আলহামদুলিল্লাহ!
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত হুগলি জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা দরবারের সাথে বাংলাদেশের বিভাগীয় জেলা চট্টগ্রামের প্রখ্যাত পীর হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহর সূত্রে উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুজুর্গানে দীন শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী রহঃ পর্যন্ত সিলসিলাগত ঈমানী, রুহানী যে নেসবত তা আজও অটুট, বিদ্যমান।
বার আউলিয়ার ধন্যভুমি চট্টগ্রামে ফখরে আউলিয়া হযরত মাওলানা আবদুল কাহহার সিদ্দিকীর তরিকতী জিন্দেগীর ইতিকথা
নায়েবে মুজাদ্দেদ হযরত মাওলানা আবদুল কাহহার সিদ্দিকী রহিমাহুল্লাহ তরিকতের জিন্দেগীতে ধারাবাহিকভাবে যথাক্রমে স্বীয় পিতা শাইখুল ইসলাম হযরত মাওলানা আবদুল হাই সিদ্দিকী রহিমাহুল্লাহ ,তদীয় দাদাজান মোজাদ্দেদে জামান হযরত মাওলনা আবু বকর সিদ্দিকী রহিমাহুল্লাহ সূত্রে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আউলিয়া কেরামদের সাথে সম্পর্কিত হন। সেমতে হযরত মাওলানা আবদুল কাহহার সিদ্দিকী অআল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহ যথাক্রমে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা নিবাসী সুফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহ, (https://bn.wikipedia.org/wiki/ফতেহ_আলী_ওয়াসি) মীরশ্বরাইয়ের নিজামপুরে অবস্থিত ‘মলিয়াশ’ নামক গ্রামে শায়িত গাজিয়ে বালাকোট সুফী নূর মোহাম্মাদ নিজামপুরী রহিমাহুল্লাহ(https://www.google.com/search?client=firefox-b-e&q=সুফী+নূর+মোহাম্মাদ+নিজামপুরী), সৈয়দ আহামাদ শহীদ বেরেলভী রহিমাহুল্লাহ (https://www.google.com/search?client=firefox-b-e&q=সৈয়দ+আহামাদ+শহীদ+বেরেলভী+)শাহ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী রহিমাহুল্লাহ, https://www.google.com/search?client=firefox-b-e&q=শাহ+আবদুল+আজিজ+মুহাদ্দিস+দেহলভী) এবং শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী রহিমাহুল্লাহ https://bn.wikipedia.org/wiki/শাহ_ওয়ালিউল্লাহ_দেহলভী এর সাথে পর্যায়ক্রমিকভাবে আধ্যাত্মিক সম্পর্কে সম্পর্কিত।
কথিত আছে যে, মুর্শিদে বরহক সুফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহ মুজাদ্দেদে জামান রহিমাহুল্লাহকে "আমার খোলা বক্স", এবং শামসুল উলামা হযরত মাওলানা গোলাম সালমানী রহিমাহুল্লাহকে বলতেন "বন্ধ বক্স"।
মোজাদ্দেদে জামান আবু বকর সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহর সাথে শামসুল উলামা গোলাম সালমানী রহিমাহুল্লাহর আধ্যাত্মিক নেসবতের ইতিকথা
১৯ শতকের শেষের দিকে ফরায়েজি ও তরিকায়ে মুহাম্মদিয়া আন্দোলনের তীব্রতা প্রশমিত হয়ে আসলে মুসলিমরাও কিছুটা দুর্বল ছিলো।[সূত্রঃ ডঃ ওয়াকিল আহমদ (১৯৮৩)। উনিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের চিন্তা-চেতনার ধারা। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা ১–৫০।
মুসলিমদের মধ্যে নানা বিভক্তি ছিলো, বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা ভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করলে আবু বকর চিন্তিত হয়ে পরেন।[ সূত্রঃ ডঃ অমলেন্দু দে (১৯৯১)। বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও বিচ্ছিন্নতাবাদ। 8th Floor, 6-A, Raja Subodh Mullick Square Rd, Bowbazar, Kolkata, West Bengal 700013: পঃ বঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ। পৃষ্ঠা ১১৯]।
তিনি মুসলিম উম্মাহের ঐক্যতা নিয়ে কাজ করতে মনস্থ হন, এবং দুই বাংলার শিরকী, বিদিয়াতি, কুসংস্কার প্রভৃতি দূরীভূত করার চেষ্টা চালান।[ শাহ আবু বকর সিদ্দিকীঃ সৈয়দ মোঃ বাহাউদ্দিন ২০১৭, পৃ. ২৩।]
তার এই কাজে সহযোগিতা করেছিলো যেসব আলেম তাদের মধ্যে শামসুল উলামা গোলাম সালমানী (১৮৫৪ - ১৯১২) আল্লামা লুতফর রহমান বর্ধমানী (মৃঃ ১৯২০), আল্লামা এসহাক বর্ধমানী (মৃঃ ১৯২৮), বেলায়েত হােসেন বীরভূমী (১৮৮৭), আবদুল ওয়াহেদ চাটগামী (মৃঃ ১৯১০), মুহাম্মদ মঙ্গলকোটি বর্ধমানী (মৃঃ ১৯০৭) উল্লেখযোগ্য।[ সূত্রঃ
সৈয়দ মোহঃ বাহাউদ্দিন (২০১৭)। আবু বকর সিদ্দিকী। আরামবাগ, হুগলি: সৈয়দ মোহাম্মদ হামযাহ। পৃষ্ঠা ২৪] এছাড়াও বিভিন্ন
হাদিস ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যপারে সাহায্য করেছেন আবদুল আউয়াল
জৌনপুরী ও কারামত আলী
জৌনপুরী। এরা উভয়ই প্রভাবশালী লেখক ছিলেন।]
শামসুল উলামা হযরত মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসী রহিমাহুল্লাহর রূহানী জিন্দেগীর ইতিকথা
শাহ সুফি ফতেহ আলী ওয়াইসী রহিমাহুল্লাহর অন্যতম খলিফা শামসুল উলামা হযরত মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসী রহিমাহুল্লাহ ১৮৫৪ সালের ১লা জুলাই ভারতের হুগলি জেলার ফুরফুরা গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯১২ সালের ১লা জুলাই ইন্তেকাল করেন।
শিক্ষা জীবনঃ কলিকাতার আলিয়া মাদরাসা হতে সর্বোচ্চ দীনী শিক্ষা হাসিল করেন।
কর্মজীবনঃ প্রথমে হুগলি গবর্ণমেন্ট মোহসেনিয়া মাদরাসায় পরে বদলি হয়ে কলিকাতা আলিয়া মাদরাসা অতঃপর তথা হতে হুগলি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন।
তরিকতের জীবনঃ শামসুল উলামা হযরত মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসী রহিমাহুল্লাহ. সুফী ফতেহ আলী ওয়ায়েসী রহিমাহুল্লাহর সুযোগ্য খলিফা ছিলেন। একই গ্রামের বাসিন্দা ফুরফুরার মুজাদ্দেদে জামান হযরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিকী আল কুরাইশী রহিমাহুল্লাহর পীর ভাই ছিলেন ।
উল্লেখ্য, কলিকাতা মাদরাসায় শিক্ষকতাকালীন সময়ে মাদরাসার পূর্বে অবস্থিত বিবি সালেট মসজিদে তরিকতের তালিম দিতেন।
বিশিষ্ট খলিফাবৃন্দঃ শামসুল উলামা হযরত মাওলানা গোলাম সালমানী আব্বাসী রহিমাহুল্লাহর শীর্ষ স্থানীয় খলিফাবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেনঃ হযরত মাওলানা সৈয়দ আবদুল বারী শাহ রহিমাহুল্লাহ। শাহ সাহেব প্রথমে হযরত মাওলানা মিয়া করিম বক্স রহিমাহুল্লাহর মুরিদ ছিলেন পরে মাওলানা গোলাম সালমানী রহিমাহুল্লাহর নিকট মুজাদ্দেদিয়া তরিকার বায়েত এবং খেলাফাত প্রাপ্ত হন।
উল্লেখ্য, সৈয়দ আবদুল বারী শাহ রহ. এর মুরীদ ছিলেন হযরত মাওলানা হামেদি আজমগড়ি রহিমাহুল্লাহ।
হযরত মাওলানা হামেদ আজমগড়ি রহ.স্বীয় মুর্শেদ হযরত মাওলানা গোলাম সালমানীর
রহ. এর নির্দেশনার সর্বপ্রথম যে জায়গায় তরিকত তথা দ্বীনী সফর করেছিলেন তা ছিল
চট্টগ্রাম (https://sufibad24.com/post/17541/#সূফি_মাওলানা_গোলাম_সালমানী_আব্বাসী_রহর_নির্দেশক্রমে_তরীক্বতের_সফরঃ)।
আয়নায়ে মুনীরী গ্রন্থমতে
হামেদ আজমগড়ি চট্টগ্রাম আসলে প্রথমে হালিশহর, ফেরার পথেও হালিশহর হয়ে
ফিরতেন।হালিশহরের হাফেজ সৈয়দ মুনীর উদ্দীন নূরুল্লাহ রহ.-কে সাত তরিকার খেলাফত
বখশিশ করেন।
উল্লেখ্য, চুনতির হযরত মাওলানা নজির আহমদ শাহ ছাহেব রহিমাহুল্লাহর দাদার প্রথম সন্তান হযরত শাহ মাওলানা ফয়েজ আহমদ (রহ.) পিতার জমিদারি এস্টেট দেখভাল করার জন্য ঘন ঘন আরাকান যাওয়া–আসা করতেন।আজমগড়ী হযরত চট্টগ্রাম শহরে তরিকতের সফরে আসলে হযরত শাহ ছাহেবের জেঠা জমিদারি এস্টেটের প্রধান হযরত মাওলানা ফয়েজ আহমদ উনার পীর আজমগড়ী হযরতকে চাকতাই থেকে বৃহদাকৃতির গদু নৌকা যোগে ঢলু নদীর গাটিয়াডাংগা ঘাটে পৌছান। তথা হতে ছোট নৌকায় আধুনগর নৌঘাটে নিয়ে যান। তথা হতে ঘোড়া/তাঞ্জান করে চুনতীর হযরত শাহ ছাহেব রহ. এর পৈতৃক বাড়িতে পৌছেন।সে সুবাদে এ সময় চুনতির শাহ সাহেব (রহ.) আরাকানে ভারতীয় উত্তর প্রদেশের মহান সূফী দরবেশ পীর হযরত আলহাজ্ব শাহ মাওলানা হামেদ হাসান আলভী (রহ.)’র মোলাকাত পান এবং আজমগড়ী হযরতের সুদৃষ্টি পেতে থাকেন। এক পর্যায়ে শাহ সাহেব উনার নিকট মুরিদ হন।
হযরত শাহ ছাহেব
ছিলেন অসাধারণ স্মৃতিশক্তির
অধিকারী। দেশ বিদেশের প্রখ্যাত
আলেমগণ যখনই তার সান্নিধ্যে
আসতেন ওনার কোরআন হাদীসের
আলোচনা শুনে মুগ্ধ
হয়ে যেতেন। হযরত
শাহ ছাহেব কেবলা আরাকানে
থাকা অবস্থায় শবে কদরের রাতে
ফানাফির রাসূল হিসেবে নিজেকে
নিজে হারিয়ে ফেলেন। দীর্ঘ
প্রায় ৩৭ বছর পাহাড়ে
পর্বতে লোকালয়ে বিচরণ করতে থাকেন
রাত দিন এবং এই বলে নিম্নলিখিত পঙক্তি
আউড়াতে থাকতেনঃ
হাম মাজারে মুহাম্মদ (ﷺ)
পে মর জায়েঙ্গে, জিন্দেগি
মে য়াহি কাম কর
জায়েঙ্গে। (অর্থাৎ) হযরত মুহাম্মদ (স.)’র উদ্দেশ্যে আমার
জীবন উৎসর্গীত, সারা জীবন তার
ধ্যানেই আমি থাকব নিয়োজিত।https://www.chatgarsangbad.net/chunati-hazrat-shah-saheb-and-his-achievements/
মুজাদ্দেদিয়া ত্বরিকতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত মাওলানা হাফেজ হামেদ হাসান আলভী আজমগড়ী (রহঃ) (ইন্ডিয়া) এর পীর অলিকুল শিরোমণি হযরত মাওলানা আবদুল বারী (র.) এর কবর,বান্ডেল রেল স্টেশন,হুগলি, পশ্চিমবঙ্গ,ভারত।
মুজাদ্দেদিয়া ত্বরিকতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত মাওলানা হাফেজ হামেদ হাসান আলভী আজমগড়ী (রহঃ) এর সাথে চট্টগ্রামের কতিপয় সিলসিলার আধ্যাত্মিক নেসবত প্রসঙ্গে
হযরত মাওলানা হাফেজ হামেদ হাসান আলভী আজমগড়ী (রহঃ) হলেন প্রখ্যাত আল্লাহর অলি গারাঙ্গিয়া দরবারের
👉 গারাঙ্গিয়া দরবারের হযরত শাহ মাওলানা
আবদুল মজীদ বড় হুজুর
(রহঃ)
👉হযরত শাহ মাওলানা
আবদুর রশীদ হামেদী সিদ্দীকি
প্রকাশ ছোট হুজুর (রহঃ)
হালিশহর দরবারের
👉হালিশহরের হাফেজ মুনির উদ্দীন
আহমদ (রহঃ)
👉আকিয়াব মিয়ানমারের মাওলানা
আব্দুচ্ছালাম আরকানী (রহঃ)
চুনতি দরবারের
👉চুনতির মাওলানা নজির আহমদ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম) সহ বিখ্যাত আরো অনেক আল্লাহর অলির আধ্যাত্মিক জগতের পথ প্রদর্শক ছিলেন।
❤হযরত আব্দুল বারী(
র.) এর কবর অত্যন্ত
সাদাসিধে, যার উপরে কোন
ছাউনি নেই।
বিদয়াত শিরকের ছোঁয়া এই
আল্লাহর অলির কবরে নেই।💗https://www.facebook.com/718991818304675/posts/1331601173710400/
দক্ষিণ চট্টগ্রামের চুনতীতে পর পর শায়িত রয়েছেন আজমগড়ী হযরতের মহান তিন খলিফা। তাঁরা হলেন হযরত শাহ মাওলানা ফজলুল হক (রহ.), হযরত শাহ মাওলানা নজির আহমদ (রহ.) ও হযরত শাহ মাওলানা হাকিম মুনীর আহমদ (রহ.)।
চুনতীর
প্রাচীন কবর স্থান নিয়ে পাহাড়ের উপর এ মহান তিন অলি পর পরশায়িত। একই কম্পাউন্ডে
আরও শায়িত রয়েছেন হযরত হাকিম শাহ মাওলানা তোফাজ্জলুর রহমান (রহ.)ও হযরত শাহ
মাওলানা হাবিব আহমদ (রহ.)।
হযরত শাহ মাওলানা ফজলুল হক
(রহ.):
হযরত শাহ মাওলানা ফজলুল হক (রহ.) চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন ক্ষণ জন্মা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব। তিনি এককালে চট্টগ্রাম থেকে আকিয়াব পর্যন্ত শরীয়ত ও তরিক্বতে রবিশাল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চুনতী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হযরত সাইয়েদ আহমদ বেরলভী (রহ.) এর অন্যতম খলিফা হযরত আবদুল হাকিম (রহ.) (যার নামে চুনতী মাদ্রাসার নামকরণ) এর নাতি।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষা নিজ
গ্রামে সমাপ্ত করেন। অতঃপর তাঁর মামা হযরত মাওলানা খান বাহাদুর ওয়াজিউল্লাহ
ছিদ্দিকী সাহেবের ভারতের উত্তরে প্রদেশস্থ কর্মস্থলে (সাব-জজ) অবস্থান করে পরবর্তী
ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। মামার মৃত্যুতে চাচা মাওলানা আবদুর রশিদ ছাহেবের
তত্ত্বাবধানে কলকাতা আলীয়া মাদ্রাসা হতে ধর্মীয় উচ্চতর শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৮৮৪
খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে এসে তিনি নিজ গ্রামস্থ চুনতী “সামিয়া মাদ্রাসার”( হাকিমিয়া
মাদ্রা সার সাবেক নাম) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১২
কার্তিক প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে “সামিয়া মাদ্রাসা” দারুণভাবে ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে যায়।
তখন তাঁকে রেঙ্গুন চলে যেতে পরিস্থিতি বাধ্য করে। তথায় একটি উর্দু মিডিয়াম
মাদ্রাসার প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। অতি অল্প কালের মধ্যে তিনি
“গ্রান্ডমুফতি” হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেন।
১৯১০ খ্রিস্টাব্দে আকিয়াবে
হযরত মাওলানা হাফেজ হামেদ হাসান আলভী (রহ.) (আজমগড়ী হযরত-রহ.) এর সান্নিধ্য লাভ
করেন এবং তাঁর হাতে তরিক্বতে দাখিল হন। পরবর্তীতে তিনি খেলাফত লাভ করেন। এর আগে
কলকাতা অবস্থান কালীন হযরত সূফি গোলাম সালমানী (রহ.) ও হযরত সাইয়েদ আবদুলবারী
(রহ.) এর সংস্পর্শ লাভ করেছিলেন। হযরত সূফিফতেহ আলীওয়াইসী (রহ.) এর সাথে তাঁর
সম্পর্ক ছিল এবং ইন্তেকালে কলকাতা মানিকতলায় দাফনে শরীক হয়েছিলেন।
তিনি ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে
চুনতীস্থ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। শরীয়ত ও তরিক্বতের খেদ মতে নিজেকে আত্ননিয়োগ করেন।
আজমগড়ী হযরতের মুরিদগণ ছবক তওয়াজ্জু নিতেন। তিনি ছিলেন গরীব দরদী। তাঁর দানশীলতা ও
মেহমান দারী উল্লেখ করারমত। শরীয়ত বিরোধী কাজকর্ম ও কুসংস্কার তিনি এক দমপ্রশ্রয়
দিতেন না। রিয়াজত, মুজাহেদা, মুরাকাবা ছিল তাঁর নিয়মিত আমল। নিজের জীবনে ১৫ হাজার
বারের অধিক কুরআন খতম করেন। তিনি এক সাথে ৭ তরিক্বার খেলাফতপ্রাপ্ত। তাঁর জীবন
অসংখ্য করা মতে ভরপুর। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়পাঞ্জাব, বেলুচ সহ বিভিন্ন রেজিমেন্টের
সদস্যগণ তাঁর কাছে দোয়ার জন্য আসতেন।
হযরত মাওলানা ফজলুল হক (রহ.)
আজমগড়ী হযরত (রহ.) এর এতদঞ্চলের প্রথম খলিফা। তিনি আজমগড়ী হযরত (রহ.) এর চেয়ে দশ
বছর বড় ছিলেন। তিনি আকিয়ার ও রেঙ্গুন থেকে দেশে ফিরে এসেশরীয়ত ও ত্বরিকত্বের খেদ
মতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। হামেদিয়া সিলসিলার বিখ্যাত খলিফা হালিশহরস্থ হযরত
হাফেজমুনীর উদ্দিন (রহ.) কে আজমগড়ীহযরতনির্দেশে ত্বরিকত্বেরতা’ লিমদিতে একাধিকবার
হালিশহর গমন করেন।
তাঁর মহান পীর আজমগড়ী হযরত
এতদাঞ্চলে তশরীফ আনলে তিনি সহায়তার ভূমিকা পালন করতেন। ছবক তওয়াজ্জুসহ নানা বিষয়ে
আগত লোকজনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সহ নিজের পীরের সহায়তা করতেন। আজমগড়ী হযরত চুনতী
গমন করলে নিকটতম বাড়ি ঘরেও গমন করতেন। এখানেও তিনি সহায়ক হিসেবে ভূমিকা পালন করে
গেছেন।
এ মহান অলি ১৯৪৪
খ্রিস্টাব্দের ৩১ মে বৃহস্পতিবার নিজ গ্রামে ইন্তেকাল করেন। পর দিন শুক্রবার তাঁর
জানা যায় তখন কার আমলে প্রায় ১০ হাজার লেকের সমাগম হয়েছিল। চুনতীর কেন্দ্রীয় মসজিদ
সংলগ্ন বিশাল কবরস্থানে তিনি চির নিদ্রায় শায়িত আছেন।
হযরত মাওলানা ফজলুল হক (রহ.)
এর ইন্তেকালের পর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারী, বাংলা মাঘ মাস ইছালেছওয়াব উপলক্ষে
এক জেয়াফত তথা মেলা আয়োজন চলছিল। এ সংবাদ আজমগড়ী হযরত এর কানে যাওয়া মাত্র তিনি
অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং ‘ ইয়ে সব্বন্ধকর’ বলে চুনতীতে সংবাদ পাঠিয়ে ছিলেন। সে
থেকে এ অঞ্চলে আজমগড়ী হযরতের খলিফাগণের ইন্তেকালের পর জেয়াফত, ওরশ, মেলা ইত্যাদি
করা বন্ধ হয়ে যায়। এখানে উল্লেখ্য, তাঁর ভাতিজা মাস্টার জাফর সাহেব বলেন তাঁরমূল
নাম ফজলুল হক হলেও আজম গড়ী হযরত তাঁকে ফজলেহ কবলে ডাকতেন।
হযরত শাহ মাওলানা নজির আহমদ
(রহ.):
হযরত শাহ মাওলানা নজির আহমদ
(রহ.) আজমগড়ী হযরত (রহ.) এর অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন খলিফা ছিলেন।
তাঁর জন্ম তারিখ বাসন তথ্য
তালাশ করেও পাওয়া যায়নি। তিনি ইন্তেকাল করেছেন ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে জুলাই অথবা আগস্ট
মাসে তথা বাংলা শ্রাবণ মাসে। একথা জানিয়েছেন তাঁর সুযোগ্য একমাত্র সন্তা
নহযরতআলহাজ্ব মাওলানা হাবিব আহমদ। তিনি আরও জানান, তাঁর মরহুম পিতা ৫৪ বছর বয়সে
ইন্তেকাল করেন। এতে প্রতীয় মান হয় যে, হযরত মাওলানা নজীর আহমদ (রহ.) ১৮৯০
খ্রিস্টাব্দের দিকে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর মায়ের কাছে এবং তাঁর নানা হযরত
মাওলানা কাজী ইউসুফ ছাহেবের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। অতঃপর
চট্টগ্রাম শহরস্থ মোহসেনিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। মোহসেনিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিলপাস
করার পর মায়ের একমাত্র ছেলেহওয়ায় পারিবারিক প্রতিবন্ধক তার কারণে কলকাতা বা
দেওবন্দ গমন না করে চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। তার আগে
তিনি কিছুদিন মোহসেনিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি সারাজীবন
তরিক্বতের খেদমতের পাশাপাশি দারুল উলুম মাদ্রাসার অন্যতম আর্কষণীয় হেড মাওলানা
হিসেবে জীবন কাটিয়ে দেন।
তিনি একজন উচ্চমানের পীর
কামেল হয়েও চট্টগ্রাম দারুল উলুম মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে ওস্তাজুল আসাতুজা হিসেবে
প্রসিদ্ধ লাভ করেন। শুধু তাই নয়, বৃহত্তর চট্টগ্রামে আলেম সমাজসহ সব মহলে তিনি অতি
উচ্চ মানের শ্রদ্ধাভাজন আলেমে দ্বীন হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। প্রাথমিক জীবনে দারুল
উলুম মাদ্রাসায় সামান্য বেতনে অতি সাধারণভাবে কোন মতে জীবনযাপন করতেন। কিন্তু মহান
আল্লাহপাকের বিশেষ মেহের বাণীতে কবিরাজী হেকিমীফর্মুলার সংমিশ্রণে‘বরশ’ নামে এত
মোদক (হালুয়া) জাতীয় ঔষধ তৈরি ও বিক্রির মাধ্যমে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এ ঔষধ
বিক্রির ওসিলায় তিনি শহরে ও গ্রামে যে সেবা প্রদান করেছেন। তাঁরএ সেবার পাশাপাশি
উপার্জন হতে নিদর্শন স্বরূপ চন্দনপুরাস্থ ঐতিহ্যবাহী বরশবিল্ডিং এবং চুনতীতে
১৯৩৬/৩৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতল পাকা ভবন নির্মাণ করেন। তিনি সহায়-সম্পদসহ ধর্মীয় ও
সামাজিক কাজে বিশেষ অবদান রেখে যান। বিশেষ করে চুনতী হাকিমিয়া আলীয়ামাদ্রাসা তাঁর
অমরকীর্তির স্মৃতি বহন করে চলছে।(সূত্রঃ ১. http://chunati.com/illustriousperson/illustriouspersonitem.aspx?messageid=136
২. www.ahmadulislamchowdhury.info)।
Comments
Post a Comment