপানোর জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

যাহোক জবাবে বলা হলোঃ মার্কায কমিটিকে অবহিত করা হলে (সম্ভবতঃ আর্থিক কারণে) কমিটির পক্ষ হতে কোনো উত্তর না পাওয়ার কথা পীর সাহেবকে জানালাম। পীর সাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা নির্দেশ দিলেন। ততক্ষণে পীর সাহেবকে নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ী টাইগার পাস হয়ে দেওয়ানহাট এলে আমাদের নেমে পড়ার কথা, তার আগে পীর সাহেবেরর ঘনিষ্ঠ মুরীদ ইলিয়াস ভাইকে লালখান বাজারে নামিয়ে দেওয়া হয়। কিন্ত রাত অনেকটা গভীর হলেও নেমে বাসায় যাওয়ার খেয়াল চাপেনি আমাদের। পীর সাহেবও নামিয়ে দেন নি। অন্য সময় যা করে থাকেন। অবশ্য দেওয়ানহাট পেরিয়ে চৌমুহনী সড়কেও নামা যায়। কিন্ত সেখানেও নামার চিন্তা আসেনি কারো মাথায়। হয়তো অপেক্ষা করছে অজানা কোনো তাৎপর্যময় ঘটনা- যা পরে অনুভব হয়েছে। যেমন তাৎপর্যময় ছিলঃ হঠাৎ স্বল্পতম নোটিশে চট্টগ্রামেএ তশরিফ আনা। তারও আগে পূর্ববর্তী ২০০৫ সালে সিদ্দিকিয়া বিশ্ব ইসলাম মিশন কোরঅআনী-সূন্নী জমিয়তুল মুসলিমিন হিযবুল্লাহর জাতীয় মুবাল্লেগ সম্মেলন আহবান, সম্মেলনে সর্বস্তরের মুবাল্লেগীন তথা দায়িত্বশীলদের প্রতি জরুরী সাংগঠনিক দিক-নির্দেশনাসহ পরবর্তী রাহবারে ফুরফুরা দরবার ঘোষণা –এসবই যেন ইলহাম, ইলকা তথা কাশফতাড়িত একটা ঘটনার শেষ পরিণতির অনিবার্য ধারাবাহিকতা এবং অভিন্ন সুতায় গাঁথা যা পরবর্তীতে প্রকাশমান হয় পীর সাহেবের ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে।

যাহোক, আগ্রাবাদ হাজীপাড়ায় পৌঁছে পীর সাহেব নিজ খাস কামরায় প্রবেশ করেন। আমরা কতিপয় মুরীদ-মুহেব্বীন পাশের রুমে শুয়ে আছি পীর সাহেবকে বিদায় দেয়ার অপেক্ষায়। কারণ, এর আগেই ঘোষণা হয় যে, পীর সাহেব অদ্য রাতেই চট্টগ্রাম ত্যাগ করবেন।

চট্টগ্রামে জীবনের সর্বশেষ দ্বীনী মাহফিলের শেষে গভীর রাতে পীর সাহেবের গাড়ী ঢাকামুখী অবস্থায় অর্থাৎ যাত্রা শুরুর পূর্ব মুহুর্তে সর্বশেষ মূল যে শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন সে শব্দটি হচ্ছে ছিল “তাওহীদ”। শব্দটিকে বলা যায় দ্বীন আল ইসলামের ডিএনএ। সর্বশেষ দোয়ার মাহফিল শেষে ফিরতি পথে গাড়িতে যে মূল বিষয়ের উপর পীর সাহেব আলোচনা করছিলেন তা ছিল তাওহীদ। সেই তাওহীদ-ই পরম মুহুর্তে আবারও স্মরণ করি দেন। এর পর গাড়ি স্টার্ট দেয়া হলো। কে জানতো: আল বিদা! আল বিদা!! আল বিদা!!!

 


Comments

Popular posts from this blog

Ashraful Ambia Muhammadur Rasulullah Sallallahu A'laihi Wasallam: in the eyes of prominent Non-Muslim scholars

The Alhambra in Granada, Spain

প্রত্যেক বিষয় মূলে পৌছে (ফারাবী আল আরাবী)।