THE MUSLIM: NATION OF THE KINGS যে জাতির রাজা-বাদশাহরা ছিলেন বিজ্ঞানী!
যে জাতির রাজা-বাদশাহরা ছিলেন বিজ্ঞানী!
যে জাতির রাজা-বাদশাহরা
ছিলেন বিজ্ঞানী!
খলিফা আল মানসুর
রাজকীয় কার্য থেকে একটু
অবসর পেলেই আব্বাসীয় খলিফা আল মানসুর জ্যোতিবিজ্ঞান গবেষণায় ডুবে যেতেন। তাঁকে ইসলামী
বিজ্ঞান জগতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনকও বলা যায়। কারণ তিনিই আরবের প্রথম জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইউরোপীয় ঐতিহাসিক মিঃ বোসো বলেন, “আরব জ্যোতির্বিদদের মধ্যে খলীফা
আল-মনসুর সর্ব প্রথম” । রাজধানী এবং জ্ঞান-ইবিজ্ঞানের পীঠস্থান রূপে বাগদাদের ভিত্তি
স্থাপক হিসাবেও খলিফা আল মানসুর অনন্য।
উল্লেখ্য, আল মানসুরই
প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপের দ্বারা আরব বৈজ্ঞানিক ও খলীফাদের উৎসাহ এবং পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রীক,
রোম, আর্য প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকারের দর্শন বিজ্ঞান প্রভৃতির ব্যাপকভাবে অনুবাদ শুরু
হয়। ফলে বিজ্ঞান আজো পৃথিবীতে বেঁচে আছে।
ইসহাক আল-ফাজারী, ইয়াকুব
ইবনে তারিক, আবু ইয়াহিয়া আল বাতরিক, নও-বখত, মাশাল্লাহ প্রমূখ বৈজ্ঞানিক মনসুরের রাজ-দরবারের
সভাসদ ছিলেন।
প্রাচীন বিশ্ব সভ্যতার
স্মারক গ্রন্থের অনুবাদ কর্মে মধ্যযুগীয় মুসলিম জ্ঞানী-বিজ্ঞানীর ভূমিকা
প্রাচীন গ্রীক বিজ্ঞান
সংরক্ষণে মুসলিম বিজ্ঞানীদের ভূমিকা
“গ্রীক বিজ্ঞানের নাম-গন্ধও
যখন বিলুপ্ত প্রায়, তখনই মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের আবির্ভাব ও পূর্বেকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের
অনুসন্ধান বিজ্ঞান জগতে বিধাতার এক আশীর্বাদই বলতে হবে। মুসলমানদের পূর্বে বিজ্ঞান
ছিল অজানা অন্ধকারে নিমজ্জমান প্রায়। গ্রীকদের বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের অনেকগুলিই অধুনা
লুপ্ত। আরবী অনুবাদই শুধু পূর্বেকার বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার ফল জগতকে শিক্ষা দিচ্ছে।
গ্রীক বিজ্ঞানের এত উন্নতির সাক্ষ্য হিসাবে রয়েছে মুসলিম বৈজ্ঞানিকদের অনুবাদ কার্য
এবং তারই উপর নির্ভর করে ইউরোপের বর্তমান বৈজ্ঞানিক অভিযান।
গ্রীক বৈজ্ঞানিক টলেমির
‘টেট্রাবিবলস’ গ্রন্থ অনুবাদ
আবু ইয়াহিয়া আল-বাতরিক
গ্রীক বৈজ্ঞানিক টলেমির ‘টেট্রাবিবলস’ গ্রন্থ অনুবাদ করেন। তিনি তৎকালীন বিজ্ঞ সমাজে
অঙ্কশাস্ত্রবিদ হিসাবে প্রশংসা অর্জন করেন। শুধু অঙ্কশাস্ত্রবিদ নয়, জ্যোতিবিজ্ঞানী
হিসাবে তিনি পূর্বেই বিখ্যাত ছিলেন। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপরও অনেকগুলো বই লিখেন।
কারণ তিনি নিজেও বিখ্যাত চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ‘টেট্রাবিবলস’ অনুবাদ করেন ।
ভারতীয় ‘সিন্দহিন্দের’
আরবী অনুবাদ
খলিফা
আল মানসুর অত্যন্ত
নিষ্ঠাবান ধার্মিক মুসলমান ছিলেন। নিয়মিত ইবাদাত-বন্দেগীর পাশাপাশি বিজ্ঞান
চর্চায় নিজে মনোনিবেশ করতেন সে সাথে জ্ঞানী-বিজ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষকতাও
করতেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতা
থেকে, জ্ঞানের গ্রন্থানুবাদ, গ্রন্থ
সংগ্রহ ইত্যাদির মাধ্যমে খলিফার দরবারে বিজ্ঞান চর্চার অপূর্ব সুযোগ
থাকায় দলে দলে
আর্য-অনার্য ইউরোপীয় নির্বিশেষে বহুমুখী জ্ঞান অন্বেষীদের ভিড় জমতো
বায়তুল হিকমাহ নামক ইসলামী বিজ্ঞান
কেন্দ্রে। বিশেষ করে বিজ্ঞানী ইসহাক আল-ফাজারীর প্রচেষ্টায় ভারতীয়
বৈজ্ঞানিকের বার
বার বাগদাদ শুভাগমন সম্ভব হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় আল-ফাজারীর
মৃত্যুর পর তাঁর সুযোগ্য পুত্র দ্বিতীয় আল-ফাজারী খলীফা মনসুরের আদেশে সর্বপ্রথম ৭৭২-৭৭৩
খৃস্টাব্দে ভারতীয় বিজ্ঞান বান্ধব গ্রন্থ ‘সিন্দহিন্দের’ আরবী অনুবাদ করেন। আল-বেরুনীর
মতে এর পূর্বেই ৭৭০-৭৭১ খৃস্টাব্দে ‘‘সিন্দহিন্দের’ মোটামুটি আরবী অনুবাদ হয়ে গিয়েছিল।
প্রকৌশল বিজ্ঞানে মুসলমান
আল নও-বখত (মৃত্যু ৭৭৫ খৃস্টাব্দে) জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশেষ
পারদশী ছিলেন। তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর একটি গ্রন্থ
প্রণয়ন করেন। এর নাম হলো ‘কিতাবুল আহ্কাম’। ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যায় যে তাঁর বিশেষ দক্ষতা
ছিল, বাগদাদের ভিত্তি স্থাপনই এর প্রমাণ।
আল-ফাজারী: জ্যোতির্বিজ্ঞানের
মূল যন্ত্র: আস্তরলবর আবিস্কারক
জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল
যন্ত্র আস্তরলবসহ অন্যান্য জ্যোতিবিজ্ঞান সম্পর্কিত উন্নতমানের যন্ত্র খলীফা মনসুরের
সময় নির্মাণ করা হয়। প্রথম আস্তরলবপ্রস্তত করেন একজন মুসলমান বৈজ্ঞানিক। নাম আল-ফাজারী।
এ প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ঐতিহাসিক ড্রাপার বলেন, “আরবগণ নভোমন্ডলে যে অম্লান হস্তছাপ রাখিয়াছেন,
তাহা যে কোন ব্যক্তি ভূ-মন্ডলের নক্ষত্র সম্বন্ধীয় জ্ঞান আহরণ কালে উপলব্ধি করিতে পারিবেন”।
Comments
Post a Comment